Advertisement
E-Paper

অগ্নি-বিধির ফস্কা গেরো বহুতলে ঘেরা নবদিগন্তে

আগুন লেগেছিল ছ’তলার ঘরে। সেক্টর ফাইভে আটতলা ওই বাড়িটির বাতানুকূল ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অনেক কিছুই আছে। নেই শুধু হাওয়া চলাচলের অতিরিক্ত পথ (ভেন্টিলেশন সিস্টেম)। ফলে কম্পিউটার থেকে লাগা ছোট আগুনেও ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল গোটা ঘর।

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০০:০১

আগুন লেগেছিল ছ’তলার ঘরে। সেক্টর ফাইভে আটতলা ওই বাড়িটির বাতানুকূল ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অনেক কিছুই আছে। নেই শুধু হাওয়া চলাচলের অতিরিক্ত পথ (ভেন্টিলেশন সিস্টেম)। ফলে কম্পিউটার থেকে লাগা ছোট আগুনেও ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল গোটা ঘর। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চেষ্টা চালিয়েও ঢুকতেই পারেননি দমকলকর্মীরা। পৌঁছনো যায়নি আগুনের উৎসস্থলে। শেষমেশ গোটা অফিসবাড়িটি খালি করে জানলার কাচ ভেঙে ধোঁয়া বার করে দেওয়ার পরে দেখা যায় ওই আগুন নেভাতে স্রেফ একটি অগ্নিনির্বাপকই যথেষ্ট ছিল। বছর দুয়েক আগের এই অভিজ্ঞতার পরে ব্যক্তিগত কাজে ওই বহুতলেই গিয়েছিলেন এক দমকলকর্মী। এবং দেখলেন, দমকল বলার দু’বছর পরেও তৈরি হয়নি হাওয়া চলাচলের বাড়তি পথ।

বিচ্ছিন্ন কোনও উদাহরণ নয়, সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর বা নিউ টাউনের অফিসপাড়ায় এটাই বরাবরের চেনা ছবি। শুক্রবার মুম্বইয়ের একটি বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের পরে তাই ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে সল্টলেক শিল্পতালুকের অগ্নি-নিরাপত্তার বিষয়টি। তবে স্রেফ দুটি এলাকাই নয়, রাজ্যে বিভিন্ন বহুতলের ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আদৌ কতটা কার্যকরী, সে প্রশ্নও উঠে এসেছে।

মহানগরের যে সব বহুতলে কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলিতে বারবারই হাওয়া চলাচলের বাড়তি পথ রাখার কথা বলেছে দমকল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার বালাই নেই। ফলে ছোটখাটো আগুন নেভাতেও হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। দমকল সূত্রের খবর, এ কারণে অনেক বহুতলের ক্ষেত্রে দমকলের চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তবে দমকল কর্তারাই মানছেন, সল্টলেক বা নিউ টাউনের অফিসপাড়ায় সারা বছর সর্বত্র অগ্নিবিধি মানা সুনিশ্চিত করতে যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, সেটাই তাঁদের নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে তবেই তাঁরা পদক্ষেপ করেন।

রাজ্যের গর্বের শিল্পতালুক সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে কমবেশি আড়াইশোটি বাড়ি রয়েছে, যার অধিকাংশই বহুতল। এলাকার সমস্ত বহুতল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য (ফায়ার অডিট) দমকলের হাতে তুলে দিয়েছেন পাঁচ নম্বর সেক্টরের প্রশাসনিক সংস্থা নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ। ওইটুকুই সার। অভিযোগ, সর্বত্র অগ্নিবিধি পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। অগ্নিবিধি আদৌ মানা হচ্ছে কি না, সে ক্ষেত্রে যেমন নজরদারি নেই, তেমন অগ্নিবিধি মানা না হলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হচ্ছে না।

নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতিটি বহুতলে অগ্নিবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা কার্যকর করতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অনেকে নির্দেশ কার্যকর করেছেন। কেউ কেউ করেননি। তবে বাকি অগ্নিবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দমকলই দেখবে।

দমকলের অধিকর্তা গৌরপ্রসাদ ঘোষ বলেন, “অগ্নিবিধি কার্যকর করতে বলা হয়েছে। তবে তা নিয়মিত মানা হচ্ছে কি না, তা দেখা কার্যত অসম্ভব। কারণ তেমন পরিকাঠামোই নেই। তবে কোনও ঘটনায় যদি দেখা যায় অগ্নিবিধি মানা হয়নি, সে ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হবে।”

দমকল সূত্রের খবর, জনসমাগম বেশি হয়, এমন বহুতলগুলিকে বেশি সমস্যাবহুল বলেই মনে করা হয়। কারণ সেগুলিতে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি। নবদিগন্তে এমন বহুতলই বেশি। সেগুলির ক্ষেত্রেই অগ্নিবিধি জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্টেয়ারকেস, নির্দিষ্ট মাপের সিঁড়ি, দু’টি লিফ্ট (যার একটি দমকলকর্মীদের জন্য), ৩টি ফায়ার পাম্প, ফায়ার রেসকিউ জোন, ১৫ তলা বা তার বেশি উঁচু বহুতলের ছাদে ১৫-২০ হাজার লিটার জলের ব্যবস্থা মজুত করা, বুস্টিং পাম্প ইত্যাদি মজুত রাখতে হবে। রাখতে হবে ফায়ার অ্যালার্ম, ম্যানুয়াল কল পয়েন্ট, স্প্রিঙ্কলার সিস্টেমও। পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ভাবে ছাদের দরজা খোলা রাখা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুরো বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার দেখভাল, অগ্নিবিশেষজ্ঞকে সামনে রেখে একটি দল তৈরি রাখা যাঁরা নিয়মিত অগ্নিবিধি মানা হচ্ছে কি না নজরদারি করবেন, বছরে ন্যূনতম এক বার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষার জন্য মহড়া দেওয়ার কাজও করতে হবে।

কিন্তু দমকলকর্তারাই যেখানে মানছেন বছরভর নজরদারির পরিকাঠামো নেই, তা হলে অগ্নিবিধি মানা হচ্ছে কি না দেখবে কে?

নবদিগন্তের চেয়ারম্যান তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “শিল্পতালুকের বহুতল সম্পর্কে সমস্ত তথ্য দমকলকে দেওয়া হয়েছে। এর পরেও কেউ অগ্নিবিধি না মানলে দমকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”

new town nabadiganta kajal gupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy