Advertisement
E-Paper

উদ্‌ভ্রান্তের মতো আচরণ কেন? স্বপ্নদীপ পড়ে যান কী ভাবে? যাদবপুরকাণ্ডে যে সব রহস্যের উত্তর নেই

মৃত্যুর রাতে স্বপ্নদীপ মাকে ফোন করে আতঙ্কের কথা জানিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি কেবল গামছা পরেছিলেন। কেন তাঁর শরীরে অন্য পোশাক ছিল না? প্রশ্ন উঠেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ১৬:২৪
What are the questions still unanswered in Jadavpur University student’s death.

(বাঁ দিকে) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডু। যেখান থেকে স্বপ্নদীপের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুরহস্যের তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য উঠে আসছে পুলিশের হাতে। সেই সঙ্গে রহস্য আরও বেশি করে ঘনীভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডু। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে সৌরভ চৌধুরী নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। কিন্তু স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর দু’দিন কেটে গেলেও এখনও সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। বরং সময় যত এগোচ্ছে, তত নতুন নতুন প্রশ্ন উঠে আসছে।

বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ-২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় নদিয়া থেকে যাদবপুরে বাংলা পড়তে আসা স্বপ্নদীপের। অভিযোগ, হস্টেলে সিনিয়র ছাত্রেরা তাঁর উপর অত্যাচার করছিলেন। র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন স্বপ্নদীপ। সেই রাতে মাকে ফোন করে নিজের আতঙ্কের কথা জানিয়েওছিলেন। দ্রুত এসে তাঁকে হস্টেল থেকে উদ্ধার করার আর্জি জানিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ। তার পরেই বারান্দা থেকে তাঁর পড়ে যাওয়ার খবর আসে। স্বপ্নদীপকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক এবং হস্টেলের আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরাও তদন্তে নেমেছেন। শনিবারও সৌরভ-সহ একাধিক পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখনও পর্যন্ত মোট চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে, যার উত্তর অধরা।

স্বপ্নদীপের দেহে পোশাক নেই কেন?

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাতে স্বপ্নদীপ কোনও পোশাক পরে ছিলেন না। তাঁর পরনে ছিল কেবল গামছা। পড়ে যাওয়ার পর তাঁর শরীরে সেই গামছাও ছিল না বলে অনেকে দাবি করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কেন সেই রাতে স্বপ্নদীপের দেহে কোনও পোশাক ছিল না? কেনই বা তিনি গামছা পরেছিলেন? এর আগে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য উঠে এসেছিল, তাতে বলা হয়, স্বপ্নদীপ নাকি সে দিন রাতে বার বার শৌচালয়ে যাচ্ছিলেন। সেই কারণে গামছা পরেছিলেন। হস্টেলের কয়েক জন পড়ুয়া পুলিশকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে, র‌্যাগিংয়ের কারণেই কি স্বপ্নদীপের পরনে পোশাক ছিল না? তাঁকে কি পোশাক খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল? উত্তর মেলেনি।

কেন উদ্‌ভ্রান্তের মতো আচরণ?

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত্যুর রাতে উদ্‌ভ্রান্তের মতো আচরণ করছিলেন স্বপ্নদীপ। তাঁর আচরণ যে ‘অস্বাভাবিক’ ছিল, পুলিশকে জেরার মুখে জানিয়েছেন একাধিক পড়ুয়া। স্বপ্নদীপ নাকি সে রাতে বার বার বলছিলেন, ‘‘আই অ্যাম নট গে (আমি সমকামী নই)’’। উদ্‌ভ্রান্তের মতো বারান্দা ধরে এ দিক সে দিক হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। প্রশ্ন উঠছে, কেন হস্টেলে এই আচরণ করছিলেন স্বপ্নদীপ? রবিবার থেকে হস্টেলে থাকছিলেন তিনি। এই তিন দিনে এমন কী হল যে, তাঁর আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে উঠল? কেনই বা মাকে ফোন করে তাঁকে আতঙ্কের কথা জানাতে হল? তাঁর উপর কি শারীরিক বা মানসিক ভাবে কোনও চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল? উত্তর মেলেনি।

পড়ে যাওয়ার আগে কী হয়েছিল?

পুলিশ জানিয়েছে, স্বপ্নদীপকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন হস্টেলের এক কাশ্মীরি পড়ুয়া। স্বপ্নদীপ যে ঘরে থাকছিলেন, তার উপরের তলায় থাকেন ওই পড়ুয়া। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, নীচে কথাবার্তা, গোলমাল শুনে তিনি নেমে আসেন। স্বপ্নদীপকে পড়ে যেতে দেখে তিনি হাত বাড়িয়ে তাঁকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই হাত ফস্কে পড়ে যান স্বপ্নদীপ। প্রশ্ন উঠছে, পড়ে যাওয়ার আগে ঠিক কী ঘটেছিল? কেন বারান্দার পাঁচিল টপকে নীচে পড়ে গেলেন স্বপ্নদীপ? পাঁচিলে উঠতে কেউ কি তাঁকে বাধ্য করেছিলেন? পড়ার আগে কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন স্বপ্নদীপ? কী নিয়েই বা কথা হয়েছিল? এখনও এই প্রশ্নের উত্তর অধরা।

স্বপ্নদীপ পড়ে গেলেও কেন থামেনি বৈঠক?

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বপ্নদীপ যে রাতে পড়ে গিয়েছিলেন, সে দিন এ-২ ব্লকের ওই ভবনেরই নীচে হস্টেলের একটি বৈঠক চলছিল। দাবি, ছাত্রটি পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈঠক থামেনি। তার পরেও বেশ কিছু ক্ষণ বৈঠকে আলোচনা চলেছে। হস্টেলের ক্যাম্পাসে এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও কেন থামল না বৈঠক? যাঁরা বৈঠক করছিলেন, কেন তাঁরাও উদ্ধারস্থলে উপস্থিত হলেন না? সূত্রের খবর, স্বপ্নদীপ পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে এক দল পড়ুয়া তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আর এক দল পড়ুয়া নাকি সেই সময়েই বৈঠক শুরু করেন। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল সেই বৈঠকে? স্বপ্নদীপের ঘটনা নিয়েই কি? প্রশ্ন উঠেছে।

সৌরভ মেস কমিটিতে কী ভাবে?

স্বপ্নদীপ পড়ে যাওয়ার পর মেস কমিটির যে বৈঠক হচ্ছিল, তাতে ছিলেন ধৃত সৌরভ। তিনি ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছেন। তাঁর হস্টেলে থাকারও কথা নয়। প্রাক্তনী হয়েও কী ভাবে সৌরভ মেস কমিটির বৈঠকে অংশ নিলেন? হস্টেলে তাঁর এত দাপটই বা কী ভাবে? স্বপ্নদীপের বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, সৌরভের সঙ্গে চায়ের দোকানে তাঁর আলাপ হয়েছিল। তিনিই জানিয়েছিলেন, অন্য পড়ুয়ার অতিথি হিসাবে হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হতে পারে স্বপ্নদীপের। প্রাক্তনী কী ভাবে ঠিক করে দিচ্ছেন কে হস্টেলে থাকবে, কী ভাবে থাকবে? সৌরভকে নিয়েও এমন অনেক প্রশ্ন উঠেছে, যার উত্তর অধরা।

Jadavpur University Student Death Jadavpur University Student JU
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy