Advertisement
E-Paper

কান ঢাকা মোবাইলে, পৌঁছয় না সতর্ক-বার্তা

কাজটা যে ঠিক হচ্ছে না, বুঝছেন কেউ কেউ। হাতেনাতে ধরা পড়লে ভুল স্বীকার করছেন। কেউ আবার একরোখা। পাল্টা শুনিয়ে দিচ্ছেন, নিজের চরকায় তেল দিন গে! শুক্রবার, শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মোড়ে কানে মোবাইল বা হেডফোন গুঁজে রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত পথচারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হল আনন্দবাজারের প্রতিনিধিদের।

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৪

কাজটা যে ঠিক হচ্ছে না, বুঝছেন কেউ কেউ। হাতেনাতে ধরা পড়লে ভুল স্বীকার করছেন। কেউ আবার একরোখা। পাল্টা শুনিয়ে দিচ্ছেন, নিজের চরকায় তেল দিন গে! শুক্রবার, শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মোড়ে কানে মোবাইল বা হেডফোন গুঁজে রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত পথচারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হল আনন্দবাজারের প্রতিনিধিদের।

ঠিক এক দিন আগে বৃহস্পতিবার, ডানলপে কানে ইয়ারফোন গোঁজা অবস্থায় রাস্তা পেরোতে গিয়ে বেপরোয়া বাসের নীচে পিষে যায় দশম শ্রেণির ছাত্র এক কিশোর। এ দিনের ছবিটা বুঝিয়ে দিল, পুলিশ-প্রশাসন বা পথচারী, দুর্ঘটনার পরেও কলকাতা আছে কলকাতাতেই।

দুপুর ১টা, উল্টোডাঙা: হাডকো মোড়ের দিক থেকে রাস্তা পেরোনোর সময়ে যুবকের কানে মোবাইল ফোন। তিনি যখন মাঝরাস্তায়, সিগন্যাল সবুজ হয়ে উঠল। তাতেও সম্বিৎ নেই। উল্টো দিক থেকে আগুয়ান যানবাহনের নিঃশ্বাস ঘাড়ের কাছে নিয়েই দিব্যি ফুটপাথে পৌঁছলেন তিনি।

খেয়াল করেছিলেন, কী বিপদ ঘটতে পারত? জবাব, বাড়ির জরুরি ফোন ছিল। বাচ্চার কান্না থামাচ্ছিলাম। জানা গেল, ওই যুবকের নাম সুশীল কর্মকার। গ্রিন পুলিশে কাজ করেন। কিন্তু পুলিশে কাজ করেও সচেতনতার এই হাল! এ বার একটু অপ্রস্তুত হাসি, “টেনশনে ভুল করে ফেলেছি!”

দুপুর ২টো, শ্যামবাজার মোড়: মোবাইল কানে পথচারীদের খোশগল্প পুরোদমে বহাল। হাতিবাগানের দিক থেকে আসা এক মহিলাকে থামাতে তিনি বললেন, ছেলে স্কুল থেকে ফিরল কি না, খবর নেব না!

দুপুর আড়াইটে, হাজরা মোড়: বালিগঞ্জের দিকে হনহনিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে তরুণীর কানে সারা ক্ষণের সঙ্গী মোবাইল। এ ভাবে রাস্তা পার হওয়ার বিপদ নিয়ে কোনও কথা অবশ্য তিনি শুনতে চাইলেন না। ঝাঁঝিয়ে উঠে উত্তর: “এই সব নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না।”

বিকেল ৩টে, কাঁকুড়গাছি: কানে মোবাইল, হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল। এগিয়ে আসছে এক কিশোর। বুঝতে পারছ না, কী বিপদ ঘটতে পারে? শুনে জিভ কাটল ছেলেটি। বলল, “টিউশনে যাচ্ছি। স্যার কাছেই রাস্তায় অপেক্ষা করছেন। ওঁর সঙ্গেই কথা বলছিলাম।”

বিকেল সাড়ে ৩টে, গড়িয়াহাট মোড়: ব্যস্ত রাজপথেও মোবাইল নিয়ে কথা বলার বিরাম নেই। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনেই চলছে দুঃসাহসী পারাপার। স্মার্টফোন হাতে গভীর মনোযোগের সঙ্গে টাচস্ক্রিন ঘাঁটতে ঘাঁটতে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক তরুণী। তাঁর ঠিক পিছনেই এক যুবক ফোনে কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে চলেছেন। তাঁদের দিকে দেখেও দেখলেন না ট্রাফিক পুলিশের কর্মী? কিছু বললেন না যে? পুলিশকর্মীর জবাব, ‘ক’জনকে বলব বলুন তো? এ ভাবেই তো চলে সকলে।’

বিকেল সাড়ে ৫টা, ধর্মতলার মোড়: মেট্রো সিনেমার উল্টো দিকের ফুটপাথে বড় হরফে লেখা, মোবাইল ফোন কানে কথা বললে জরিমানা হবে। লেনিন সরণির দিক থেকে মোবাইলে কথা বলতে বলতেই দু’টো বাসকে ডজ করে সে-দিকে এগিয়ে গেলেন কালো ফোলিওব্যাগধারী মাঝবয়সী লোকটি। তখনই ডোরিনা ক্রসিংয়ের দিক থেকে এলেন বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটমুখী এক প্রৌঢ়। রাস্তা পেরোনোর সময়ে মোবাইলের ওপারে কাকে যেন তারস্বরে হিন্দিতে বকছেন, ‘আপ কাহে চুপ হ্যায়!’

ঝগড়াটা পরে করলে চলত না? সাহস করে তাঁকে কথাটা বলতেই ফের খ্যাঁকানি, “আপনার কী! নিজের কাজ করুন।” চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিক থেকে আসা তরুণীও ফোনে কথা বলতে বলতেই গাড়ির পর গাড়ি পাশ কাটিয়ে আসছিলেন। কথার মাঝে অপরিচিত লোকের বাগড়ায় কিছুটা বিরক্ত। তবে মোবাইল-প্রসঙ্গ শুনে কথা বাড়ালেন না। ইংরেজিতে বললেন, “মাই মিস্টেক! আর এমন হবে না।”

হেডকোয়ার্টার্স গার্ডের এক সার্জেন্ট জানান, মোবাইল কানে পথচারীদের মাঝেমধ্যে ১০-২০ টাকা জরিমানা হয়। কিন্তু ফাইনের বইয়ে আর পাতা নেই। নতুন বই আসা ইস্তক জরিমানা বন্ধ।

লালবাজার উবাচ: ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইলে কথা বলা বা গান শোনা রুখতে আইন থাকলেও, পথচারীদের জন্য আইন নেই।” তবে পথচারীদের মোবাইল-আসক্তি যে বড় বিপদ, মানছেন তিনি। কিছু দিন আগে পুলিশ প্রচার করেছিল, ‘এক পলকের একটু কথা/ আরও একটু পরে হলে ক্ষতি কী!’ তা কাজে আসেনি। পুলিশ মাঝেমধ্যে যৎসামান্য জরিমানাও করে। কিন্তু ট্রাফিক গার্ডের এক ওসি-রই অভিজ্ঞতা, “জরিমানা করতে গিয়ে এমনও শুনেছি, ৫০-১০০ যা পারেন, নিন! তার থেকে ঢের দামি কাজের কথা বলছি। ডিসটার্ব করবেন না!”

(প্রতিবেদক: ঋজু বসু, আর্যভট্ট খান ও দেবাশিস দাস। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী ও স্বাতী চক্রবর্তী)

mobile accident wtih mobile
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy