Advertisement
E-Paper

হাসপাতাল চত্বরে প্রহার, মৃত্যু যুবকের

ফের গণপ্রহার। ফের মৃত্যু। এবং ঘটনাস্থল সেই এনআরএস। এ বার মার খেয়ে মৃত্যু হল হাসপাতালেরই কর্মী আবাসনের এক বাসিন্দার। এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তাঁরই প্রতিবেশীরা। প্রত্যক্ষদর্শী এবং মৃতের পরিজনদের দাবি, চুরির প্রতিবাদ করার অপরাধেই মেরে ফেলা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৫৭

ফের গণপ্রহার। ফের মৃত্যু। এবং ঘটনাস্থল সেই এনআরএস।

এ বার মার খেয়ে মৃত্যু হল হাসপাতালেরই কর্মী আবাসনের এক বাসিন্দার। এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তাঁরই প্রতিবেশীরা। প্রত্যক্ষদর্শী এবং মৃতের পরিজনদের দাবি, চুরির প্রতিবাদ করার অপরাধেই মেরে ফেলা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে।

২০১৪ সালের নভেম্বরে এনআরএসের হস্টেলে জুনিয়র চিকিৎসকদের মারে মৃত্যু হয়েছিল প্রতিবন্ধী যুবক কোরপান শাহের। তার এক বছর কাটতে না কাটতেই ফের এই ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শঙ্কর মাঝি (২৬)। এনআরএসের গ্রুপ ডি স্টাফ কোয়ার্টার্সে থাকতেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে খবর, রাত সাড়ে ন’টা-দশটা নাগাদ এনআরএসের ভিতরে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে অল্প কয়েক জন দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাইরে রাস্তার পাশে চাদর বিছিয়ে শুয়ে ছিলেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর পরিজনেরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হঠাৎই গোলমালের শব্দে চমকে উঠে তাঁরা দেখেন, কিছুটা দূরেই এক যুবককে ঘিরে ধরে প্রচণ্ড মারছে কয়েক জন যুবক। মারতে মারতে দেওয়ালে আছড়ে ফেলা হচ্ছে ওই যুবককে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তাক্ত অবস্থায় নেতিয়ে
পড়েন ওই যুবক। তাকে ফেলে চম্পট দেয় বাকিরা।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং পরিবারের লোকেরা জানাচ্ছেন, শঙ্করের ন’মাস বয়সী ছেলে রাজবি অসুস্থ হয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। তার জন্য ওষুধ কিনতে যান তিনি। ওষুধ কিনে পরিচিত এক জনের হাতে দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন শঙ্কর। সেই সময়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন এক মত্ত ব্যক্তি। শঙ্কর দেখেন, তাঁর আবাসনেরই কয়েক জন যুবক ও আরও কয়েক জন বহিরাগত রাস্তায় পড়ে থাকা ওই ব্যক্তির পকেট থেকে টাকা এবং মোবাইল বার করে নিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রতিবাদ করতেই শঙ্করকে ঘিরে ধরে ওই যুবকেরা। প্রথমে তাঁর কাছ থেকেও টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তার পরেই ওই যুবকেরা তাঁকে মারতে শুরু করে বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মার খেতে খেতে শঙ্কর নেতিয়ে পড়লে তাঁকে ফেলেই চম্পট দেয় ওই যুবকেরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন বাড়ির লোকেরা। শঙ্করকে উদ্ধার করে এনআরএসের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এই ঘটনায় শঙ্করের পরিজনেরা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁদের আবাসনের দুই বাসিন্দা পাপ্পু রাম এবং অশোকের দিকে। শঙ্করের বোন সঙ্গীতাদেবীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই পাপ্পু এবং অশোকের নেতৃত্বে আবাসনের কিছু ছেলে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। চুরি-ছিনতাই করে নেশা করাই তাদের প্রধান কাজ। মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে আসা কিছু যুবকও তাদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিত। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, পাপ্পু, অশোক এবং তাদের দলবল মহিলাদের উত্যক্ত করতেও ছাড়ত না। প্রতিবাদ করতে গেলে জুটত মারধরের হুমকি। রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন ওই কর্মী আবাসনের বাসিন্দারা। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি তাঁদের।

শঙ্করের মৃত্যুতে এ দিন শোকের ছায়া নামে গ্রুপ ডি কোয়ার্টার্সের ‘বি’ ব্লকে। ন’মাসের ছেলেকে বুকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন শঙ্করের স্ত্রী সোনি মাঝি। ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা রাজকুমার মাঝি। তিনি এনআরএসের প্রসূতি বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। রাজকুমারবাবু বলেন, ‘‘ছেলেটা চুরির প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়ে গেল! ও যখন মার খাচ্ছিল, অনেকেই তো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল রাস্তায়। কেউ যদি বাধা দিত, তা হলে হয়তো বেঁচে
যেত ছেলেটা।’’

ক্ষুব্ধ প্রতিবেশীদের দাবি, এই ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। তাঁরা বলেন, ‘‘চুরির প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ ভাবে খুন মেনে নেওয়া যায় না। দোষীরা শাস্তি না পেলে কেউ তো আর প্রতিবাদ করারই সাহস পাবে না।’’ পাপ্পু, অশোক, দীপক রাম নামে আর এক ব্যক্তি এবং আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে শঙ্করের পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই পাপ্পু এবং অশোক ফেরার। ডিসি (ইএসডি) দেবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, স্থানীয় গোলমালের জেরেই এই ঘটনা। সবটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তল্লাশিও চলছে।’’

এই ঘটনার নিন্দা করে এনআরএসের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্য জানান, হাসপাতালের মধ্যে এই ধরনের গোলমাল কখনওই বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের অমানবিক মুখটা বড় বেশি করেই সামনে চলে আসছে। ঘটনাটা কোথায় ঘটছে, সেটা বড় কথা নয়। কথা হল, সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কেউ বাধা দেননি। বাধা দিলে হয়তো ছেলেটা বেঁচে যেত। আমরাও পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’’

youth lynch nrs hospital theft shankar majhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy