Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আরও থমথমে দমদম, ফের সংঘর্ষের আশঙ্কা

সিন্ডিকেট-সংঘর্ষের পর সময় যত এগোচ্ছে, দমদমে পরিস্থিতি তত থমথমে হচ্ছে। ঘটনায় আহত সোমনাথ সাধুখাঁর শারীরিক অবস্থা শুক্রবার আরও অবনতি হয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাঁকে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। এ দিন সেই খবর পৌঁছতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

ইএফআরের টহল। শুক্রবার দমদমে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

ইএফআরের টহল। শুক্রবার দমদমে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

সিন্ডিকেট-সংঘর্ষের পর সময় যত এগোচ্ছে, দমদমে পরিস্থিতি তত থমথমে হচ্ছে। ঘটনায় আহত সোমনাথ সাধুখাঁর শারীরিক অবস্থা শুক্রবার আরও অবনতি হয়েছে। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাঁকে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। এ দিন সেই খবর পৌঁছতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তার জেরে অলিগলিতে টহল দিতে শুরু করে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। দেখা গিয়েছে ইএফআর-কেও। ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশের একটি অস্থায়ী শিবিরও তৈরি করা হয়েছে। এ দিন বেলা যত গড়িয়েছে, এলাকার অধিকাংশ দোকানপাটই বন্ধ থেকেছে। পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার তৃণমূলের কর্মীরাও।

বাসিন্দাদের আশঙ্কা, বাঁশ-লাঠি-পাথর দিয়ে সোমনাথকে থেঁতলে মারার বদলা নিতে চেষ্টা করবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা। নাম জানাতে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “এ বার হয়তো দু’পক্ষের লড়াইটা সামনা-সামনি শুরু হবে। ভরসন্ধ্যাতেই বোমাবাজি হবে, গুলি চলবে। আমরা সাধারণ মানুষ এখন সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের মাঝে পড়ে গেলাম।”

পুলিশের অবশ্য দাবি, পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এডিসি সুরেশ চ্যাটভি বলেন, “বুধবারের ঘটনায় এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নাম ভোলা প্রামাণিক, শিবু সরকার ও সঞ্জীব মণ্ডল। প্রয়োজনে পুলিশ ক্যাম্প আরও কয়েক দিন রাখা হবে।”

পুলিশ কর্তার দাবি যাই হোক, সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে আগামী দিনে যে আরও কিছু ঘটতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছে এ দিনের একটি ঘটনা। পুলিশেরই একটি সূত্রে খবর, এ দিন সকালে সোমনাথদের বিরোধী গোষ্ঠীর এক জনকে পাড়ার চায়ের দোকানে দেখা যায়। খবর ছড়াতেই সোমনাথের ঘনিষ্ঠরা ওই দোকানে যায়। দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট হয়। এলাকায় পুলিশ টহল থাকায় জল বেশি দূর গড়ায়নি। তবে প্রকাশ্যেই একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।

এই হুমকি-শাসানি যে ভবিষ্যতে বাড়তে পারে, এলাকার তৃণমূলের একাংশও সেই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে। এদের অনেকেই সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। স্বভাবতই বাড়ি তৈরির ইট-বালি-সিমেন্টের বরাত পেতে সকলে মরিয়া। এদেরই এক জন নিজেকে স্থানীয় পুরসভার তৃণমূল বোর্ডের চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল প্রবীর পাল (কেটি নামে বেশি পরিচিত)-এর অনুগামী বলে দাবি করে বলেন, “এখানে কাজের চেয়ে সিন্ডিকেটের সংখ্যা বেশি। ফলে কাজ পেতে একই নেতার অনুগামীরা একে অপরের সঙ্গে মারপিটে জড়িয়ে পড়ছে।”

সোমনাথের স্ত্রী কৃষ্ণা বলেন, “ও তো তৃণমূল পার্টি করে। যারা ওকে মেরেছে তারা একই পার্টির লোক। এখন ওরা তো সব ভাগ ভাগ হয়ে গিয়েছে।” যাঁর ছায়ায় সিন্ডিকেটের প্রায় সব গোষ্ঠী কাজ করে চলেছে, সেই প্রবীর পাল অবশ্য এ দিনও দাবি করেন, “দমদম মধুগড়ে কোনও সিন্ডিকেট নেই। আমি কোনও সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত নই। আমার কোনও অনুগামীও সিন্ডিকেটে যুক্ত নয়। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” বুধবারের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর সাফাই, “এলাকার দু’দল যুবকদের পিকনিককে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা। ওরা মদ্যপ অবস্থায় মারপিটে জড়িয়ে পড়ে।”

শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও দমদমে সিন্ডিকেট নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “সবটাই সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি। সংবাদমাধ্যমই দুষ্কৃতী এনে গোলমাল করাচ্ছে।” সিন্ডিকেটের গোলমাল সম্বন্ধে মন্ত্রীর মন্তব্য, “অত বড় ব্যাপারই নয়। তা ছাড়া, আমার দল তো কাউকে রেয়াত করছে না!” কিন্তু ঘটনাগুলিতে যে বারবার তৃণমূলের নাম জড়িয়ে পড়ছে? মদনবাবু বলেন, “দেখা যাক না, কী বেরোয়! নাম তো সিপিএম-এর লোকেদের বেরোচ্ছে।”

দমদম রোড দিয়ে হাঁটলে অবশ্য অন্য কথা কানে ভেসে আসছে। বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে বিরোধীদের এক ডজন গোল দিয়ে তল্লাটে এখন একটাই নাম তৃণমূল। সেই দলে নাম লেখানো এক জন আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেন, “পরিস্থিতি এখন দাদা (প্রবীর পাল)-র হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।”

‘দাদা’র রাশ আলগা হওয়ার কারণেই সোমনাথের এই অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর স্ত্রীও। ঘন ঘন স্বামীর খবর নিচ্ছেন ফোনে। মধুগড়ের একটি বহুতলের একতলায় তাঁর ফ্ল্যাট। সোমনাথের বাবা সিএসটিসি-তে কাজ করতেন। অবসর নেওয়ার পরে তিনিই ওই ফ্ল্যাট কেনেন বলে কৃষ্ণা জানান। সোমনাথের আর এক ভাই বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমনাথ বছর পাঁচেক আগে গাড়ি চালানোর কাজ করতেন। পরে একটি মারুতি ভ্যান কিনে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেত। ২০১২ সালের পরে তিনি ওই মারুতি ভ্যান বিক্রি করে সেই টাকা সিন্ডিকেটের ব্যবসায় লাগান। তখন থেকে সে সক্রিয় ভাবে তৃণমূল কর্মীও। তবে পুঁজি বেশি না থাকায় ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dumdum syndicate case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE