Advertisement
E-Paper

খাটে বৃদ্ধের পচাগলা দেহ, পাশে শুয়ে স্ত্রী

মৃত বৃদ্ধের নাম তরুণ দাস (৬২)। প্রৌঢ়ার নাম রত্না দাস। পুলিশ জানিয়েছে, রত্নাদেবী আপাতত আর জি করের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি। তিনি আংশিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। পুলিশ সূত্রের খবর, তরুণবাবুর দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু মেলেনি। তবে অন্তত দিন দুয়েক আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলেই জানিয়েছে পুলিশ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন বলেও জেনেছেন তদন্তকারীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৭
তালা দেওয়া ওই দম্পতির বাড়িতে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

তালা দেওয়া ওই দম্পতির বাড়িতে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বিছানার উপরে পড়ে রয়েছে এক বৃদ্ধের পচাগলা দেহ। তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে ঘরে। দেহের পাশেই শুয়ে রয়েছেন প্রৌঢ়া স্ত্রী! তাঁর পেটে গভীর ক্ষত। রবিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ কাঁকু়ড়গাছির সিআইটি রোডের আনন্দলোক আবাসনের ডি-৬ ফ্ল্যাটে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠলেন দুঁদে পুলিশ অফিসারেরাও। তড়িঘড়ি প্রৌঢ়াকে পাঠানো হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ময়না-তদন্তে পাঠানো হয় বৃদ্ধের দেহ। বহু দিনের প্রতিবেশীদের এমন পরিস্থিতি দেখে বিস্মিত ও চিন্তিত ওই আবাসনের অন্য বাসিন্দারাও।

মৃত বৃদ্ধের নাম তরুণ দাস (৬২)। প্রৌঢ়ার নাম রত্না দাস। পুলিশ জানিয়েছে, রত্নাদেবী আপাতত আর জি করের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি। তিনি আংশিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। পুলিশ সূত্রের খবর, তরুণবাবুর দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু মেলেনি। তবে অন্তত দিন দুয়েক আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলেই জানিয়েছে পুলিশ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন বলেও জেনেছেন তদন্তকারীরা।

রত্নাদেবীর আঘাত দেখে পুলিশের একাংশের সন্দেহ, সেটা ধারালো কিছুর আঘাত। তাঁদের আশঙ্কা, রত্নাদেবী নিজেই কিছু দিয়ে আঘাত করেছিলেন। পুলিশ জানায়, এই দম্পতির একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকেন। তাঁকে এই পরিস্থিতি জানানো হবে। তরুণবাবুর আত্মীয়দের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, তরুণবাবুর মৃত্যুর কথা রত্নাদেবী ছেলেকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। পুলিশের ধারণা, সেই শোকেই রত্নাদেবী আর কাউকে কিছু জানাননি। এ দিন সকালে এক প্রতিবেশী রত্নাদেবীকে ফোন করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তার পরেই মানিকতলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

তরুণবাবুর উল্টো দিকের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক যুবতী জানান, শনিবার রাত আটটা নাগাদ তিনি দেখেন, ওই দম্পতির ফ্ল্যাটের দরজায় আনাজের ব্যাগ ঝুলছে। তিনি কলিং বেল বাজালে রত্নাদেবী দরজা খুলে ব্যাগটি নিয়ে নেন। তার পরে তাঁদের আর দেখা যায়নি। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশ জানান, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তরুণবাবুরা সেখানে রয়েছেন। তরুণবাবু এক সময়ে ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। রত্নাদেবীও আবাসনে বেশ মিশুকে বলেই পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর কয়েক আগে ছেলে বুবুকে ধারদেনা করেই জার্মানিতে পাঠিয়েছিলেন তরুণবাবুরা। পরবর্তী কালে গুরুতর অসুস্থতার কারণে তরুণবাবুর ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার জেরে তিনি আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলেন বলে প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদেশে চলে যাওয়ার পর থেকে ছেলেকে আর কখনও বাবা-মায়ের কাছে আসতে দেখেননি তাঁরা।

আবাসন সূত্রের খবর, কোমর থেকে আংশিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সে ভাবে বাইরে বেরোতেন না রত্নাদেবী। ফলে ইদানীং বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। সম্ভবত আর্থিক সমস্যার কারণে কাজের লোককেও ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের উঠে এসেছে সমাজের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পরিস্থিতির কথা। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা বিদেশে গিয়ে থিতু হওয়ার পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। একই শহরে থেকেও সম্পর্কের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও বিরল নয়। স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। আমার এলাকায় এমন নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অনেকেই রয়েছেন। অনেকেই শেষ অবলম্বন হিসেবে পরিচারক-পরিচারিকাদের আঁকড়ে ধরছেন।’’ মনোরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব মনে করেন, ছেলে না আসায় চরম হতাশায় ভুগছিলেন অসুস্থ বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘হয়তো ছেলের কথায় মন এতটাই ভেঙে গিয়েছিল তাঁর যে, অন্য কাউকে আর স্বামীর মৃত্যুর খবরটাও জানানোর মানে খুঁজে পাচ্ছিলেন না!’’

Death Injury Trauma Rotten Body R G Kar Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy