Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০

নাট্যোত্‌সবে বর্ষ বিদায় ও বরণ

খালেদদা আমার সঙ্গে কাজ করেছিলেন দর্পণে শরত্‌শশী-তে। বহুকালের পরিচয় আমাদের। ওঁর প্রতিভা বহুমুখী। মঞ্চচিত্রণ ছাড়াও ছবি আঁকতেন, কত রকম মলাট করেছেন, অলংকরণ। সর্বোপরি সঙ্গীতবেত্তা, সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তুলে আনতেন লোকায়ত সঙ্গীত। চমত্‌কার মানুষ।’ মুগ্ধ মন্তব্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (ডান দিকে দু’জনে একসঙ্গে)। খালেদ চৌধুরীর (১৯১৯-২০১৪) জন্ম এই ডিসেম্বরেই। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে নিরঞ্জন সদনে পয়লা জানুয়ারি শুরু হচ্ছে তাঁর শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। বিকেল ৫টায় উদ্বোধন করবেন যোগেন চৌধুরী। একই সঙ্গে সে দিন ওখানে শুরু হচ্ছে কমেডি নাট্যোত্‌সব। দুটিই শ্যামবাজার মুখোমুখি-র উদ্যোগে, ১৬ জানুয়ারি অবধি। নাট্যোত্‌সবের উদ্বোধন করবেন সৌমিত্র, তাঁর অভিনয় আর পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের ভাবনা ও প্রয়োগে সে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে ‘কালমৃগয়া’। অন্য দিকে ৩১ ডিসেম্বর বর্ষ বিদায় ও বরণের উদ্যোগে অন্য থিয়েটার-এর ‘নাট্যস্বপ্নকল্প’।

অনুষ্ঠানের শুরু অ্যাকাডেমিতে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। ‘শেকসপিয়ারের নাটকের ভাষান্তর’ নিয়ে বলবেন কবি ও নাটককার সৈয়দ শামসুল হক। অশোক মুখোপাধ্যায়কে সম্মান জানাবে অন্য থিয়েটার, জ্ঞাপন করবেন ব্রাত্য বসু। গাইবেন মনোজ ও মনীষা নায়ার। রবীন্দ্রসদনে রাত ১০টা থেকে সারারাতব্যাপী বাংলা সাহিত্যাশ্রয়ী নাট্যোত্‌সব। ‘শিকড় খোঁজার চেষ্টা। আমাদের প্রজন্মে মৌলিক নাটকের পাশাপাশি পৃথিবীর প্রতিভাবান নাট্যকারদের রূপান্তরিত নাটক মঞ্চস্থ করতাম। পরবর্তী প্রজন্ম কিন্তু বাংলা সাহিত্যের বিপুল সম্ভার থেকে নাটক মঞ্চস্থ করছে। এই চেষ্টাটাকে বেশ কিছু বছর ধরেই উত্‌সাহিত করার চেষ্টা করছি। এ বারেও করেছি।’ জানালেন অন্য থিয়েটার-এর কর্ণধার বিভাস চক্রবর্তী। ত্রৈলোক্যনাথ, সুকুমার রায় (বাঁ দিকে ‘পাগলা দাশু’-র মহড়ার ছবি), আশাপূর্ণা, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের রচনা থেকে নাটক।

নিজ হাতে

বাবা আলাউদ্দিন খান তখন অসুস্থ, অস্ত্রোপচার হয়েছে, আছেন আলি আকবর খান সাহেবের বাড়িতে— রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, ১৯৫৭। বাড়ির নীচেই দুর্গাপুজো হচ্ছে, ঢাকিরা ঢাক বাজাচ্ছে। হঠাত্‌ এক ঢাকির বেতালা বাজানো শুনে ওই অসুস্থ শরীরেই নেমে এলেন, ঢাক কেড়ে নিয়ে নিজেই বাজাতে শুরু করলেন। ওখানেই গৃহবন্দি থাকার সময় লিখতে শুরু করেন নিজের জীবনের কথা। সরোদশিল্পী অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় আমার জিবনী (মূল বানান অপরিবর্তিত) প্রকাশ পাচ্ছে থীমা থেকে। বইটি প্রকাশ করবেন আশিস খান, ৪ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায়, থীমা-য়। এ বইয়ের ভূমিকা অন্নপূর্ণা দেবীর, আশিস খান লিখেছেন ‘দাদুর কথা’, আর অনিন্দ্য ‘গোড়ার কথা’। সঙ্গে বাবা আলাউদ্দিনের দুর্লভ সব ছবি, চিঠিপত্র, গান সংকলন, রাগরাগিণী, উপাধি, বংশলতিকা। আছে তথ্যসূত্র, বইপত্র ও তথ্যচিত্রের তালিকাও।

বারোমাস

বড়দিনে বেরল বারোমাস (সম্পা: অশোক সেন)। মননশীল বাঙালির ছত্রিশ বছরের সঙ্গী এ-পত্রের শুরুতেই শম্ভু মিত্র বিজন ভট্টাচার্যকে নিয়ে ‘শতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য’ স্বয়ং সম্পাদকের। দিনলিপি থেকে বিভূতিভূষণের দর্শন-অনুসন্ধান রণজিত্‌ গুহের প্রবন্ধে। দীপেশ চক্রবর্তীর প্রবন্ধ ‘মানুষের যুগ: অ্যানথ্রোপোসিন’, সুধীর চক্রবর্তীর আখ্যান ‘কৃষ্ণকলির জবানী’, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘হুতোমের কলিকাতা দর্শন’। রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ আর ‘শ্যামা’ নিয়ে অমিয় দেব আর শেফালী মৈত্রের নতুন ভাবনার সঙ্গে কবির স্বদেশ ভাবনা নিয়ে সেমন্তী ঘোষের রচনা। যোজনা, বাজার, কৃষি-অর্থনীতি নিয়ে তন্নিষ্ঠ বিশ্লেষণ মৈত্রীশ ঘটক অমিতাভ গুপ্ত সন্তোষ রাণার। সমাজ-সংকটের নানা দিক কুমার রাণা পরিমল ভট্টাচার্য স্বাতী ভট্টাচার্যের কলমে। স্থবির দাশগুপ্তের বিষয় ‘বিকল্প স্বাস্থ্য পরিষেবার সন্ধানে’। বিবেকানন্দ, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীকে নিয়ে বিশ্বজিত্‌ রায় সৌরীন ভট্টাচার্য আশীষ লাহিড়ীর লেখা। বাংলাদেশ নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের সাক্ষাত্‌কার। শ্যামলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দান্তের সমাধিতীর্থে’-র সঙ্গে মণীন্দ্র গুপ্তের রচনা ‘কাঠের নৌকো, পাতার নৌকো’।

ওগো বিদেশিনী

রবীন্দ্রনাথ ৭ নভেম্বর ১৯২৪-এ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে পৌঁছলে অজস্র নরনারী তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে প্লাজা হোটেলে আসেন, কিন্তু কবি অসুস্থ থাকায় সকলকেই ফিরে যেতে হয়। ফিরতে হয়নি শুধু ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে। অভিভূত ওকাম্পোর প্রথম সাক্ষাতের বিবরণ শঙ্খ ঘোষের অনুবাদে, ‘আমার এত আকুলতার যিনি কারণ, এই অস্বস্তিজনক প্রতীক্ষার দ্রুত অবসান ঘটালেন তিনি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘরে এলেন; নীরব, সুদূর, তুলনাহীন বিনীত।’ গত নভেম্বরে এই প্রথম সাক্ষাতের নব্বই বছর পূর্ণ হয়েছে। তারই স্মরণে ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় নিউটাউনের রবীন্দ্রতীর্থে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ওগো বিদেশিনী’। রবীন্দ্রগানে শিল্পী আনন্দ গুপ্ত। সংগীত ও নৃত্যে প্রবাসী শিল্পী শ্রেয়সী চক্রবর্তী, চন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায়, জয়দীপ সিংহ, সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেঁজুতি দাস প্রমুখ। ভাষ্যপাঠে সুবীর মিত্র ও অনিন্দিতা কাজী।

সংগীতসভা

১৯৩৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে ‘অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স’-এর প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রনাথ। বহু কিংবদন্তি শিল্পীর সমাবেশ ঘটেছে এর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর কয়েক বছর আবার বসছে মনোজ্ঞ এই সংগীতসভা। পাথুরিয়াঘাটার খেলাত্‌ ভবনে ২ জানুয়ারি থেকে শুরু। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী সহ প্রথম তিন দিনে রয়েছেন আই টি সি সংগীত রিসার্চ আকাদেমির বিশিষ্ট শিল্পীরা। শেষদিন, ৫ তারিখে সেতারবাদনে ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী, সরোদে পার্থসারথি এবং গানে পণ্ডিত উল্হাস্ কোশলকর। অন্য দিকে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, দুই গায়ক-কবির বন্ধুতাকে ধরতে চেয়েছেন কাজী অনিন্দিতা ও সুদেষ্ণা বসু। রবীন্দ্রনাথকে লেখা নজরুলের অপ্রকাশিত চিঠি পড়বেন অনিন্দিতা, আর সুদেষ্ণার কণ্ঠে নজরুলের প্রিয় রবীন্দ্রগান। সঙ্গতে সৌম্য চক্রবর্তীর সরোদ। ৩০ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ছটায় বালিগঞ্জের উইভার্স স্টুডিয়োয়।

শুভম্

মহিম আর প্রতুল স্কুলের জামরুল গাছের তলায় বসে ঠিক করেছিল বহু বছর পর তারা দেখা করবে নিউ এম্পায়ার সিনেমা হলের সামনে, দেখা হয়েছিল কি?— সত্যজিত্‌ রায়ের ‘দুই বন্ধু’ গল্প নিয়ে নাটক ত্রয়োদশ শুভম্ নাট্যমেলায়। এ বার শীতেও ছোটদের নিয়ে নাট্যমেলার আয়োজন করেছে বিডন স্ট্রিট শুভম্— ছোটদের গ্রুপ থিয়েটার। মেলাটি সেজে উঠেছে উপেন্দ্রকিশোর-সুকুমার-সত্যজিতের সৃষ্টি পরম্পরায়। তাঁদের সাহিত্য থেকেই নাটক: ঘ্যাঁঘাসুর, লক্ষ্মণের শক্তিশেল, হযবরল, ব্রজবুড়ো, দুই বন্ধু। মিনার্ভা থিয়েটারে, ২৯-৩১ ডিসেম্বর, প্রতি দিন সন্ধে সাড়ে ৬টায়।

পরম্পরা

চিত্রকলা, ভাস্কর্য, গ্রাফিক ডিজাইন, কাঠ ও চামড়ার কাজ থেকে শুরু করে ফোটোগ্রাফি অবধি বিবিধ শিল্পকর্ম নিয়ে ১৫০তম বার্ষিক শিল্পপ্রদর্শনী: ‘পরম্পরা’। কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফ্ট-এর ৪০০ জন ছাত্র তাঁদের সৃষ্টি নিয়ে যোগ দিয়েছেন এ-প্রদর্শনীতে। নন্দলাল বসু যামিনী রায় থেকে গণেশ পাইন গণেশ হালুই শক্তি বর্মন-এর মতো বিশিষ্ট শিল্পীকে নিয়ে দেড়শো বছরের এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির এ-প্রদর্শনী আসলে ঐতিহ্যের সঙ্গে উত্তরাধিকারের হাত মেলানো। শুরু হয়েছে ২২ ডিসেম্বর, চলবে ১ জানুয়ারি অবধি, প্রতিদিন ২-৮টা। অন্য দিকে ২৮ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ শুরু হল অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস-এর ৭৯তম বার্ষিক প্রদর্শনী, চলবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন ১২-৮টা। বিশিষ্ট শিল্পীদের ২০৫টি শিল্পকর্মের সমাহার। গণেশ হালুইকে লেডি রানু মুখোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত সারা জীবনের সম্মান দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনীতে শিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে তথ্যচিত্রও দেখানো হচ্ছে— বিনোদবিহারীকে নিয়ে সত্যজিতের, প্রকাশ কর্মকারকে নিয়ে সন্দীপ রায়, এবং রাজা মিত্রের ‘মুরাল পেন্টিংস অব ওড়িশা’।

মূকাভিনয় উত্‌সব

শীত এলেই শহরে নানা ধরনের মেলা, নাটকের পাশাপাশি নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে মূকাভিনয়। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে চলেছেন নির্বাক-কবি যোগেশ দত্ত। জীবদ্দশায় তাঁর নামে তৈরি হয়েছে যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমি। তৈরি করেছেন নিজস্ব সংস্থা ‘পদাবলী’। পায়ে পায়ে সেই সংস্থা পেরিয়ে এসেছে ৪৪টি বছর। যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে তাদের আয়োজনে হয়ে গেল তিন দিনের মূকাভিনয় উত্‌সব। ছিলেন দেশবিদেশের শিল্পীরা। ছিল যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমির সমাবর্তন এবং মূকাভিনয় শিবির।

জগবন্দন

২০১১-য় পালিত হয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের ১৭৫তম জন্মবর্ষ। এই উপলক্ষে যুগন্ধর এই মহামানবের জীবন ও বাণীকে নতুন রূপে প্রকাশ করতে উদ্যোগী হয় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। তারই অঙ্গ হিসেবে জানুয়ারিতে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার প্রকাশ করতে চলেছে জগবন্দন: দু’খণ্ডে প্রায় ১৭০০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে ধর্ম-দর্শন-সাহিত্য-সামাজিকতার পরিসরে আলোচিত হয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ-জীবন। লেখক-তালিকায় স্বামী আত্মস্থানন্দ, স্বামী প্রভানন্দ সহ রামকৃষ্ণ মঠের বরিষ্ঠ সন্ন্যাসীবৃন্দ এবং বহু বিশিষ্ট লেখক। দুষ্প্রাপ্য বহু আলোকচিত্র ছাড়াও বইয়ে আছে নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেজ, যোগেন চৌধুরী, সত্যজিত্‌ রায়-এর মতো আধুনিক শিল্পীর আঁকা শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতিকৃতিও। এ দিকে পাথুরিয়াঘাটায় খেলাত্‌ ভবনে ১লা জানুয়ারি সন্ধেয় হবে বাক্-এর প্রযোজনায় শ্রুতি-অভিনয় ‘যুগসূর্য শ্রীরামকৃষ্ণ’। অভিনয়ে রত্না মিত্র, অমিত রায় প্রমুখ, গানে বিশ্বরূপ রুদ্র।

শতবর্ষে

দু’দশক ধরে প্রদর্শনী, আলোচনা, ক্যাসেট ও বইয়ের মাধ্যমে নানা ঐতিহাসিক ঘটনাকে উপস্থাপন করে আসছে ‘হেরিটেজ বেঙ্গল’। নানা জেলায় স্থানীয় পুরাকীর্তির ঐতিহ্যের বিষয়ে সচেতনতা শিবিরও করেছে তারা। ফেব্রুয়ারিতে চন্দ্রকেতুগড়ে অনুষ্ঠিত হবে এমনই এক সচেতনতা শিবির। স্থানীয় পুরাবস্তুগুলিকে সংগ্রহশালায় রক্ষা করার ভাবনাও আছে, জানা গেল সভাপতি পার্থ চন্দের কথায়। ওদেরই উদ্যোগে বেগম আখতারের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১-৪ জানুয়ারি ঢাকুরিয়ার অবনমহল প্রেক্ষাগৃহে অজয় চক্রবর্তী, উদয় কুলকার্নি, বিচারপতি অসীমকুমার রায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বেগম আখতারের শিষ্যা প্রভাতী মুখোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্ট শিল্পীরা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। থাকবে শতবর্ষের শিল্পীদের নির্বাচিত রেকর্ড বাজানো, কর্নাটকের শিল্পী বাপু পদ্মনাভের বাঁশি। দেখানো হবে বেগম আখতারের ওপর তথ্যচিত্র ‘আখতারিবাই’।

অন্য মজা

আমার নাম ফোয়ারা।’ ‘বা ভারী অদ্ভুত নাম তো! জল পড়ে?...’ বন্ধুর চিঠি তার প্রেমিকার কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে এই ভাবেই আলাপ জমেছিল তিতির-ফোয়ারা’র। মুঠোফোনের বাড়বাড়ন্ত তখন ছিল না, প্রেম-পর্বে চিঠি-ই ভরসা। বেশি দিনের তো কথা নয়, নব্বইয়ের দশকেই এ হেন প্রেমের রমরমা ছিল। আসলে কলকাতা তখনও গ্লোবাল হয়নি। আছড়ে পড়েনি বিশ্বায়নের ঢেউ। কফি-শপ, নাইট ক্লাব দূর-অস্ত। আর পুুরনো বাড়ি, টানা বারান্দা, পলেস্তারা খসা দেওয়াল, রোয়াক নিয়ে উত্তর কলকাতা তার নিজস্ব মেজাজে। এই নব্বইয়ের দশকেই কোনও এক দিন আকাশে দেখা গিয়েছিল হিরের আংটি! সে দিনই প্রথম তিতিরের হাত ধরেছিল ফোয়ারা। দুনিয়া জুড়ে ঘটে চলা বড়সড় ঘটনার ভিড়ে উত্তর কলকাতার গলিগুলোয় নানা মানুষের জীবনেও ঘটে চলেছিল নিতান্ত সাধারণ নানা ঘটনা। সে সবের মোড়কেই উত্তর কলকাতা ও তার পাড়া কালচার উঠে এসেছে গায়ক-অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এ। প্রথম ছবির জন্য অনিন্দ্য বেছেছেন নিজেরই উপন্যাস ‘একদিনব্যাপী’। অনিন্দ্যর কথায়, “ফেসবুক, মোবাইল, নেটের মতো অ্যাকসেসারিজ না থাকলেও সে জীবনে ছিল অন্য মজা। উত্তর কলকাতায় বড় হওয়া অনেকেই এখনও মজে, সে সব নস্টালজিয়ায়। কেমন একটা মায়া ছড়িয়ে থাকে।” ফোয়ারা আর তার বন্ধুদের বড় হওয়ার গল্পের মোড়কে ছবির পরতে পরতে সেই সব ভাল লাগাই ভিড় জমায়। ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পাবে ছবিটি। সঙ্গে উপন্যাসটি বই আকারে।

প্রয়াণ

সংস্কৃত সংস্কৃতির একদা পীঠস্থান ভাটপাড়ার এক বনেদি পণ্ডিত বংশে ১৯৩৫-এ কৃষ্ণজীবন ভট্টাচার্যের জন্ম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও মিউজিওলজিতে এম এ। পরে আশুতোষ মিউজিয়মে শিক্ষা আধিকারিক হিসেবে যোগদান। সংগ্রহালয়টিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অবসরের পরেও তাঁর সারস্বত চর্চা থামেনি। প্রাচীন পুথি পাঠে ছিলেন পারদর্শী। পড়াশোনার জগত্‌ ছিল বহুবিস্তৃত। কবি প্রাবন্ধিক রূপে স্বতন্ত্র স্থান থাকলেও নিজেকে ‘সাহিত্যকর্মী’ রূপে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন রসিক পরোপকারী এই মানুষটি। মূর্তিতত্ত্ব, চিত্রকলা, লোকশিল্প এবং আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চায় তাঁর ছিল বিশেষ আগ্রহ। এই সব বিষয়ে পত্রপত্রিকায় তাঁর নানা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অথচ নিজের বই প্রকাশে কখনও আগ্রহী ছিলেন না। পিতামহ পণ্ডিত পঞ্চানন তর্করত্নের শক্তিভাষ্য পুনঃপ্রকাশ বা পিতা পণ্ডিত শ্রীজীব ন্যায়তীর্থের একাধিক গ্রন্থ প্রকাশে তাঁর উদ্যোগ স্মরণীয়। ভাটপাড়া সাহিত্য মন্দিরের শতবর্ষ উদ্যাপনের সময় বহু দুষ্প্রাপ্য পুথি ও গ্রন্থের প্রদর্শনীতে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তিনি চেয়েছিলেন পঞ্চানন তর্করত্ন প্রতিষ্ঠিত ভাটপাড়ার একমাত্র সংস্কৃত টোলটির পুনঃসংস্কার এবং সেখানে একটি সংগ্রহালয় তৈরি করতে। মূলত অর্থাভাব ও অন্যান্য কারণে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। নৈহাটির বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্রের সূচনালগ্ন থেকেই যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন সুপণ্ডিত মানুষটি।

kolkatar karcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy