Advertisement
E-Paper

অজিতদার প্রশ্রয়েই থিয়েটারে থেকে যাওয়া

সন্ধ্যা দে

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:৩১

মফস্সলের মেয়ে আমি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ির কাছের কলেজে ভর্তি হয়েছি সবে। স্থানীয় এক নাট্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়ার পর এক শ্রদ্ধাভাজন মানুষ আমাকে নান্দীকারে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই দলে গেলে নাকি আমার প্রতিভার প্রতি সঠিক বিচার করা হবে, এই আশায়। সেই প্রথম আমি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখলাম। পড়াশোনা শেষ করে আমায় দলে যোগ দিতে বললেন। এর পর যে দিন গেলাম, নান্দীকারের ঘরে তখন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেয়া চক্রবর্তী বসে আছেন। অজিতদাকে বললাম, “আমি কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। পড়াশোনাও বন্ধ হবে না। আপনি আমাকে নিন।” শুনে উনি কেয়াদির দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি আদুরি পেয়ে গিয়েছি। পাপপুণ্য করতে আর কোনও বাধা রইল না।” এই ‘পাপপুণ্য’ আমাকে অনেক দিয়েছে। অজিতদার মৃত্যুর পর শম্ভু মিত্রের সঙ্গে এক বার দেখা করতে গিয়েছিলাম। উনি দরজা খুলেই বললেন, “তুমি আদুরি না? এসো ভেতরে এসো।” ওঁর অনুরোধে সে দিন আদুরির সেই বিশেষ ভঙ্গিমায় হাঁটা দেখাতে হয়েছিল আমায়। অজিতদা না থাকলে আমার জীবনে এমন দিন কখনও আসত না।

চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের চিলেকোঠার একটি ছোট ঘরে থেকে দীর্ঘ দিন ধরে থিয়েটার করাটা অজিতদার প্রশ্রয় ছাড়া কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না। ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে আমি নান্দীকারে যোগ দিয়েছিলাম। বাইরে থেকে কিছু না বুঝতে পারলেও পরে বুঝেছি সেটা অদ্ভুত এক ভাঙনের সময়। অজিতদা তখন তাঁর লেখা ‘খড়ির লিখন’-এর গান ও সুরের কাজ করছেন। আমাকে দিয়ে ওই নাটকের ৪২টা গান তুলিয়েছেন তিনি। হারমোনিয়াম বাজাতেন পল্লব মুখোপাধ্যায়। সেই গানের খাতা আজও আমার কাছে রয়েছে। ‘পাপপুণ্য’-এর পর তিনি ‘খড়ির লিখন’ নামাবেন ভেবেছিলেন। যেখানে কেয়াদি করবেন রানির চরিত্র আর আমি গ্রুসা। অন্য দিকে তখন চলছে পাপপুণ্য এবং ফুটবল-এর মহড়া। সারা বিশ্বের বিভিন্ন নাট্যকারের জীবনী ছোট ছোট নোটের মতো করে আমাকে দিতেন পড়ার জন্য। বলতেন, পড়ার কোনও বিকল্প নেই। এর মধ্যেই ৭৭-এ কেয়াদি মারা গেলেন। তাঁর স্মরণে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ আমরা পাপপুণ্য-এর পাঠাভিনয় করলাম। কেয়াদির জায়গায় পাঠ করলেন কাজল চৌধুরী। অজিতদাও পাঠ করলেন। এর পর পরই অজিতদা নান্দীকার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন।

আমিও তাঁর সঙ্গে নতুন দল ‘নান্দীমুখ’-এ গেলাম। সেখানে নতুন ভাবে ‘পাপপুণ্য’ করলেন তিনি। সম্পূর্ণ নতুনদের নিয়ে সে প্রযোজনা এক কথায় অসামান্য ছিল। থিয়েটার করতে এসে যত মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি তার মধ্যে অজিতদা অন্যতম। তাঁর মৃত্যুর খবর আমাকে দিয়েছিলেন জগন্নাথ বসু। অষ্টমী পুজোর সকালে খবর পেয়েই আমি কলকাতায় চলে আসি। অনেক রাতে ফিরেছিলাম হাবরার বাড়িতে। অজিতদার অনুপস্থিতিতে ‘নান্দীমুখ’-এর অস্তিত্ব ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু অজিতদা চলে গেলেও থিয়েটারের বন্ধুর পথে আমার পথচলা এখনও শেষ হয়নি। অজিতেশ যে নান্দীকার তৈরি করেছিলেন, যে দলে থেকে তিনি তাবড় তাবড় নাটক প্রযোজনা করলেন, সেই মানুষটার নাট্য সমগ্র প্রকাশ করতে হল এই মফস্সলের মেয়েকে, তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৩০ বছর পর! এটাই দুঃখের। নান্দীকার এ বিষয়ে আমাকে কোনও সাহায্যই করেনি। অথচ অজিতেশকে মিথ ভেবে আমাদের থিয়েটার গর্বিত হয়।

ujjwal chakrabarty ajitesh bandyopadhay sandhya dey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy