E-Paper

ধর্ষণ-খুনের পরে নিউ টাউনে নতুন উদ্বেগ ফাঁকা জমিতে জঙ্গল

সন্ধ্যা নামলে নির্জন রাস্তার ধারে জঙ্গলে ঢাকা বিস্তীর্ণ ফাঁকা জমি রহস্যজনক চেহারা নেয়। সেই জমির পাশ দিয়ে সাইকেলে চেপে কিংবা হেঁটে মানুষকে চলাচল করতে হয়।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৪
আলো-আঁধারি: রাতের নিউ টাউনে বহু বড় রাস্তাতেও নেই পর্যাপ্ত আলো।

আলো-আঁধারি: রাতের নিউ টাউনে বহু বড় রাস্তাতেও নেই পর্যাপ্ত আলো। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

রাস্তা আলোয় ঝলমল করছে। অথচ, সেই আলোয় চারপাশটা সব সময়ে ভাল দেখতে পাওয়া যায় না। সন্ধ্যা নামলে নির্জন রাস্তার ধারে জঙ্গলে ঢাকা বিস্তীর্ণ ফাঁকা জমি রহস্যজনক চেহারা নেয়। সেই জমির পাশ দিয়ে সাইকেলে চেপে কিংবা হেঁটে মানুষকে চলাচল করতে হয়। অভিযোগ, পুলিশি টহলদারি না থাকায় ছিনতাইয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। রাতে জঙ্গলে ঢাকা এমনই জমিতে সম্প্রতি এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুন করে ফেলে যাওয়া হয়েছিল। এর পরেই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় মানুষ, কেন জঙ্গলে ঢাকা জমি পড়ে থাকবে? সংস্থা বা ব্যক্তির নামে বিক্রি হওয়া জমি হিডকোর থেকে পাওয়ার পরে বহু জায়গায় ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে জঙ্গল গজিয়ে বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ না হলে সেই সব জমি কেন ফেরাবে না সরকার?

নিউ টাউনের লোহাপুল এলাকায় খালের ধারে তারের বেড়া দেওয়া জঙ্গলাকীর্ণ সরকারি জমিতে ধর্ষণ ও খুন হয় ওই কিশোরী। জমিটির চার দিকে তারের বেড়া থাকলেও এক জায়গায় তা ভাঙা ছিল। সেখান দিয়েই ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুন করে দুষ্কৃতী, এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তে।

রাতের নিউ টাউন ঘুরে দেখা গেল, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা একাধিক ফাঁকা জমিতে গজিয়ে উঠেছে জঙ্গলের ভয়াবহ পরিবেশ। রাস্তায় আলো জ্বললেও তা জঙ্গল পর্যন্ত পৌঁছয় না। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও খুনের পরে তাই জঙ্গল নিয়ে উদ্বেগে নিউ টাউনের বাসিন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, ওই সব জঙ্গলাকীর্ণ জমিতে দুষ্কৃতীরা যে কোনও অপরাধ ঘটাতে পারে। গ্রীষ্মে মাদকাসক্তদের আড্ডা জমে ওঠে ওই সব জমিতে।

আবাসিকেরা জানাচ্ছেন, জঙ্গলে ভরে থাকা ওই সব জমি এত দিন মশা বা সাপের আঁতুড় বলেই মনে করতেন তাঁরা। কিন্তু ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে জঙ্গলে ঢাকা জমি নিয়ে অন্য উদ্বেগও ছড়িয়েছে। অতীতে নিউ টাউনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধৃত দুষ্কৃতীদের জঙ্গলে গা ঢাকা দেওয়ার কৌশলের কথাও জেনেছিল পুলিশ।

নিউ টাউনের পেঁচার মোড়, ওয়েস্টিন হোটেলের পিছনে সিডি ব্লকের রাস্তায়, সাপুরজি এলাকার মতো জায়গায় রাতে ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলের সেই গা-ছমছমে পরিবেশই চোখে পড়ল। রাত ন’টা নাগাদ অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের শুনশান রাস্তায় হাঁটতে থাকা তরুণীর বক্তব্য, ‘‘চার মাস ধরে চাকরির জন্য এই সময়ে ফিরতে হয়। বড্ড ফাঁকা রাস্তা। চার মাসে হাতে গোনা দিন রাস্তায় পুলিশ দেখেছি। রিকশা না পেলে হেঁটে ফিরতে খুব ভয় লাগে। চার দিকেই তো হয় জঙ্গল, না হয় নির্মীয়মাণ বড় বড় ফাঁকা বাড়ি।’’ ১৮ নম্বর ট্যাঙ্কের সামনে রাস্তায় কিছুটা যাওয়ার পরেই শুরু হচ্ছে পাথরঘাটা পঞ্চায়েত এলাকা। সংযোগকারী রাস্তার বেশ কিছুটা অংশে আলোর বালাই নেই।

আবাসিকদের সংগঠন ‘নিউ টাউন সিটিজ়েন্স ওয়েলফেয়ার ফ্রেটারনিটি’র সাধারণ সম্পাদক সমীর গুপ্তের কথায়, ‘‘অ্যাকশন এরিয়া ২ ও ৩ তো বটেই, অ্যাকশন এরিয়া ১- এও বহু আবাসিক জমি জঙ্গলে ভরে রয়েছে। বেশি দামের আশায় জমি প্রাপকেরা জমি ফেলে রাখেন। এত দিন ফাঁকা জমিতে সাপ কিংবা মশার উপদ্রব নিয়ে ভাবতে হত। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার পরে নিউ টাউনে এমন জমি অন্য উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। হিডকোর উচিত ওই সব জমি ফেরত নেওয়া বা নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।’’

হিডকোর এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘আবাসিক এলাকায় ফাঁকা জমির মালিকদের নির্ধারিত সময় অন্তর নোটিস পাঠানো হয়। শিল্পের জন্য বরাদ্দ করা জমিগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখা শুরু হবে।’’ এই অবস্থায় নাগরিকদের প্রশ্ন, যাঁরা জমি এ ভাবে ফাঁকা ফেলে রাখছেন, তাঁদের থেকে কেন হিডকো চড়া হারে কর নেবে না?

নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) সূত্রের খবর, কলকাতায় যেমন ফাঁকা জমির আবর্জনা সাফাই-সহ নানা কাজে চড়া হারে কর নেওয়া হয়, তেমনটাই নিউ টাউনে সম্ভব কিনা, তা দেখা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

New Town Insecurity

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy