Advertisement
E-Paper

স্তন্যপানের জন্য ঘর, ভাববে কি শহর

কখনও পার্লামেন্টের অধিবেশনে, কখনও র‌্যাম্পে। কখনও পত্রিকার প্রচ্ছদে, কখনও আবার প্রচার কর্মসূচিতে। মা শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছেন— দেশ-বিদেশে এ ছবি এখন খুব পরিচিত।

অন্বেষা দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
বিতর্ক: একটি মালায়লম পত্রিকার প্রচ্ছদে মডেল গিলু জোসেফের এই ছবিই মাস কয়েক আগে ঝড় তুলেছিল দেশ জুড়ে। (ডান ডিকে) গত মাসে পাঁচ মাসের সন্তানকে এ ভাবেই স্তন্যপান করাতে করাতে র‌্যাম্পে হেঁটেছিলেন মার্কিন মডেল মারা মার্টিন। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ায় সমালোচনা।

বিতর্ক: একটি মালায়লম পত্রিকার প্রচ্ছদে মডেল গিলু জোসেফের এই ছবিই মাস কয়েক আগে ঝড় তুলেছিল দেশ জুড়ে। (ডান ডিকে) গত মাসে পাঁচ মাসের সন্তানকে এ ভাবেই স্তন্যপান করাতে করাতে র‌্যাম্পে হেঁটেছিলেন মার্কিন মডেল মারা মার্টিন। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ায় সমালোচনা।

কখনও পার্লামেন্টের অধিবেশনে, কখনও র‌্যাম্পে। কখনও পত্রিকার প্রচ্ছদে, কখনও আবার প্রচার কর্মসূচিতে। মা শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছেন— দেশ-বিদেশে এ ছবি এখন খুব পরিচিত। তবে অতীতের রাখঢাক হাল্কা হলেও আদত সমস্যাটা সে তিমিরেই রয়েছে। বিদেশের বহু জায়গাতেও এ ব্যাপারে এখনও আপত্তি ওঠে।

মা হওয়ার পরে অসমের বিধায়ক আঙুরলতা ডেকা বিধানসভার কাছে আলাদা ‘ফিডিং রুম’ (স্তন্যপান করানোর ঘর) চেয়ে শিরোনামে এসেছিলেন। আঙুরলতার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হলেও সব মা এখনও এমন সুবিধে পান না। কলকাতা শহরে অন্তত সে ছবি বিরল নয়। শুধু কলকাতা কেন, দেশের রাজধানীতেও সব জায়গায় এ সুবিধা পান না মহিলারা। যে কারণে সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছে। ২৮ অগস্ট এ নিয়ে শুনানি।

কথা হচ্ছিল দেবলীনা দাসের সঙ্গে। মা হওয়ার পরে ঘনঘন বাচ্চাকে নিয়ে যেতে হত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে। প্রয়োজনীয় টিকা দিতে। দক্ষিণ কলকাতার গরফা এলাকার সেই চেম্বারে কোনও ফিডিং রুম ছিল না। তাই রীতিমতো অসুবিধেয় পড়তে হয়েছে দেবলীনাকে। দেশপ্রিয় পার্কের কাছে এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে গিয়ে অবশ্য অন্য অভিজ্ঞতা অর্পিতা সেনের। সেই চেম্বারে ফিডিং রুম থাকায় তাঁর শিশুকে খাওয়াতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু অর্পিতার মতো সুযোগ খুব কম মহিলাই পেয়েছেন। এ শহরের নানা স্তরে কথা বলে সে ছবিটাই উঠে আসছে।

প্রসবের পরে অনেক সময়ে নানা শারীরিক জটিলতা হতে পারে মায়ের। তার জন্য হয়তো ছুটতে হয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। সেই সব চেম্বারে কি এই ব্যবস্থা থাকে? স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় যেমন বললেন, শোভাবাজারে তাঁর নিজস্ব চেম্বারে ফিডিং রুম আছে। কিন্তু অন্য যে সব ক্লিনিকে তিনি বসেন, সেখানে তেমন বন্দোবস্ত এখনও হয়নি। অভিনিবেশবাবুর কথায়, ‘‘এই কারণে আমরা এই ধরনের রোগিণীকে আগে দেখে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।’’

আরও পড়ুন: ‘ঠাঁইহারা’ ছাত্রীর পাশে বিশ্ববিদ্যালয়

শুধু শারীরিক সমস্যা নয়। প্রসব পেরিয়ে বহু মা শিকার হন মানসিক অবসাদের। কাউকে কাউকে যেতে হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও। সেই সব ক্লিনিকে কি এ বিষয়টি মাথায় রাখা হয়? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, সত্যিই সেটা বিবেচনায় থাকে না। অনুত্তমা বললেন, ‘‘অনেকের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, ফিডিং রুম থাকবে— এই প্রত্যাশাটাও নেই কোথাও। ফিডিং রুম না থাকাটাই যেন স্বাভাবিক!’’

মা হওয়ার পরে কাজে ফিরেও অনেককে এই অসুবিধের মুখোমুখি হতে হয়। শহরের এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিপাশা রায় শোনালেন তাঁর অভিজ্ঞতা। তাঁর সংস্থা বহুদিনের পুরনো হলেও ফিডিং রুমের ব্যবস্থা ছিল না। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অসুবিধের কথা জানানোর পরে এত দিনে পৃথক ঘরের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বিপাশা তাঁর মায়ের কাছে শুনেছেন, নব্বইয়ের দশকে মায়ের অফিসে ফিডিং রুম ছিল না। এক সহকর্মীর বাড়ি থেকে রোজ গাড়িতে সন্তান কোলে আয়া চলে আসতেন অফিসের কাছে। সহকর্মী মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে আড়াল খুঁজে গাড়ি পার্ক করে শিশুকে খাওয়াতেন। ‘এক্সপ্রেস’ করে মাতৃদুগ্ধ রেখে দেওয়ার চল তখন বিশেষ ছিল না।

শহরের বেশ কিছু আইটি সংস্থায় এখন এই ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তা বাদে অন্য বেশির ভাগ অফিসেই ফিডিং রুম দুর্লভ। আইটি কর্মী সুতপা চক্রবর্তী জানালেন, শুধু বাচ্চা নিয়ে এলেই ফিডিং রুম দরকার, ব্যাপারটা তো তা নয়। অনেকটা সময় কর্মস্থলে কাটিয়ে রাতের দিকে অফিস থেকেই বাচ্চার জন্য দুধ এক্সপ্রেস করে নিয়ে যেতে পারেন মা। এতে বাচ্চা ও মা, দু’জনেরই সুবিধে হয়। মা সারা দিনের ক্লান্তি ঠেলে একটু বিশ্রাম পান, শিশুও বঞ্চিত হয় না। চিকিৎসকদের দাবি, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা এক্সপ্রেস করা মাতৃদুগ্ধ তিন-চার ঘণ্টা পর্যন্ত শিশুকে দেওয়া যায়। ফ্রিজে রাখতে পারলে আরও সুবিধে।

অফিস তো হল। হঠাৎ এই সময়েই ভিসা ইন্টারভিউ পড়লে? নতুন মায়েরা কি সে সুবিধে পান? কর্মীদের পাশাপাশি ভিসা আবেদনকারীদের জন্যও পৃথক ফিডিং রুম আছে কলকাতার মার্কিন কনস্যুলেটে, জানাচ্ছেন মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের অধিকর্তা জেমি ড্রাগন। বাইপাসের ধারের পাসপোর্ট অফিসেও পৃথক চাইল্ড কেয়ার রুম আছে।

সচেতনতা যে জাগছে একটু একটু করে, আশার কথা এটাই। শহর আরও একটু সহযোগিতার হাত বাড়ালে হঠাৎ প্রয়োজনে প্রকাশ্য স্থানে স্তন্যপান করাতে গিয়ে ‘অবাঞ্ছিত দৃষ্টির’ শিকার হতে হয় না ভবিষ্যতের মায়েদের। এমন এক মায়ের আবেদন শুনেই কিন্তু নড়ে বসেছে দিল্লি হাইকোর্ট। এ শহর কবে ভাববে?

Breastfeeding Room Breastfeeding Space Kolkata Mother
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy