Advertisement
E-Paper

স্প্রিং পোস্টই ভাঙা, লেন মানবে কে

দিন তিনেকের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে কলকাতা পুলিশের পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ। তার আগে পথ-দুর্ঘটনায় লাগাম টানতেই আপাতত হিমশিম খাচ্ছে লালবাজার। এই অবস্থায় ট্র্যাফিক পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা দাবি করছেন, রোগ ধরতে পেরেছেন তাঁরা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:২১
বে-লাইন: ভাঙা স্প্রিং পোস্টের উপর দিয়েই চলছে বাস। স্ট্র্যান্ড রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বে-লাইন: ভাঙা স্প্রিং পোস্টের উপর দিয়েই চলছে বাস। স্ট্র্যান্ড রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দিন তিনেকের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে কলকাতা পুলিশের পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ। তার আগে পথ-দুর্ঘটনায় লাগাম টানতেই আপাতত হিমশিম খাচ্ছে লালবাজার। এই অবস্থায় ট্র্যাফিক পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা দাবি করছেন, রোগ ধরতে পেরেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালানোই একাধিক দুর্ঘটনার মূল কারণ। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তাঁরা বলছেন, ‘‘গত এক মাসে বেশির ভাগ পথ দুর্ঘটনাই বাসে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় পড়া ৯০ শতাংশ বাসই নির্দিষ্ট লেন মেনে চলছিল না।’’

যদিও পুলিশেরই একাংশ বলছে, লেন মেনে গাড়ি না চালানোর রোগ নতুন নয়। গত কয়েক বছরেও পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহের আগে এই লেন মেনে গাড়ি না চালানোকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। তবে রোগ নিরাময় হয়নি। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে লেন ড্রাইভিংয়ের দাওয়াই দিতে শহর জুড়ে বসানো হয়েছিল ‘স্প্রিং পোস্ট’। গেরুয়া রঙের ওই পোস্টের দেখানো পথে গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের মধ্যে আলাদা করে সচেতনতা প্রচারও চালানো হয়েছিল। এর পরে ওই ‘স্প্রিং পোস্ট’ ব্যবহার করা হয় বাস এবং অটোর লেন বেঁধে দেওয়ার জন্য। যদিও কয়েক বছর যেতেই ওই সব ‘স্প্রিং পোস্টে’র বেহাল অবস্থা হয়েছে। অধিকাংশই ভেঙে উঠে গিয়েছে রাস্তা থেকে। কোথাও কোথাও শুধু স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে লোহার স্ক্রু-গুলি রাস্তার সঙ্গে আটকে রয়েছে। এক ট্র্যাফিক পুলিশ আধিকারিক বলছেন, ‘‘লেন নির্দেশক ওই পোস্টগুলিই যদি না থাকে, তা হলে গাড়ির চালকদের লেন মানতে বাধ্য করা যাবে কী দিয়ে?’’ আর এক পুলিশকর্মী আবার বললেন, ‘‘লেন মানতে বাধ্য করার অর্থ তো সিগন্যালের কাছে লাঠি হাতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া। এ ভাবে কাজ হয়?’’

পথের অভিজ্ঞতাও বলছে, পুলিশকর্মীদের আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। সদ্য যেগুলি লাগানো হয়েছে, সেগুলি ছাড়া শহরের বেশির ভাগ রাস্তাতেই ‘স্প্রিং পোস্ট’ ভেঙে গিয়েছে। লেন মানা তো দূরের কথা, বহু জায়গায় ‘স্প্রিং পোস্টে’র উপর দিয়েই অবলীলায় গাড়ি চালিয়ে দেন চালকেরা। অভিযোগ, সবচেয়ে বেপরোয়া ভাব দেখা যায় বাসচালকদের মধ্যে। শুক্রবার দুপুরেই স্ট্র্যান্ড রোডে দেখা গিয়েছে প্রবল যানজট। পরপর বাস হাওড়া সেতুর দিকে এগোচ্ছে। এক সময়ে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, যিনি যেখান দিয়ে পারছেন গাড়ি গলিয়ে দিচ্ছেন। ওই রাস্তায় অধিকাংশ ‘স্প্রিং পোস্ট’ই ভেঙে গিয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, বাসের দাপটে তাদেরও বেহাল অবস্থা। একই রকম অবস্থা এ দিন দেখা গিয়েছে, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড হয়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডেও। বাসের দাপটে সেখানে লেন মানার ব্যবস্থা শিকেয় উঠেছে। উল্টোডাঙা রোডে আবার দেখা গেল, কয়েক দিন আগেই লাগানো ‘স্প্রিং পোস্ট’গুলি এখনও পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে। ২০১ রুটের একটি বাস সেই পোস্টের উপরে সজোরে ব্রেক কষে দাঁড়াল। মাঝরাস্তাতেই শুরু হল যাত্রী নামানো!

উত্তর কলকাতার এক ট্র্যাফিক গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলছেন, ‘‘কোনও জিনিসই পাকাপাকি থাকে না। ফাইবারের তৈরি এই পোস্টগুলিও তাই। সময়ে সময়ে রিকুইজিশন দিলে লালবাজার থেকে সংশ্লিষ্ট ট্র্যাফিক গার্ড স্প্রিং পোস্ট লাগানোর ছাড়পত্র পায়।’’ কিন্তু, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে পোস্ট ভাঙা রুখতে কোনও বিধি নেই? বাইপাসের ধারে একটি ট্র্যাফিক গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলছেন, ‘‘১৮৪ (বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো) ধারায় মামলা রুজু করা যায়। তবে তাকে ঠিক স্প্রিং পোস্ট ভাঙার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বলা যায় না। রাস্তায় কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ারদের কড়া নজরদারি ছাড়া সে ভাবে কোনও উপায় নেই।’’

তা হলে উপায়? ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা আগের থেকে অনেক কমেছে। লেন মেনে গাড়ি চালানোর জন্য আরও সচেতনতা প্রচার চালানো হবে। নতুন করে স্প্রিং পোস্টও লাগানো হচ্ছে।’’

Spring Post Accident Kolkata Traffic Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy