গত কয়েক বছরে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তির চাহিদা বেড়েছে। যদিও সব সময়ে সেখানে জায়গার সঙ্কুলান হয় না। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি ধাঁচে পরিষেবা পেতে চান রোগীদের অনেকেই। তার জন্য তাঁরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতেও রাজি। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই কয়েক বছর আগে এসএসকেএম চত্বরে যে প্রাইভেট কেবিন বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল, তা প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শীঘ্রই এসএসকেএমের সেই ‘উডবার্ন-২’ চালু হবে বলে খবর।
স্বাস্থ্য প্রশাসনের অন্দরের পর্যবেক্ষণ, সরকারি চিকিৎসকদের পরিষেবা বাইরে পেতে গিয়ে অনেক সময়েই বিপুল খরচের বোঝা বহন করে উঠতে পারেন না রোগীদের একাংশ। কিন্তু ‘উডবার্ন-২’-তে সেই খরচ সাধ্যের মধ্যেই থাকবে বলে দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের। আবার উডবার্নের মতো এই প্রাইভেট কেবিনেও ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ স্কিম’-এর পাশাপাশি চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্বাস্থ্য বিমার নগদহীন (ক্যাশলেস) পরিষেবা মিলবে। তবে, এখানে কোনও জরুরি বিভাগ থাকছে না।
‘উডবার্ন-২’-এর কেবিনের ভাড়া (যে চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তি হবেন, তাঁর ফি সমেত), অস্ত্রোপচারের প্যাকেজের খরচ, প্রয়োজনে এসএসকেএমের কোনও বিভাগের অপারেশন থিয়েটার ব্যবহারের খরচ, ভিজ়িটিং চিকিৎসক এবং বহির্বিভাগের ফি— সমস্ত কিছুই চূড়ান্ত করবে স্বাস্থ্য দফতর। এসএসকেএমের তরফে সম্ভাব্য ফি-কাঠামোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও খবর। জানা যাচ্ছে, এসএসকেএমের বহির্বিভাগ বা জরুরি বিভাগে আসা কোনও রোগী নিজে ইচ্ছে প্রকাশ করলে ‘উডবার্ন-২’-তে ভর্তি হতে পারবেন। আবার ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা কোনও রোগীও চাইলে সেখানে স্থানান্তরিত হতে পারবেন। একই ভাবে ‘উডবার্ন-২’-এর বহির্বিভাগের রোগীরাও ভর্তির সুযোগ পাবেন। তবে, কার্ডিয়োলজি, সিটিভিএস, স্নায়ু-শল্য বিভাগের রোগীরা প্রাইভেট কেবিনে ভর্তি হলেও সেখানে এই সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের সুযোগ থাকছে না। তার জন্য এসএসকেএমের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অপারেশন থিয়েটার নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ব্যবহার করা যাবে।
সূত্রের খবর, সরকারি হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণে কর্পোরেট ধাঁচের হাসপাতাল তৈরির ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই উডবার্নের চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ প্রাইভেট কেবিন প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেন। প্রশাসন সেই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার পরে ২০২২-এর নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। কর্পোরেট ধাঁচের এই হাসপাতালটির নাম আপাতত ‘উডবার্ন-২’ রাখা হলেও পরবর্তী কালে মুখ্যমন্ত্রী নতুন নামকরণ করতে পারেন বলেও খবর। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উল্টো দিকে, এসএসকেএমের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকেই বাঁ হাতে প্রায় ১১ কাঠা জমির উপরে গড়ে উঠেছে নীল-সাদা রঙের দশতলা ভবন। সিভিল ও ইলেক্ট্রিক্যাল মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।
সূত্রের খবর, ওই ভবনে মোট ১১০টি কেবিন তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০২টি এক শয্যার কেবিন এবং আটটি সুইট রয়েছে। এ ছাড়া, বহির্বিভাগের জন্য তিনটি ঘর, একটি অপারেশন থিয়েটার, চার শয্যার রিকভারি রুম, ২০ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট রয়েছে। ওই ভবনেই থাকছে প্যাথলজির ল্যাবরেটরি এবং এক্স-রে, ইউএসজি-সহ রেডিয়োলজির অন্যান্য সুবিধা। তবে, সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই-এর সুবিধা মিলবে নতুন ভবনের উল্টো দিকের মূল উডবার্ন ব্লকের একতলায়। জানা যাচ্ছে, বহির্বিভাগের তিনটি ঘরে কোন দিন কোন বিভাগের চিকিৎসক বসবেন, তার নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি হবে। এসএসকেএমে কর্মরত ইচ্ছুক চিকিৎসকেরাই বিকেল চারটের পরে বা ছুটির দিনে সেখানে রোগী দেখতে পারবেন।
প্রাইভেট কেবিনের জন্য মেডিক্যাল অফিসার, নার্স-সহ বিভিন্ন কাজে কত জন কর্মী প্রয়োজন, তারও প্রস্তাব এসএসকেএমের তরফে স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে খবর। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘সরকারি চত্বরেই সীমিত খরচে বেসরকারি ধাঁচের পরিষেবা মিললে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। এখন শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)