গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে লাগাতার আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনার পরেও সেই ডাক্তারদের ধর্না এখনও চলছে। কবে তা উঠবে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপির বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের রাজ্য দফতরে যাওয়া। দলের বিধায়ক তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল আন্দোলনকারীদের মুখে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি শোনার পরে রাজ্যের প্রথম সারির নেতারা আর কেউ ওমুখো হচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার বিকেলে শুরু হতে চলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরে প্রদর্শনী আয়োজনের ঠিকানাও নতুন দফতর থেকে ‘আদি’ ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে চলে আসছে।
বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারে বাড়ির নম্বর ধরে পরিচয় দেওয়ার চল রয়েছে। যেমন কলকাতায় আরএসএসের সদর দফতরের নাম ন’নম্বর। কারণ, কেশব ভবনের ঠিকানা ৯, অভেদানন্দ রোড। আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ৩৩ ভূপেন বসু অ্যভিনিউয়ের দফতর ‘তেত্রিশ’ নামেই পরিচিত। সেই হিসাবে মধ্য কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরের নাম ‘ছ’নম্বর’। আর নতুন দফতর যে হেতু সেক্টর ফাইভে, তাই দলের নেতারা সাঙ্কেতিক ‘পাঁচ নম্বর’ বলেই ডাকেন।
সেই পাঁচ নম্বরেই রাজ্য বিজেপি খানিক ‘নিজগৃহে পরবাসী’ হয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের কাছেই সেই দফতর। সেই দফতরে যাওয়ার দু’টি রাস্তা। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না চলছে। ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচলও পুলিশ বন্ধ করে রেখেছে। বিজেপি দফতর থেকে অনেক দূরেই পুলিশের ব্যারিকেড। গত ১১ সেপ্টেম্বর গাড়ি থেকে নেমে ডাক্তারদের ধর্নার মধ্যে দিয়েই দলীয় দফতরের দিকে যাচ্ছিলেন অগ্নিমিত্রা। সেই সময়েই ‘গো ব্যাক’ শুনতে হয় আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ককে। চিকিৎসকদের বক্তব্য ছিল অগ্নিমিত্রা রাজনীতি করতে সেখানে গিয়েছেন। অগ্নিমিত্রা অবশ্য বলেন, তিনি দলীয় দফতরে যাচ্ছেন। দু’পক্ষ দুই দাবি করলেও বিজেপির পক্ষে বিষয়টায় অস্বস্তি তৈরি হয়। যেটা তার আগে হয়েছিল তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে। জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযানের সময়ে অভিজিৎ সেখানে গেলে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। তবে তার চেয়েও বেশি অস্বস্তি তৈরি হয় অগ্নিমিত্রাকে নিয়ে। কারণ, বিষয়টি ঘটে একেবারে দলীয় দফতরের সামনে।
এর পর থেকেই বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতারা ওই দফতরে যাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন। একমাত্র শমীক ভট্টাচার্য ছাড়া কেউই যাননি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার গত সপ্তাহেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে মুরলীধরের দফতরে বসেন। ধর্মতলায় ধর্নার সময়ে রাজ্য নেতারা সেখানেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা চালিয়েছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সময়ে যা যা বৈঠক হয়েছে তার সবই ভার্চুয়াল মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় নেতারাও একই ভাবে বৈঠক করেছেন। সে ভাবেই ঠিক হয়েছে এবং হচ্ছে বিজেপির কর্মসূচি থেকে পরিকল্পনা। এ নিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা তাঁদের আন্দোলন অরাজনৈতিক রাখতে চাইছেন। তাই আমরাও কোনও বিতর্ক তৈরি করতে চাই না। অকারণ বিতর্ক বাড়ানোর চেয়ে আপাতত অন্য ভাবে প্রয়োজন মিটিয়ে নেওয়াই ঠিক বলে মনে হয়েছে আমাদের।’’
আন্দোলনকারীরা রাজ্য বিজেপি দফতর ব্যবহার করছেন বলে তৃণমূলের পক্ষেই অভিযোগ তোলা হয়। এটা ঠিক যে, একেবারে পাশেই বিজেপি দফতর থাকায় সেখানকার শৌচালয় থেকে রিসেপশনে পেতে রাখা চেয়ার— সবই ব্যবহার করেছেন অনেক আন্দোলনকারী। এমনকি, কেউ কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বিশ্রামও নিচ্ছেন। দফতরের দেওয়ালে ‘বিপ্লব’-এর স্লোগান, গ্রাফিতিও রয়েছে। বিজেপি অবশ্য এ সব নিয়ে আপত্তি দেখায়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এ নিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আপত্তি জানাব কেন? আমরা অতিথি হিসাবেই ওঁদের জন্য যাবতীয় সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছি। আর এই আন্দোলনের প্রতি আমাদের সমর্থন এবং জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে।’’
মঙ্গলবার ছিল মোদীর জন্মদিন। সেই উপলক্ষে সল্টলেকের দফতরে একটি প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ধর্না এখনও চলায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই প্রদর্শনী চালু হচ্ছে মুরলীধরের দফতরে। গত সোমবার ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ থেকেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছিলেন, তিনি আরজি কর-কাণ্ড সম্পর্কে কিছু নতুন অভিযোগের প্রমাণ বৃহস্পতিবার তুলে ধরবেন সল্টলেকের দফতর থেকে। তখনও পর্যন্ত মনে করা হয়েছিল ধর্না শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শুভেন্দুও পাঁচ নম্বর মুখো হচ্ছেন না। তিনি মুরলীধরেই সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy