Advertisement
E-Paper

‘চার জনের জন্য মাথা হেঁট গোটা তল্লাটের’

ঘটনার পরেই বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে ঘটনাস্থল লাগোয়া বস্তি থেকে ন’জনকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু এলাকার মানুষের অভিযোগ, পুলিশ মূল চার অভিযুক্তকে না ধরে অন্যদের ধরে নিয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০২
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে চার দিন। কিন্তু কাশীপুরের সর্বমঙ্গলা ঘাটে পুলিশ-নিগ্রহের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান এখনও ফেরার।

ঘটনার পরেই বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে ঘটনাস্থল লাগোয়া বস্তি থেকে ন’জনকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু এলাকার মানুষের অভিযোগ, পুলিশ মূল চার অভিযুক্তকে না ধরে অন্যদের ধরে নিয়ে গিয়েছে। ওই চার জনের মধ্যে শেখ শাহদত, মহম্মদ মিখাইল এবং মিতন শেখকে সোমবার রাতে চিৎপুর থানা এলাকার টার্নার রোডের পাশে একটি গুদাম থেকে গ্রেফতার করেছে উত্তর বন্দর থানার পুলিশ।

পুলিশ ওই তিন জনকে গ্রেফতার করলেও তাদের ভূমিকায় খুশি নন সর্বমঙ্গলা ঘাট সংলগ্ন জ্যোতিনগর এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি, ওই রাতে পুলিশ কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ন’জনকে গ্রেফতার করেছে। অথচ, ঘটনার আসল মাথা হাফিজুরকেই এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। এলাকাবাসীর মধ্য থেকে দাবি উঠেছে, ‘‘আসল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে নির্দোষদের অবিলম্বে ছেড়ে দিক পুলিশ।’’

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ সম্পর্কে লালবাজার নীরব। যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকার ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপেরও। যদিও কলকাতা পুলিশের সরকারি ফেসবুকে সোমবার লেখা হয়েছে, ‘পুলিশকর্মী নিগ্রহের প্রতিটি ঘটনাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখি আমরা। অভিযুক্তেরা যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার হয়। যেমন হয়েছে শুক্রবারের ঘটনায়।’’

ভাইরাল হয়ে যাওয়া সেই ফেসবুক-বার্তা জ্যোতিনগরের বাসিন্দাদের অনেকের মোবাইলেও পৌঁছে গিয়েছে। তাতে বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে। এলাকা থেকে ধৃত ন’জনের মধ্যে এক জনের পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বলা হয়, ‘‘পুলিশকে মারধরের ঘটনা আমরা একেবারেই সমর্থন করি না। আবার এই ঘটনায় যাঁরা দোষী নন, তাঁদের গ্রেফতার করাটাও সমর্থন করি না।’’

শুক্রবার রাতে কাশীপুরের সর্বমঙ্গলা ঘাটে প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছিলেন চিৎপুর থানার অতিরিক্ত ওসি শচীন মণ্ডল। দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইটের আঘাতে তাঁর মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়েছে। শচীনবাবুকে অবশ্য সোমবারই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই নিগ্রহের ঘটনায় সোমবার রাতে ধৃত শাহদতের বাড়ি কাশীপুরে। মিখাইল ও মিতনের বাড়ি সর্বমঙ্গলা ঘাট সংলগ্ন জ্যোতিনগর কলোনিতে। সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে পুলিশ আধিকারিককে মারধরের ঘটনার আসল মাথা হাফিজুর। ওই রাতে চিৎপুরের সর্বমঙ্গলা ঘাটে মদের আসর বসিয়ছিল সে। হাফিজুরের সঙ্গে ছিল শাহদত, মিখাইল ও মিতন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সব সময়ে হাফিজুরের সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরত বাকি তিন জন। এদের বিরুদ্ধে নানা দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে। এক বাসিন্দার আক্ষেপ, ‘‘ওই চার জনের জন্যই গোটা জ্যোতিনগর কলোনির মাথা হেঁট হয়ে গেল।’’

জ্যোতিনগর কলোনির বাসিন্দা হাফিজুরের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। হাওড়াতেও একাধিক অপরাধের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত সে। হাফিজুর নৌকাপথে বাংলাদেশে চোরাচালানেও যুক্ত বলে পুলিশ সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশের সূত্রটির দাবি, এক সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া হাফিজুরের বিরুদ্ধে অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া, চুরি, নারী পাচার ও জাল নোটের কারবারের অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি মুসা নামে এক দাগি অপরাধীকে আশ্রয় দিয়ে লুঠের মালের ভাগও নিয়েছিল হাফিজুর। মেয়াদ পেরোনো ওষুধের ব্যবসাও রয়েছে তার।

স্থানীয় সূত্রের খবর, জ্যোতিনগর কলোনির বাসিন্দা হাফিজুরের সঙ্গে বামফ্রন্ট আমলে সিপিএম নেতা-কর্মীদের ওঠাবসা থাকলেও বর্তমানে তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত হাফিজুর। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুমন সিংহ বলেন, ‘‘জ্যোতিনগর কলোনির সবাইকে আমি চিনি। হাফিজুরকেও চিনি। ওঁর বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ আগে শুনিনি। পুলিশ তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে আমার কিছু বলার নেই।’’

Police Kolkata Police Beaten Jyoti Nagar Slum Chitpur Police Station Crime Miscreants
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy