Advertisement
E-Paper

ভেঙে পড়ল জীর্ণ বাড়ির একাংশ, দায়িত্ব ঘিরে প্রশ্ন পুর-অন্দরেই

দীর্ঘ দিন মেরামতির কোনও বালাই নেই, এমন জরাজীর্ণ বাড়ির সংখ্যা শহরে প্রচুর। রবিবার মধ্য কলকাতায় ভেঙে পড়ল এমনই একটি বাড়ির একাংশ। ঘটনাস্থল মুচিপাড়া থানা এলাকার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট। স্থানীয় কাউন্সিলরের দাবি, ওই এলাকায় এ রকম অনেক বাড়ি আছে। কিন্তু পুর-প্রশাসন সেই সব বাড়ির মালিক খুঁজে পায় না বলে কর তো মেলেই না, এমনকী, ওই সব বাড়ির দিকে পুর-নজরও পড়ে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
চলছে উদ্ধারকাজ। রবিবার, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

চলছে উদ্ধারকাজ। রবিবার, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

দীর্ঘ দিন মেরামতির কোনও বালাই নেই, এমন জরাজীর্ণ বাড়ির সংখ্যা শহরে প্রচুর। রবিবার মধ্য কলকাতায় ভেঙে পড়ল এমনই একটি বাড়ির একাংশ। ঘটনাস্থল মুচিপাড়া থানা এলাকার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট। স্থানীয় কাউন্সিলরের দাবি, ওই এলাকায় এ রকম অনেক বাড়ি আছে। কিন্তু পুর-প্রশাসন সেই সব বাড়ির মালিক খুঁজে পায় না বলে কর তো মেলেই না, এমনকী, ওই সব বাড়ির দিকে পুর-নজরও পড়ে না।

রবিবার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের চারতলা ওই বাড়িটির একাংশ ভেঙে পড়ার পরে টনক নড়ল পুর-কর্তৃপক্ষের। স্থানীয় কাউন্সিলর জানালেন, আজ, সোমবার এলাকার ২০টি ‘বিপজ্জনক’ বাড়িতে নোটিস ঝোলানো হবে।

পুলিশ জানায়, চারতলা ওই বাড়িটির একতলায় কয়েকটি দোকান রয়েছে। দোতলা ও তিনতলায় চারটি করে ঘর। চারতলায় তেরোটি ঘর। ঘটনার সময়ে ওই বাড়িতে ছিলেন প্রায় জনা পঞ্চাশেক বাসিন্দা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ির পিছনের একতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত টানা সিঁড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। তার সঙ্গেই ভেঙে পড়ে চারতলার সিঁড়ির সঙ্গে লাগোয়া একটি বারান্দাও। ঘটনার আকস্মিকতায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় ওই বাড়ির প্রায় ১৫-২০ জন বাসিন্দাকে। তাঁদের অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাতেই ওই বাড়িটির দরজা ‘সিল’ করে দেয় পুলিশ। বাড়ির বাসিন্দাদের স্থানীয় একটি ক্লাবে রাখার ব্যবস্থা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনার পরেই খবর দেওয়া হয় দমকলে। পৌঁছয় পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। অবশ্য ওই বাড়ির তিনতলার বাসিন্দা কালী দাস নামে এক মহিলার অভিযোগ, খবর দেওয়ার প্রায় ৪৫ মিনিট পরে দমকল ঘটনাস্থলে আসে। ততক্ষণ এলাকার ছেলেরাই দোতলা থেকে মই দিয়ে বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, রাত পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালিয়ে ওই বাড়ির সমস্ত বাসিন্দাকে নিরাপদে বার করে আনা হয়েছে।

মুকুল দাস নামে বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, “আচমকা খুব জোরে একটা আওয়াজ শুনে ঘরের ভিতর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসি। দেখি, সিঁড়ি নেই। কী ভাবে বাড়ি থেকে বেরোব, বুঝতে পারছিলাম না।” তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির কোনও মেরামতি না হওয়াতেই এই পরিস্থিতি হয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে ও তৃণমূল কংগ্রেসের নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। সত্যেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এই এলাকায় এমন বহু বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। তবে পুর-প্রশাসন ওই সব বাড়ির মালিককে খুঁজে পান না। মালিকেরা এত কম ভাড়া পান, যে তাঁরা খেয়ালও রাখেন না। অন্য দিকে, বাসিন্দারা কর দেন না। ফলে, পুরসভারও নজর পড়ে না। মালিক না মেলা ওই সব বাড়িতে বিপজ্জনক নোটিসও ঝোলানো যায়নি। তবে বিল্ডিং বিভাগকে বলেছি, মধ্য কলকাতায় ভয়াবহ অবস্থায় প্রচুর বাড়ি রয়েছে। যে কোনও সময়ে সেগুলি ভেঙে পড়তে পারে। বিষয়টি নিয়ে ৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্তের সঙ্গে আলোচনা করেছি।”

তবে পুরসভার অন্য এক কাউন্সিলর বলেন, “মালিক না পেলেও পুরসভা বাড়ির অবস্থা দেখে নিজেরাই ‘বিপজ্জনক’ নোটিস দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে, স্থানীয় কাউন্সিলর যা-ই বলুন না কেন, এই বাড়িগুলির অবস্থা বিপজ্জনক হলেও সেগুলিকে নোটিস কেন দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

সত্যেন্দ্রনাথবাবুর যুক্তি, “আজ রাতেই বিল্ডিং বিভাগের লোক বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভাঙতে এসেছিলেন। আমিই বলি, রাতে অন্ধকারে বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি ভাঙলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁরা যেন কাল সকালে এসে কাজ করেন। বিল্ডিং বিভাগকে ২০টি নোটিস আনতে বলেছি। আজ, সোমবার এলাকার বিপজ্জনক বাড়িগুলিতে নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।”

premchand boral street building collapse kolkata news online news latest news Worn house
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy