Advertisement
১৮ মে ২০২৪

একবালপুর-কাণ্ডে তদন্তের নির্দেশ ওসি-র বিরুদ্ধেই

একবালপুরে মা ও দুই মেয়েকে খুনের ঘটনায় অভিযোগকারীদের সঙ্গে কোনও রকমের দুর্ব্যবহার বা অসহযোগিতা করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একবালপুর থানার ওসি-র বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলেন ডিসি (বন্দর) ভি সলোমন নিশাকুমার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ধৃত চার জন ছাড়া আর কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, একবালপুর থানার পুলিশ অফিসার ও কর্মীরা অভিযোগকারীদের সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতা করেছিলেন কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

একবালপুরে মা ও দুই মেয়েকে খুনের ঘটনায় অভিযোগকারীদের সঙ্গে কোনও রকমের দুর্ব্যবহার বা অসহযোগিতা করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একবালপুর থানার ওসি-র বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলেন ডিসি (বন্দর) ভি সলোমন নিশাকুমার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ধৃত চার জন ছাড়া আর কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, একবালপুর থানার পুলিশ অফিসার ও কর্মীরা অভিযোগকারীদের সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতা করেছিলেন কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে।

মঙ্গলবার পুষ্পাদেবীর পরিবারের পক্ষ থেকে ডিসি-র (বন্দর) কাছে একবালপুর থানার ওসি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগে থানার পুলিশকর্মীদের দুর্ব্যবহার-সহ অসহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, ধৃত চার জন ছাড়াও এই খুনের পিছনে কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তিও জড়িত। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে ডিসি বন্দর বলেন, “এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

পুষ্পাদেবীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ দিন অভিযোগ করা হয়, এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপের জন্য একবালপুর থানা তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের কিনারা করতে অসহযোগিতা করেছে। পাশাপাশি, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মহম্মদ সিকন্দরকে আড়াল করার চেষ্টাও করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এ-ও অভিযোগ করা হয়, তদন্তের সময়ে যখন সিকন্দরকে একবালপুর থানায় ডেকে পাঠানো হত, তখনই অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আসতেন এবং সিকন্দরকে কেন বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করে বিরক্ত করা হচ্ছে, তা নিয়ে পুলিশকর্তাদের কাছে প্রশ্ন তুলতেন।

মঙ্গলবার হাওড়ার সালকিয়ায় ক্ষেত্র মিত্র লেনে নিজেদের বাড়িতে বসে পুষ্পাদেবীর ভাসুর প্রবীণ সিংহ একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির অবাধ গতিবিধি রয়েছে ওই থানায়। যত বারই পুলিশ সিকন্দরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে, তত বারই তিনি সঙ্গে এসেছেন। তাঁর এতটাই ক্ষমতা যে সিকন্দরকে বারবার ডাকার জন্য থানায় গিয়ে আমার সামনেই দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের ধমকেছেন।”

প্রবীণবাবু জানান, গত ১ এপ্রিল পুষ্পাদেবীর বাবা পরেশনাথ সিংহ তাঁকে প্রথম ফোন করে জানান, পুষ্পা ও তাঁর দুই মেয়ে নিখোঁজ। এর পর থেকেই তিনি এবং পরেশনাথবাবু সব সময়ে তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। পরেশনাথবাবুর অভিযোগ, ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির মন রাখতেই থানায় তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রথম দিকে এই ভয়াবহ অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছিল। বিষয়টি কলকাতা পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের নজরে আনার পরেই পুলিশি মহলে নড়াচড়া শুরু হয়। পুলিশের বন্দর বিভাগের বিশেষ বাহিনী তিন দিনে নিখোঁজ-রহস্যের কিনারা করে ফেলে।”

পুষ্পাদেবীর শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, ঘটনাটিতে প্রথম থেকে কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি মাথা গলানোয় নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দু’সপ্তাহ পরেও তদন্ত ঠিক মতো এগোয়নি। এ জন্য ডিসি-র (বন্দরের) কাছে এ দিন অভিযোগও দায়ের হয়।

পুষ্পাদেবীর শ্বশুরবাড়ি থেকে জানা গিয়েছে, পুষ্পাদেবীর স্বামী প্রদীপ সিংহ বাড়ির ছোট ছেলে। তিনি ভদ্রকের একটি বহুজাতিক পেট্রোলিয়াম সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বৃদ্ধা মা দুর্গাবতীদেবী বড় ছেলে প্রবীণবাবুর সঙ্গে হাওড়াতেই থাকেন। বিয়ের পরে প্রদীপ সপরিবার ওড়িশার জাজপুরে বসবাস করতেন। সেখানকার স্কুলেই দুই মেয়ে প্রদীপ্তি ও আরাধনা পড়াশোনা করত। কিন্তু গত ২০১০ সালের ২ জুন প্রদীপবাবু অফিস থেকে জাজপুরে আসার সময়ে ট্রেন থেকে পড়ে মারা যান। তার পরে তাঁর স্ত্রী পুষ্পা ও দুই মেয়েকে হাওড়ার বাড়িতে নিয়ে আসেন প্রবীণবাবু। মেয়েদের ফোর্ট উইলিয়াম স্কুলে ভর্তি করেন। ইতিমধ্যে প্রদীপের সংস্থা ক্ষতিপূরণের টাকা দিলে মেয়েদের নিয়ে একবালপুরের ফ্ল্যাটে চলে যান পুষ্পা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ekbalpur sikander aradhana mudder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE