রুদ্ধ: আবর্জনায় ভরেছে সোনাই খাল। —নিজস্ব চিত্র।
জানুয়ারির গোড়াতেও তাপমাত্রার পারদ তেমন নামছে না। তবু পোকামাকড়েরা অনেকেই, হয়তো স্বভাবের দোষেই, শীতঘুমে চলে গিয়েছে। এ দিক-ও দিক মশা উড়ে বেড়ালেও তাদের সেই দৌরাত্ম্য আর নেই। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও কয়েক দিন ধরে নেই।
শীতঘুমে চলে গিয়েছেন পুরকর্মীরাও। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা সত্ত্বেও মশা ও মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে হেলদোল নেই দক্ষিণ দমদম পুরসভার।
অথচ, গত মরসুমে ডেঙ্গির মরণ-কামড় শুরু হয়েছিল ওই পুরসভারই মধুগড় এলাকায়। দমদম স্টেশন, মধুগড়, এম সি গার্ডেন-সহ ওই এলাকার মানুষ ভেবেছিলেন, গত দু’বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ বার জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে বিশেষ প্রচার অভিযানে নামবে পুর প্রশাসন। নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাতেও তাঁরা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় কী! শীতের মরসুম আসার পরেই পুরসভার যাবতীয় তৎপরতা উধাও। অথচ, পুর এলাকায় উৎসব-মেলার আয়োজনে কিন্তু ঘাটতি নেই।
মধুগড়ের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘বড়দিনের পরে বিবেকানন্দ জয়ন্তী, পৌষ পার্বণ, নেতাজি জয়ন্তী, সরস্বতী পুজো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কাউন্সিলরেরা। মশা-নিধন নিয়ে কোনও উদ্যোগই নেই। মনেই হচ্ছে না যে, গত দু’বছর এই এলাকায় ডেঙ্গিতে এত জনের মৃত্যু হয়েছে।’’
নবান্নের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, বছরভর সব ক’টি পুর এলাকাতেই সাফাই অভিযান চলবে, যাতে মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হতে না পারে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত রয়ে গিয়েছে কাগজে-কলমেই। মেলা-পিকনিকের পরে থার্মোকলের পাতা ও পাত্রে ঢেকেছে বাগজোলা, সোনাই-সহ বিভিন্ন খালের বিস্তীর্ণ অংশ। পরিত্যক্ত কারখানা, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ফাঁকা জায়গাতেও জঞ্জালের স্তূপ। এক বার বৃষ্টি হলেই ওই সব পাত্রে জমবে জল। আর ডিম পেড়ে যাবে মশারা।
গোটা রাজ্যের মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার মানুষ। পুরসভা মুখে বহু পরিকল্পনার কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুরসভা যে ভাবে প্রচারমুখী হয়ে ওঠে, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে তার সিকিভাগও দেখা যাচ্ছে না। দেরিতে হলেও গত বছর কিছু এলাকায় মিছিল করে এবং হোর্ডিং-ব্যানার লাগিয়ে সচেতনতার প্রচার করা হয়েছিল। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই কম।
প্রচারে যে শিথিলতা রয়েছে, সে অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, মশা নিধনের কাজ তাঁরা এক দিনের জন্যও বন্ধ করেননি। চলতি সপ্তাহ থেকেই জোরকদমে মশা-বিরোধী প্রচার শুরু করবেন তাঁরা। পরিকল্পনা তৈরি। এখন চলছে তথ্য সংগ্রহের কাজ। তিনি বলেন, উৎসবের জন্য কোথাও কাজ বন্ধ হয়নি।
দক্ষিণ দমদম পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পুরকর্মীদের নিয়ে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাড়ি বাড়ি ঘুরে সচেতন করা এবং মশার উৎসস্থল ধ্বংস করার কাজে প্রতিটি ওয়ার্ডে অতিরিক্ত ছ’জন করে কর্মীও নিয়োগ করা হয়েছে। যে সব বাড়িতে মশার লার্ভা মিলবে, সেই বাড়ির দেওয়ালে বিশেষ স্টিকার লাগাবে পুরসভা। এ ছাড়াও প্রতিটি পাড়ায় স্থানীয়দের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে।
অনেক দাবি করলেও ফেব্রুয়ারির আগে জোরকদমে কাজের ছবি ফিরবে কি না, তা নিয়ে প্রশাসনের একাংশই নিশ্চিত নন। ফলে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে শুরুতেই কিছুটা পিছিয়ে পড়ল দক্ষিণ দমদম পুরসভা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy