Advertisement
E-Paper

কুয়োয় পড়ে যুবক, ব্যর্থ উদ্ধারের চেষ্টা

পুলিশ জানায়, ওই যুবকের নাম সম্রাট সরকার ওরফে বাপি (২৯)। তিনি মৃগীতে আক্রান্ত। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে যেতেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩০
উদ্ধারকাজ: কুয়ো থেকে সম্রাট সরকারকে (ইনসেটে) তুলে আনার চেষ্টা চলছে। শুক্রবার, সোনালি পার্কে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

উদ্ধারকাজ: কুয়ো থেকে সম্রাট সরকারকে (ইনসেটে) তুলে আনার চেষ্টা চলছে। শুক্রবার, সোনালি পার্কে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দুপুরবেলায় বাড়ির সামনের কুয়োয় পড়ে যাওয়া এক যুবককে গভীর রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও উদ্ধার করা গেল না। শুক্রবার বাঁশদ্রোণীর সোনালি পার্ক এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ওই যুবককে কুয়ো থেকে বার করে আনতে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালায় দমকল, কলকাতা পুলিশ ও তাদের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরিরা। কিন্তু কুয়োর তলদেশ অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ায় অনেক ক্ষণের চেষ্টাতেও তাঁকে তুলে আনা যায়নি বলে দাবি পুলিশের। এমনকি ওই যুবক রাত পর্যন্ত বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়েও মন্তব্য করতে চায়নি পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্রে করে রাতে ওই এলাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকি তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।

পুলিশ জানায়, ওই যুবকের নাম সম্রাট সরকার ওরফে বাপি (২৯)। তিনি মৃগীতে আক্রান্ত। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে যেতেন। এ দিন দুপুরে তিনি কুয়ো থেকে জল তুলে স্নান করতে যান। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, সেই সময়ে অসুস্থ হয়ে কুয়োয় পড়ে যান ওই যুবক।

শুক্রবার সোনালি পার্কে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় ভিড়ে ভিড়। একটি বাড়ির উপরে টিনের চালের ঘরে মা লক্ষ্মীদেবী ও দিদাকে নিয়ে ভাড়া থাকেন সম্রাট। পেশায় আয়া লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘ছেলের মৃগী আছে। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে এ দিক-সে দিকে পড়ে যায়। হাতে-পায়ে আঘাত পায়। তাই কুয়োয় স্নান করতে যেতে বারণ করতাম। আজও বারণ করেছিলাম। কথা শোনেনি। বাপি আমার এক মাত্র ছেলে।’’

সম্রাটের উদ্বিগ্ন পরিজনেরা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

যে কুয়োয় সম্রাট পড়ে যান সেটির ব্যাস দুই থেকে আড়াই ফুট। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরিরা জানান, কুয়োটি নীচের দিকে সরু হয়ে এক থেকে দেড় ফুটে পরিণত হয়েছে। সেখানেই পড়ে রয়েছেন যুবক। আশপাশে একটি মানুষ নেমে গিয়ে যে তাঁকে উদ্ধার করতে পারে, তার জায়গাও নেই কুয়োর ভিতরে। যার জেরে বেশি রাত পর্যন্ত একাধিক বার কুয়োয় নেমে উঠে আসতে বাধ্য হয়েছেন ডুবুরিরা। অজয় ওরাওঁ নামে এক ডুবুরির কথায়, ‘‘কুয়োটি সরু হওয়ায় ওই যুবকের কাছে পৌঁছনোই সম্ভব হচ্ছে না। তার উপরে গ্যাস ও ঠান্ডা জলের কারণে উদ্ধারের কাজ আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অন্তত চল্লিশ ফুট গভীর কুয়োটি। জলে ভর্তি। জল ছেঁচে ফেললেও ফের জল ভরে যাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: ব্যাগ স্ক্যানে আর আলাদা লাইন নয় বিমানবন্দরে

পুলিশ জানায়, কুয়োর উপর থেকে কপিকল ব্যবহার করেও কোনও লাভ হয়নি। এক বার কোনও ভাবে যুবকের পায়ে দড়ি বেঁধে উপরে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে দড়ি ছিঁড়ে যায়। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, জলের ভিতরে যুবকের মাথা নীচে এবং পা উপরের দিকে হয়ে রয়েছে। শরীরও বেঁকে গিয়েছে।

যুবকের প্রতিবেশীরা জানান, এ দিন দুপুরে তাঁরা কুয়োয় ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেয়েছিলেন। সম্রাটদের প্রতিবেশী বুবাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কুয়োর সামনে গিয়ে দেখি চটি আর গামছা পড়ে রয়েছে। জলে বুদবুদ কাটছে। তখনই বুঝতে পারি বাপি পড়ে গিয়েছে।’’

আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থায় ধৃত সহপাঠী, পরে জামিন

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয় বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস। তিনি উদ্ধারকাজের খানিক তদারকি করার পরে প্রথমে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পরেও ওই যুবককে উদ্ধার করতে না পারায় পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন স্থানীয়েরা। ইতিমধ্যে ফের ঘটনাস্থলে পৌঁছন মন্ত্রী অরূপ। তিনি ওই যুবকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার সময়ে স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়েন। এলাকার লোকজনের অভিযোগ ছিল, বিপর্যয় মোকাবিলার দল সকালে ফের উদ্ধারের কাজ শুরু করবে বলে চলে গিয়েছে। তাই মন্ত্রীকে ঘিরে স্থানীয় মানুষকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনাদের বাড়ির ছেলে হলে কি এ ভাবে তাকে কুয়োয় ফেলে রেখে যেতে পারতেন?’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উদ্ধারের জিনিসপত্র বিকল ছিল। যদিও মন্ত্রীর দাবি, ‘‘সব রকম ভাবেই যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে।’’

Accident Rescue Mission NDRF
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy