Advertisement
০১ মে ২০২৪

সপ্তাহ পার, টাকার জন্য হাহাকার বহাল

আট দিন পরেও ছবিটা বদলাল না। বুধবারও সকাল থেকে ব্যাঙ্কে নোট বদলের লম্বা লাইন। টাকা আসবে, ঝাঁপ ফেলা এটিএমের সামনে সেই আশায় দীর্ঘ অপেক্ষা।

ব্যাঙ্কে টাকা না পেয়ে সালকিয়ায় জি টি রোড অবরোধ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ব্যাঙ্কে টাকা না পেয়ে সালকিয়ায় জি টি রোড অবরোধ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

আট দিন পরেও ছবিটা বদলাল না।

বুধবারও সকাল থেকে ব্যাঙ্কে নোট বদলের লম্বা লাইন। টাকা আসবে, ঝাঁপ ফেলা এটিএমের সামনে সেই আশায় দীর্ঘ অপেক্ষা।

৫০০ ও ২০০০ টাকার নতুন নোট তো দূরের কথা, একশোর জোগানেও টান। ফলে এ দিনও স্বাভাবিক হল না এটিএম পরিষেবা। যে সব এটিএমে দিনের কিছুটা সময়ও পরিষেবা চালু ছিল, সেখানে টাকা আসতে না আসতেই কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে। এমনকী যে সব এটিএমে ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড ঝোলানো, সেখানেও চোখে পড়েছে গ্রাহকদের লাইন।

ব্যাঙ্কের কর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, বুধবার থেকে ৫০০ টাকার নতুন নোট দেওয়া হতে পারে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা ছিল ঠিক তার উল্টো। শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত চষে ফেলেও ৫০০ টাকার নতুন নোট পাননি অনেকে। অন্য দিকে, ব্যাঙ্কের দেওয়া টোকেন নিয়ে গোলমালের জেরে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা সালকিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে জি টি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখান।

গ্রাহকদের অভিযোগ, মঙ্গলবার লাইনে বহুক্ষণ দাঁড়িয়েও যাঁরা টাকা পাননি, ব্যাঙ্ক সেই সব গ্রাহকদের ‘টেকেন’ দিয়েছিল। এ দিন ওই গ্রাহকরা টাকা তুলতে এলে ব্যাঙ্ক তাঁদের বলে, নতুন করে লাইন দিতে হবে। তা থেকেই শুরু হয় গোলমাল। ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা জি টি রোড অবরোধ শুরু করেন। পরে পুলিশ গিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামলায়। নোট বাতিলের প্রভাব এ দিনও দেখা গিয়েছে শহরের দোকান-বাজারে। বিক্রেতারা প্রায় ফাঁকা দোকানেই ব্যবসা চালিয়েছেন। এ দিকে, ব্যাঙ্কের লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য হাওড়া ময়দানে মেট্রো প্রকল্পের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের বিনামূল্যে চা ও পানীয় জল বিতরণ করে প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থা।

বারাণসীতে বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে টাকা বদলের জন্য এ দিন ব্যাঙ্কে ছুটে গিয়েছিলেন বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের বাসিন্দা কৃষ্ণকুমার সিংহ। বিমানের টিকিট কাটতে টাকা লাগবে। তাই সাতসকালেই একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ডালহৌসি শাখায় লাইন দিয়েছিলেন কৃষ্ণকুমারবাবু। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে ব্যাঙ্কের তরফে তাঁকে জানানো হয়, শুধু ২০০০ টাকার নোট পাওয়া যাবে। ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে দু’হাজারের নোট খুচরো করার আরও সমস্যা, এই আশঙ্কায় কৃষ্ণকুমারবাবু ফের ছুটে যান ওয়াটারলু স্ট্রিটের রাজ্য কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে। কিন্তু সেখানেও তিনি শোনেন, ৫০০ টাকার নতুন নোট নেই। অগত্যা নিরুপায় হয়ে দু’হাজার টাকার নোটই নিতে হয় তাঁকে। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘মা অসুস্থ শুনে একেই খুব চিন্তা হচ্ছে। তার মধ্যে টাকা বদলের এই সমস্যা। দু’হাজারের নোট নিয়ে ভিন্‌ রাজ্যে কী ভাবে চালাব, দরকারি জিনিস কী ভাবে কিনব— কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাইরে অপেক্ষা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

কৃষ্ণকুমারবাবু একা নন। পুরনো ৫০০, ১০০০-এর নোট বদল করে নতুন দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে অনেকেই পড়েছেন ঘোর ফ্যাসাদে। এক দিকে অপর্যাপ্ত ১০০ টাকার নোট, অন্য দিকে বারবার ব্যাঙ্কের ঘোষণা সত্ত্বেও ৫০০ টাকার নতুন নোট মিলছে না। সব মিলিয়ে জেরবার শহরবাসী। বড়বাজারের বাসিন্দা রামপ্রসাদ সাউ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পুরনো নোট বদল করতে এসেছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘সাড়ে চার হাজার টাকা দেওয়ার সময়ে ব্যাঙ্ক দু’হাজার টাকার দু’টো নোট ধরিয়ে দিল। কে ভাঙিয়ে দেবে ২০০০ টাকা?’’

ডালহৌসি চত্বরে একাধিক ব্যাঙ্ক ঘুরে এ দিন চোখে পড়েছে একই ছবি। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্টিফেন হাউস শাখার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘খুচরোর সমস্যা বড় আকার ধারণ করেছে। ৫০০ টাকার নতুন নোট না আসা পর্যন্ত এই সমস্যা চলবে। কবে নতুন নোট আসবে জানি না।’’

নিউ মার্কেট এলাকায় পাঁচটি ব্যাঙ্কের এটিএম। তার মধ্যে চারটিরই ঝাঁপ বন্ধ। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ধর্মতলা শাখায় গত কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পরে টাকা আসছে। এ দিনও আসবে, সেই আশায় দুপুর থেকেই সেখানে লাইন। লাইনে দাঁড়ানো এক গৃহবধূ মধুরিমা কর্মকারের কথায়, ‘‘একদম খুচরো নেই। বেশি টাকাও তোলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমার বাবা অসুস্থ। তাঁর ওষুধ কেনার একটা বড় খরচ রয়েছে। কী আর করব? রোজ এ ভাবেই লাইন দিচ্ছি।’’

কলকাতা পুরসভার পাশে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে এ দিন বিকেলে দেখা গেল, কম করেও শ’দুয়েক লোক দাঁড়িয়ে। তার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় দোকানদার থেকে কলেজ পড়ুয়া। নিউ মার্কেটে একটি ব্যাগের দোকানের মালিক প্রণব সেন বলেন, ‘‘কর্মচারীদের ভরসায় দোকান রেখে এটিএমে লাইন দিয়েছি। খুচরো টাকা না থাকায় খুব সমস্যা। নিত্য দিনের বাজারের টাকাও নেই।’’

মঙ্গলবারই কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, নোট বদলাতে এলে গ্রাহকের ডান হাতের আঙুলে কালি লাগানো হবে। কিন্তু বুধবার দুপুর পর্যন্ত বি বা দী বাগ, লালবাজার ও ধর্মতলার অধিকাংশ ব্যাঙ্কে চালু হয়নি। ব্যতিক্রম স্ট্র্যান্ড রোডে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সদর দফতর। অফিসপাড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার এ কে তিওয়ারি বলেন, ‘‘আঙুলে কালি দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি আমরা সরকারি ভাবে এখনও পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

currency banned Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE