Advertisement
E-Paper

অগ্নি-সুরক্ষার ছাড়পত্র ছাড়াই চলে বহু দোকান, মানলেন খোদ মেয়র

অগ্নি-সুরক্ষার ছাড়পত্র তো দূর অস্ৎ, রামমোহন রায় সরণির কাঠ-প্লাইউডের দোকানের ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। মঙ্গলবার নিজেই এ কথা জানালেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। শুধু ওই দোকানটাই নয়, এমন বহু দোকান, গুদাম শহরে রয়েছে যা বিনা লাইসেন্সেই বছরের পর বছর চলছে। তা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, “কয়েক লক্ষ দোকান, বিচ্ছিন্ন ভাবে কোথায় লাইসেন্স ছাড়া চলছে, বোঝা শক্ত।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৪

অগ্নি-সুরক্ষার ছাড়পত্র তো দূর অস্ৎ, রামমোহন রায় সরণির কাঠ-প্লাইউডের দোকানের ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না।

মঙ্গলবার নিজেই এ কথা জানালেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। শুধু ওই দোকানটাই নয়, এমন বহু দোকান, গুদাম শহরে রয়েছে যা বিনা লাইসেন্সেই বছরের পর বছর চলছে। তা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, “কয়েক লক্ষ দোকান, বিচ্ছিন্ন ভাবে কোথায় লাইসেন্স ছাড়া চলছে, বোঝা শক্ত।” আর সেই ফাঁকে বৌবাজারের মতো জনবহুল এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে পরিস্থিতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, সোমবার বিকেলেই তা মালুম হয়েছে। ওই দোকানে আগুন লেগে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশেও। যা এতটাই বিধ্বংসী চেহারা নেয়, যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও উদ্বিগ্ন হয়ে মেয়রকেও ঘটনাস্থলে পাঠান। অগ্নি-নির্বাপণ বিধি না মানায় ওই দোকান ও গুদামের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শুধু কাঠ-প্লাইউডের গুদাম নয়, বৌবাজার এলাকায় সোনা-রুপোর দোকান থেকে নানা ধরনের দাহ্য এবং অদাহ্য মালপত্রের দোকান কারখানা রয়েছে। স্বভাবতই, এর মধ্যে কোনও কোনও দোকানে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকলে এমন ঘটনা যে ফের হতে পারে, তা ভাবিয়ে তুলেছে অনেক ব্যবসায়ীকেই। তাঁরা চান, পুরসভা ও দমকল দফতর যৌথ ভাবে প্রতিটি দোকান ঘুরে অভিযান চালাক। না হলে, অন্যের দোকানের আগুন লাগলে তার থেকে রেহাই পাবে না প্রতিবেশি দোকানগুলিও। মেয়র শোভনবাবু বলেন, “লাইসেন্স না থাকাটা বাঞ্ছনীয় নয়। কিছু কিছু দোকানে দমকল দফতরের ছাড়পত্র না থাকায় লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।” তা হলে তাঁরা ব্যবসা করছেন কী ভাবে? মেয়র জানান, দোকানগুলি বহু পুরনো, তাই কবে সে সব জায়গায় ব্যবসা শুরু হয়েছে তা পুরসভার নোটিসে নেই।

মঙ্গলবার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে গিয়ে দেখা গেল, দোকান ও গুদাম ভরা পোড়া-আধপোড়া কাঠের স্তূপ। এ দিন সকালেও ধিকিধিকি করে আগুন জ্বলছিল। তার মধ্যে জল ঢেলে নেভানোর চেষ্টা চলে। বৌবাজার চত্বর যে এক আস্ত জতুগৃহ, সোমবার ১৫০/সি রাজা রামমোহন রায় সরণির অগ্নিকাণ্ড যেন সেই কথাই মনে করিয়ে দিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দোকানটির ঠিক পিছনেই রয়েছে একটি বস্তি। সেখানে প্রায় কয়েকশো মানুষ বসবাস করেন। সোমবারের ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার আগে আরও ছড়িয়ে গেলে যে প্রাণহানিও হতে পারত, সেই আশঙ্কাও করেছেন এলাকার অনেক বাসিন্দাই। তাই মঙ্গলবারও এলাকাবাসীদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। এক দমকলকর্মী বলেন, “জায়গাটা এত ছোট, ভিতর পর্যন্ত আগুন ছড়ালে ইঞ্জিন বা পাইপ পৌঁছতে সমস্যা হত।”

সোমবারের অগ্নিকাণ্ড অবশ্য একটি প্রশ্ন তুলে গিয়েছে। কেমন ছিল ভস্মীভূত ওই অর্ধশত বছরেরও বেশি পুরনো দোকান ও গুদামের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা? পাশাপাশি, আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। রাজা রামমোহন রায় সরণির ওই ভস্মীভূত দোকান থেকে একটু এগিয়েই রয়েছে আরও একটি প্লাইউডের দোকান ও গুদাম। ২০০১ সালে সেখানেও এক বার আগুন লেগেছিল বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। সেই ঘটনার পরে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল? উত্তর দিতে পারেননি দোকান-মালিক কিশোর গুপ্ত।

ওই এলাকায় যে কোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা দমকলকর্তাদের। বৌবাজার মোড় থেকে দু’দিকে এগোলে সার দিয়ে রয়েছে স্বর্ণকারদের দোকান। সেখানে সারাক্ষণ দাহ্য পদার্থ নিয়ে কাজ চলছে। রয়েছে নামী ব্র্যান্ডের সোনার দোকানও। সোমবারের ঘটনার রেশ টেনে জিজ্ঞাসা করা হলে বড়-ছোট দোকানের কর্মীরা জানিয়ে দেন, তাঁদের কাছে অগ্নি-সমরক্ষার ছাড়পত্র রয়েছে। কিন্তু সে কথার উপরে বিশেষ ভরসা করছেন না দমকলকর্মীরা। দমকলের এক অফিসারের কথায়, “সাধারণ ভাবে যা দেখা যায়, অগ্নি-সুরক্ষার ছাড়পত্র থাকলেও তা প্রায় ৮-১০ বছর পুরনো। নবিকরণ করাই হয়নি। এমনও দেখা যায়, দোকানে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও তা বছরের পর বছর পরীক্ষা করাই হয়নি।”

fire security permission mayor sovan chattopadhay sobhon chattopadhay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy