নারকেলডাঙা থানায় সাহিনা জাভেদ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে ১৬ বছরের এক কিশোরীর জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ পাড়ায় ঢুকেছিল। মেয়েটির মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে বিয়ে ঠেকিয়েও দেয় পুলিশ।
এই ঘটনার ঠিক পরেই পাড়ায় নারী অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিয়ে সক্রিয় মেয়েদের একটি দলকে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের রোষে পড়তে হল।
রবিবার দুপুরে তখন সবে পাড়ার গরিবদের জন্য ফল বিতরণের কর্মসূচি সেরে ফিরেছেন সাহিনা জাভেদ, তাহসিনা বানোরা। রাজাবাজারের দুধ কোঠির কাছে তাঁদের ক্লাবঘরের দরজায় লাথি মেরে ভাঙচুরের চেষ্টা করা হল বলে অভিযোগ। উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে ক্লাবের সাইনবোর্ডটিও। সাহিনা ও তাঁর সহযোগীদের ঘিরে ধরে গালিগালাজ, মারধরের হুমকি দেওয়া হয় এবং তাড়া করা হয় বলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। মহিলাদের সঙ্গে অভব্য ব্যবহার, জোর করে আটকে রাখার চেষ্টা, ভাঙচুর ইত্যাদির কথা বলে নারকেলডাঙা থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
ঠিক কেন দুষ্কৃতীদের আক্রমণের নিশানা হলেন ওই মহিলারা?
পুলিশের দাবি, পাড়ায় নাবালিকার বিয়ে ভেস্তে যাওয়ার পরে সাহিনারাই ওই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন ভেবে দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপরে চড়াও হয়। যদিও এ যাত্রায় চাইল্ডলাইন-এর মাধ্যমে অভিযোগ পেয়েই ওই এলাকায় নাবালিকা মেয়েটির বিয়ে রুখে দিতে তৎপর হয়েছিল পুলিশ। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে মেয়েদের সাহস জোগানোর কাজ করে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রেও সাহিনাদের দিকেই ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে স্থানীয়দের একাংশের। পুলিশের এক কর্তার মতে, ‘‘এলাকার বেশির ভাগই কিন্তু নাবালিকাদের বিয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাহিনা ও মেয়েদের দলটির প্রতি রাগ থেকেই কিছু দুষ্কৃতী গোলমাল পাকিয়েছে।’’
বাস্তবিক, সাহিনারা ওই পাড়ায় অল্পবয়সী মেয়েদের সামনে রেখে নারীর ভূমিকা সংক্রান্ত ছকে-বাঁধা ধারণাকেই পাল্টে দিচ্ছেন। তাঁদের উৎসাহে, পাড়ার মেয়েরা ফুটবল খেলছেন কিংবা গাড়ি চালানোর জীবিকা গ্রহণ করছেন। পাড়ায় মেয়েদের উপরে পারিবারিক হিংসা বা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধেও সচেতনতার আবহ গড়ে উঠেছে সাহিনাদের তৎপরতায়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ওই তল্লাটে প্রভাবশালী মহলের অনেকেই এখন সাহিনাদের ভূমিকায় খুশি। কিন্তু পাড়ার অন্য একটা দল সাহিনাদের বিপাকে ফেলতে সচেষ্ট বলে মালুম হচ্ছে।
রাজাবাজারের হামলার খবর পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতার কোথাও নাবালিকার বিয়ে রুখতে গিয়েছে বলে গোলমাল পাকানো হচ্ছে, এই ঘটনা হাল্কা ভাবে নেওয়ার নয়।’’ তবে তিনিও এলাকায় কথা বলে দেখেছেন, সাহিনাদের প্রতি বেশির ভাগ লোকের ভরসা রয়েছে। সাহিনাদের ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করে এমন কয়েকটি বাড়ির মেয়েদেরও কয়েক জন দুষ্কৃতী হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ। সাহিনার আশঙ্কা, ‘‘গুটি কয়েক লোক নানা ভাবে আমাদের কাজে বাগড়া দিচ্ছে। তারাই এ বারও মারতে এসেছিল। ওরাই পাড়ায় আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’’ অনন্যাদেবীও পুলিশকে জানিয়েছেন, দোষীদের অবিলম্বে ধরে ব্যবস্থা নিতে। তাঁর কথায়, ‘‘দোষীরা ধরা পড়লে শান্তিপ্রিয় লোকের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। দোষীরাও বুঝবে, অন্যায় করে সহজে পার পাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy