মর্মান্তিক: পড়ে রয়েছে আদুরিবালা ঘোষের দেহ।
পুজোর জন্য রেললাইনের ধারে দূর্বা তুলছিলেন এক বৃদ্ধা। ট্রেন যে ঘাড়ের কাছে চলে এসেছে, টের পাননি তিনি। আশপাশের লোকজন চিৎকার করে সরে যেতে বলছিলেন তাঁকে। ট্রেনের শব্দে তাঁদের চিৎকারও শুনতে পাননি বৃদ্ধা। লাইনের ধারে চা খেতে খেতে সেই দৃশ্য দেখে বৃদ্ধাকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ট্রেনের ধাক্কায় আদুরিবালা ঘোষ (৭৩) নামে ওই বৃদ্ধার সঙ্গেই মৃত্যু হল সরিফুল ইসলাম (৪১) নামে সেই ব্যক্তির। মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটেছে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখার টাকি রোড সংলগ্ন কদম্বগাছি ৬ নম্বর রেলগেটের কাছে। দুর্ঘটনার পরে দু’জনের মৃতদেহই উদ্ধার করে বারাসত রেল পুলিশ। বারাসত জেলা হাসপাতালে এ দিন দেহ দু’টির ময়না-তদন্ত হয়।
এ দিন ছিল বিপত্তারিণী পুজো ও উপবাস। এই পুজোর আচার হল, লাল সুতোর গেরোয় বেঁধে কয়েক গাছি দূর্বা দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। পরে তা বেঁধে দেওয়া হয় হাতে। তাই সকাল থেকে লাইনের ধারে দূর্বা তুলছিলেন আদুরিবালা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধা যখন ঘাস তুলতে ব্যস্ত, সেই সময়ে ওই লাইন ধরে হাসনাবাদ থেকে আসছিল শিয়ালদহমুখী একটি লোকাল ট্রেন। চালক বারবার হর্ন বাজালেও শুনতে পাননি বৃদ্ধা।
এ দিকে, প্রতিদিনের মতো এ দিনও চা খেতে পিরগাছা ৬ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে গিয়েছিলেন সরিফুল। স্থানীয় বাসিন্দা জাকির আলির কথায়, ‘‘ট্রেনটা তখন এগিয়ে আসছে। লাইনের ধারে ওই বৃদ্ধাকে দেখে আতঙ্কে চিৎকার করছেন সবাই। কিন্তু ওই বৃদ্ধা শুনতে পাচ্ছিলেন না। তখন দেখলাম, চায়ের কাপ ফেলে ছুটে গেলেন সরিফুল।’’ এ দিন ওই দোকানে শেখ রাজুও চা খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘বৃদ্ধাকে হাত ধরে টেনে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন সরিফুল। কিন্তু লাইনের পাথরে পা পিছলে পড়ে যান তিনি। দু’জনই ট্রেনের ধাক্কায় দু’প্রান্তে ছিটকে পড়েন।’’ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের।
আদুরিবালা ঘোষকে (বাঁ দিকে) বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হয় সরিফুল ইসলামের
পিরগাছার বাসিন্দা সরিফুল ছিলেন পেশায় আনাজ বিক্রেতা। তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ, ছেলের বয়স তিন। এ দিন ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে পড়েন প্রতিবেশীরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর এমন আকস্মিক মৃত্যুসংবাদে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন স্ত্রী ফিরোজা। কোনও মতে তিনি বলেন, ‘‘কেউ বিপদে পড়লেই ছুটে যেতেন। নিজের কথা ভাবেননি কখনও। আজও এক জনকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি এ বার কী করব!’’
বৃদ্ধা আদুরিবালার মৃত্যুতেও একই শোকের ছায়া কদম্বগাছি এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা সুদর্শন দেব বললেন, ‘‘লাইনের ধারে বিপত্তারিণী পুজোর দূর্বা তুলতে গিয়েই এই মর্মান্তিক মৃত্যু। সরিফুল নিজের জীবন দিয়েও তাঁকে বাঁচাতে পারলেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy