এত দিন অটোচালকদের হাতে মার খাচ্ছিলেন যাত্রীরা। এ বার খোদ পুলিশের গায়েই হাত তোলার অভিযোগ উঠল অটোচালকদের বিরুদ্ধে। শুধু মারধরই নয়, অভিযোগ, রান্না করা খাবারও পুলিশের উর্দিতে ঢেলে দিয়েছেন অটোচালকেরা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এন্টালি এবং ট্যাংরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রহৃত পুলিশকর্মীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশি অভিযানের মধ্যেই দু’-দু’বার পুলিশের উপরে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে ট্যাংরার ডি সি দে রোডের পিলখানা এবং পামারবাজার এলাকায়। রাত পর্যন্ত অবশ্য অভিযুক্ত অটোচালকদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। লালবাজারের কর্তাদের দাবি, শহরে অটোর বিরুদ্ধে অভিযান বানচাল করতেই এ দিন পরিকল্পনা-মঙ্গলবার হামলা চালানো হয়েছে পুলিশকর্মীদের উপরে। তবে বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে অভিযান এর পরে কোনও মতেই বন্ধ হবে না বলে পুলিশকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দিলীপ আদক বলেন, “অভিযুক্ত অটোচালকদের বিরুদ্ধে থানায় পুলিশকর্মীদের মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”
গত দশ দিনে তারাতলা, নিউ আলিপুর ও কড়েয়ায় অটোচালকদের হাতে বারংবার আক্রান্ত হতে হয়েছে যাত্রীদের। তাঁদের মধ্যে দু’জন মহিলা যাত্রীও ছিলেন। অটোর দৌরাত্ম্য কমাতে সোমবার থেকেই অভিযানে নেমেছে কলকাতা পুলিশ। নিয়ম না মানার জন্য প্রথম দিনেই প্রায় হাজার জন অটোচালকের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অটোর যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক না থাকায় আটকও করা হয় ৭৬টি অটোকে। অটোর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান মঙ্গলবারও চালানো হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন অবশ্য শহরে নিয়ম না মেনে অটো চালানোর জন্য বিকেল পর্যন্ত পুলিশ প্রায় তিনশোটি অটোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আটক করা হয়েছে ২৪টি অটো। অভিযানের নামে পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে, এই অভিযোগ তুলে এ দিন সকালে আচমকাই পরিষেবা বন্ধ করে দেন গড়িয়া-গোলপার্ক রুটের অটোচালকদের একাংশ। পরে অবশ্য পুলিশি হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল ডি সি দে রোড এলাকায়?
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ পিলখানার কাছে অটোর কাগজপত্র পরীক্ষা করছিলেন বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট রাকেশ চৌবে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের অতিরিক্ত ওসি এবং হোমগার্ড অর্জুন ঘোষ। অটোর কাগজ পরীক্ষার সময়ে ওই অফিসার দেখতে পান শিয়ালদহ-ধাপা রুটের তিনটি অটো পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে ধাপার দিকে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশকর্মীরা ওই অটোগুলিকে আটকান। নিয়ম ভাঙার জন্য তাঁদের জরিমানাও করা হয়।
পুুলিশ জানায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই বহু অটোচালক এবং মালিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশকর্মীদের কাছে জানতে চান, কেন ধাপা-শিয়ালদহ রুটের অটোয় ‘কেস’ দেওয়া হচ্ছে? তাঁদের দাবি, কোনও ভাবেই ওই অটোর বিরুদ্ধে ‘কেস’ দেওয়া যাবে না। এর মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে অটোচালক ও মালিকেরা বচসা এবং ধস্তাধস্তি শুরু করে দেন।
পুলিশকর্মীদের বক্তব্য, ওই সময়ে ঘটনাস্থলে জনা চারেক পুলিশকর্মী ছিলেন। পরিস্থিতি বুঝে পিছু হটতে থাকেন তাঁরা। পামারবাজারের দিকে চলে যাওয়ার সময়ে ওই পুলিশকর্মীদের মোটরবাইক আটকান উত্তেজিত চালক-মালিকদের একাংশ। পুলিশের দাবি, বাইকের পিছনে বসে থাকা হোমগার্ড অর্জুন ঘোষের মাথায় এক জন তাঁর হেলমেট দিয়ে আঘাত করেন। পরে ওই সার্জেন্টকেও লাঠি দিয়ে মারেন ওই অটোচালকেরা। পরে স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রহৃত পুলিশকর্মীদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মারধর করা হয়েছে ওই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের আরও পুলিশকর্মীরা। পুলিশকে দেখে পামারবাজারে পথ অবরোধ করেন ওই অটোচালক-মালিকদের একাংশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই অবরোধে অটোচালকদের পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ যোগ দেন। এখানেই ফের গোলমাল শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ, ওই সময়ে রাস্তার পাশে রাখা রান্না করা খাবারও ঢেলে দেওয়া হয় এক সার্জেন্টের উর্দিতে। পরে এন্টালি এবং ট্যাংরা থানার পুলিশ বাহিনী গিয়ে আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের উদ্ধার করেন।
পুলিশ অভিযানের বিরুদ্ধে একই রকম বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল পাটুলিতেও। সেখানে গড়িয়া-গোলপার্ক রুটের অটোচালকেরা পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে রাস্তা থেকে অটো তুলে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। তবে সেখানে পুলিশের কড়া মনোভাব দেখে অটোচালকদের বিক্ষোভ আর সে ভাবে দানা বাঁধেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy