Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

‘বিজয়িনী নাই তব ভয়’

কয়েকজন শিক্ষিত মহিলা ঢাকা শহরে বসে মহিলাদের একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশে উদ্যোগী হন লীলাবতী নাগের নেতৃত্বে। নাম বেছে দিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩১-এর মে মাসে ‘জয়শ্রী’ প্রকাশ পেল। প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন নন্দলাল বসু (সঙ্গে বাঁ দিকে)। নন্দলালের আঁকা ছবিও এখানে প্রকাশিত হয়েছে (সঙ্গে ডান দিকে ‘চাই দই’)। মহিলাদের কথা উল্লেখ করা হলেও পত্রিকা প্রকাশের আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের উপর রাজরোষ বেড়েই চলেছিল। সেই সময় বিপ্লবী সংগঠনকে আদর্শের পথে একনিষ্ঠ রাখতে, তার চারপাশে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার পরিমণ্ডল সৃষ্টি করতেই ‘জয়শ্রী’র জন্ম। পত্রিকাটিকে আশীর্বাদ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘বিজয়িনী নাই তব ভয়’।

আট দশক পেরিয়ে চলা এই পত্রিকা স্বাভাবিক ভাবেই ব্রিটিশ শাসকের রোষ এড়িয়ে যেতে পারেনি। তিন-তিন বার পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ করা হয়। একই আদর্শ নিয়ে প্রকাশিত ‘যুগান্তর’ কি ‘বন্দেমাতরম’ বহু কাল আগে বন্ধ হয়ে গেলেও ‘জয়শ্রী’ আজও প্রকাশিত হচ্ছে। হেমচন্দ্র ঘোষ, ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিতরায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বীণা ভৌমিক, কমলা দাশগুপ্ত, নলিনীকান্ত গুপ্ত, শান্তিসুধা ঘোষ-সহ বহু বিশিষ্ট বিপ্লবী এই পত্রিকায় স্মৃতিকাহিনি লিখেছেন। কালীচরণ ঘোষের বিখ্যাত বই জাগরণ ও বিস্ফোরণ ‘জয়শ্রী’তেই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। আবার রমেশচন্দ্র মজুমদার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বিনয় সরকার, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জীবনানন্দ দাশের মতো অনেকেই এই পত্রিকার জন্য কলম ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি কবিতা ‘জয়শ্রী’তে প্রকাশিত হয়। দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বরলিপি-সহ ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতায়’ গানটিও এখানে ছাপা হয়। ‘জয়শ্রী’র সুবর্ণ জয়ন্তী সংখ্যাটি আজ সংগ্রাহকের সম্পদ। এ ছাড়া বহু বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে ‘জয়শ্রী’। প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক লীলা নাগ (পরে রায়) প্রয়াত হওয়ার পর ১৯৭০ থেকে আমৃত্যু পত্রিকা সম্পাদনা করেন বিপ্লবী সুনীল দাস। ২০০২ থেকে এই দায়িত্বে আছেন বিজয়কুমার নাগ।

রাখি-সংক্রান্তি

দিনটি ছিল ১৬ অক্টোবর ১৯০৫ (৩০ আশ্বিন ১৩১২)। কার্জনের বঙ্গভঙ্গের নির্দেশ কার্যকর হয় সে দিন। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল। অরন্ধন। রাস্তায় একের পর এক মিছিল ‘বন্দেমাতরম্‌’ ধ্বনিতে মুখর।

বিশেষ করে গঙ্গার ঘাটগুলিতে জনসমুদ্র, স্নান সেরে চলছে রাখিবন্ধনের পালা। পুরোভাগে রবীন্দ্রনাথ। তার পর মাতৃমন্দিরের শিলান্যাস, শেষে বাগবাজারে পশুপতি বসুর বাড়িতে জাতীয় ধনভাণ্ডারের জন্য অর্থসংগ্রহ। বন্দেমাতরম্‌ সম্প্রদায়ের ব্যবস্থাপনায় ‘রাখি-সংক্রান্তি’ পুস্তিকা প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের দুটি গান ও সে দিনের আটটি আলোকচিত্র সহ। দুর্লভ সে পুস্তিকা অশোককুমার মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গকথা-সহ হুবহু পুনর্মুদ্রণ করছে দে’জ পাবলিশিং, এই সীমিত সংস্করণ এক বারই ছাপা হবে, আর বইগুলি হবে সংখ্যাচিহ্নিত। ১৫ অগস্ট এটি প্রকাশিত হবে।

উদ্‌যাপন

সুকুমারী ভট্টাচার্য ছিলেন আর পাঁচজনের থেকে আলাদা, মনস্বিতায়, মানসিকতায়। তাঁর স্মরণসভাটি তাই অন্য রকম ভাবেই পরিকল্পনা করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবী চর্চা ও তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ। ১২ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ এল রায় প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠেয় এই সভার নামও ‘সেলিব্রেটিং সুকুমারীদি’। সে দিন সন্ধ্যা বেরার কথায় উঠে আসবে সুকুমারী ভট্টাচার্যের নানা দিক, যিনি শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন। থাকবেন যশোধরা বাগচি (সঙ্গের ছবিটি কেমব্রিজে তাঁরই তোলা), এবং সুকুমারীদেবীর কন্যা ঐতিহাসিক তনিকা সরকার। (দুপুর ২.৩০ থেকে বিকেল ৫ টা)। এ দিকে ‘মিলেমিশে’ পত্রিকা প্রকাশ করেছে ‘সুকুমারী ভট্টাচার্য বিশেষ সংখ্যা’ (সম্পা: সমীরকুমার গুপ্ত)। আলো ফেলা হয়েছে ব্যতিক্রমী মানুষটির জীবন ও জীবনব্যাপী জ্ঞান চর্চার উপর।

ডাকটিকিটে পতাকা

ভারতে প্রথম নকশা করা পতাকায় ছিল সাদা, সবুজ আর লাল রঙ। কিন্তু বুলগেরিয়ার পতাকা প্রায় এক রকম হওয়ায় তা বাতিল হয়। পরে পতাকার নকশার জন্য তৈরি হয় কমিটি।

কলকাতায় বদরুদ্দিন তায়েবজির স্ত্রী অশোকস্তম্ভের চক্রটি পতাকার জন্য সেলাই করে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। স্বাধীনতার দিন প্রথম পতাকা ওঠে ইন্ডিয়া গেট ও সংসদ ভবনে। পর দিন লালকেল্লায়। পতাকা নিয়ে এমনই নানা তথ্য রয়েছে শেখর চক্রবর্তীর বই দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ আনফার্লড থ্রু ফিলাটেলি (নিয়োগী বুকস)-এ। ডাকটিকিট জমানোর নেশা তাঁর ছোট থেকেই। প্রায় ষাট বছর ধরে গড়ে তুলেছেন ডাকটিকিটের পতাকাকেন্দ্রিক সংগ্রহ। ৬৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৪ অগস্ট থেকে আইসিসিআর-এ শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী ‘অ্যান এক্সিবিশন অন দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ’। উদ্বোধন করবেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত।

জোড়াসাঁকোয়

প্রতিবেশী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ মুখ বলে তাঁকে সহজেই চিনে নেওয়া যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছাড়াও বিদেশের নানা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণায় যুক্ত থেকেছেন আনিসুজ্জামান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও যোগ দেন তিনি। নিরলস ভূমিকা নিয়েছেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলনে। লিখেছেন মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, মুসলিম বাংলার সাহিত্যপত্র, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, কাল নিরবধি-র মতো নজরকাড়া বই। ভারত সরকার সম্প্রতি তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধিতে সম্মানিত করেছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ২০০৫-এ সাম্মানিক ডি লিট উপাধি দিয়েছিল। সেই রবীন্দ্রভারতীর আমন্ত্রণেই এ বার তিনি ‘রবীন্দ্রনাথের নারীরা’ বিষয়ে বলবেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে, ১২ অগস্ট মঙ্গলবার বিকেল চারটেয়।

তৃতীয় একক

সংসার সামলে মায়াকে ছুটতে হয় কারখানায়। ওঁর বাচ্চারা থাকে ক্রেশে। কিন্তু প্রতিবেশী জগত্‌ প্রতি মুহূর্তে যেন চ্যালেঞ্জ জানায় তাঁকে। মায়া শিকার হন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের।

কাহিনিটি ইতালির অভিনেতা-লেখক দারিও ফো-র। মায়ার চরিত্রটিকে এ বার ‘রোজানা’-য় রূপ দিচ্ছেন উষা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, ‘মায়া আসলে আমাদের আশেপাশের নারী যাঁরা সামাজিক নির্যাতনের শিকার, তাঁদের প্রতিভূ।’ এটি উষার তৃতীয় একক অভিনয়। রঙ্গকর্মীর প্রযোজনায় ‘রোজানা’ দেখা যাবে ১৩ অগস্ট সন্ধে সাতটায় আকাদেমিতে।

উন্নয়নে

ঊনষাট-ষাটের দশকে বেলঘরিয়া-আগরপাড়া সন্নিহিত উত্তর শহরতলির চেহারা কেমন ছিল, আজ তা কল্পনার অতীত। ছিন্নমূল মানুষেরা তখন সবে সেখানে বাসা বাঁধতে শুরু করেছেন। ডানলপ ব্রিজের কাছে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে গড়ে ওঠা নরেন্দ্রনগরের অধিবাসীরা ১৯৫৮-য় তৈরি করেন মিলনী পাঠাগার। এটির উন্নয়নে কামারহাটি পুরসভা সংলগ্ন নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনের (১৫-১৭ অগস্ট) নাট্য-উত্‌সব। স্বপ্নসন্ধানীর ‘ম্যাকবেথ’, পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ-র ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’ ও ব্ল্যাঙ্ক ভার্স-এর ‘ফুড়ুত্‌’। থাকবেন সৌগত রায়, মনোজ মিত্র প্রমুখ।

তিনটি অ্যালবাম

ছেলেবেলার দিকে যখন তাকানো যায় তখন সবচেয়ে এই কথাটা মনে পড়ে যে, তখন জগত্‌টা এবং জীবনটা রহস্যে পরিপূর্ণ। সর্বত্রই যে একটি অভাবনীয় আছে এবং কখন যে তাহার দেখা পাওয়া যাইবে তাহার ঠিকানা নাই, এই কথাটা প্রতিদিনই মনে জাগিত। জীবনস্মৃতি-র (১৯১২) এই ‘ঘর ও বাহির’ অধ্যায়টি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শুনতে-শুনতে কারও মনে হতেই পারে যেন রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে তিনি খুলে ফেলছেন রহস্যময় জীবনের আবজানো দরজা। দশটি সিডি’তে কবির জীবনস্মৃতি-র যাবতীয় অধ্যায় সম্পূর্ণ রেকর্ড করেছেন সৌমিত্র, ‘এ যেন রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে জানা... তাঁর ব্যাপ্ত পড়াশোনা, সুশিক্ষিত সংস্কৃত মনটিকে নতুন করে চেনা’। ভাবনা বের করেছে অ্যালবামটি, সঙ্গে আরও দু’টি অ্যালবাম, কবিকে নিয়েই। একটি ‘মহাকাব্যে চিরন্তনী’, তাতে বিদায় অভিশাপ আর কর্ণকুন্তী সংবাদ পাঠ করেছেন সুবীর মিত্র ও প্রণতি ঠাকুর। অন্যটি চিরকুমার সভা নাটক পাঠ (উপমা নিবেদিত), অভিনয়ে বিভাস চক্রবর্তী শ্রীকান্ত আচার্য জগন্নাথ ও ঊর্মিমালা বসু বিজয়লক্ষ্মী বর্মন লোপামুদ্রা মিত্র প্রমুখ, সংগঠনে পার্থ ও গৌরী ঘোষ।

একসঙ্গে

তুলির প্রতি টান দু’জনেরই ছোট থেকে। অমিতাভর বেড়ে ওঠা পুব বাংলার সন্দ্বীপে, মৈত্রেয়ীর লাহৌরে। দেশভাগের টানাপড়েন দু’জনকেই আনে কলকাতায়। সরকারি চারুকলা বিদ্যালয়ে প্রথাগত শিক্ষা, শিল্পী বন্ধুদের আড্ডায় প্রথম দেখা।

ভাবলেন এক জায়গায় স্টুডিয়ো বানালে মন-প্রাণ দিয়ে ছবি আঁকা যাবে। স্টুডিয়ো হয়নি, হল মনের মিলন। অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জলরঙের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে মৈত্রেয়ীও ওই মাধ্যমকেই বেছে নিলেন। পুরস্কার আসে এই মাধ্যমেই। পরে অমিতাভ শুরু করলেন এচিং ও ইন্তালিয়ো মাধ্যমে ছাপাই ছবি। পেলেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার সহ বহু খেতাব। কিন্তু দীর্ঘ কর্মজীবনে অমিতাভ-মৈত্রেয়ীর যুগ্ম-প্রদর্শনী কখনও হয়নি। ওঁদের স্মরণে ইমামি চিজেল আর্ট-এর উদ্যোগে তাদের গ্যালারিতে দুই শিল্পীর শতাধিক ছবি প্রদর্শিত হবে ১২-৩১ অগস্ট (১১-৭)। প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করবেন নবনীতা দেবসেন।

পাহাড়ে উপেক্ষিত

পাহাড় জয়ের খেতাব পর্বতারোহীরাই পান, অন্ধকারে থেকে যান শেরপারা। একের পর এক সফল অভিযানের প্রকৃত সারথি হয়েও তাঁরা ন্যূনতম স্বীকৃতিটুকুও পান না। তাঁদের কথাই শোনা যাবে এ বারের অপূর্ব মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতায়। উদ্যোক্তা অকালপ্রয়াত এই মাস্টারমশাই ও সমাজকর্মীর ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন ‘এবং ছাত্রছাত্রী’। ১৭ অগস্ট ৫ টায় ফুলবাগানের শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইনস্টিটিউশনে ‘শতবর্ষে তেনজিং, পাহাড়ে অভিযানের উপেক্ষিত সারথিরা’ শীর্ষকে বলবেন অরণি বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ২০১০-এর সফল অভিযান বিষয়ে সচিত্র আলোচনায় এভারেস্ট ছোঁয়া আর এক বাঙালি দেবাশিস বিশ্বাস।

পুনশ্চ

স্মৃতিই মানুষের সম্বল। বলছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘স্মৃতির উপরেই তো আমাদের সত্তাটা দাঁড়িয়ে থাকে, এই বয়সে স্মৃতির ভিতর দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে ফেলে আসা বাকি জীবনটাকে দেখতে পাই। স্মৃতি সতত সুখের হয় না, তা দুঃখ বা বেদনারও।’ শৌভিক মিত্রের ‘পুনশ্চ’য় নিজের অভিনীত চরিত্র অনিমেষ প্রসঙ্গেই সৌমিত্রর এই স্মৃতি-নির্ভরতা। ‘সৌমিত্রদার সঙ্গে কাজ করতে পারাটা খুব বড় পাওয়া আমার জীবনে,’ পরিচালক হিসেবে মনে করেন শৌভিক। ‘সৌমিত্রদার অনিমেষ আমার ছবিতে বিখ্যাত সাহিত্যিক, প্রায় চল্লিশ বছর পর তার সঙ্গে দেখা পুরনো বন্ধু মোহনার (রূপা গঙ্গোপাধ্যায়), অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। দু’জনেরই ছাত্রজীবন ষাট-সত্তর দশকের শান্তিনিকেতন, সেখানেই গাঢ় হয় বন্ধুত্ব। এতদিন পর যখন দেখা হয়, তখন স্মৃতির রাস্তা বেয়ে তারা পৌঁছে যায় পুরনো দিনগুলিতে। এই যে সম্পর্কের নানা রং, বিভিন্ন বয়সে তার নানা স্তর, বিশ্বাসের জোর এগুলো একেকটা মুহূর্তে প্রায় ম্যাজিকের মতো ফুটিয়েছেন সৌমিত্রদা আর রূপা।’ শৌভিক ছবিতে এসেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষের সহযোগী হিসেবে, তাঁর প্রথম ছবি ‘হিরের আংটি’তে সংগীত নির্দেশক, তারপর ‘উনিশে এপ্রিল’ থেকে ‘চোখের বালি’ অবধি সহযোগী পরিচালক। ছোট পর্দায় ‘এবং ঋতুপর্ণ’ আর ‘ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি’, দু’টি টক শো-এরও পরিচালক ছিলেন তিনি। সেই নব্বই দশকে দূরদর্শন-এর আমল থেকে এখনকার বেসরকারি টিভি-চ্যানেলে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি, ক্যুইজ, তথ্যচিত্র ইত্যাদি করে চলেছেন নিরন্তর। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুনশ্চ’ তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র, গল্প চিত্রনাট্যও তাঁরই।

শতবর্ষে

পৃথিবীর বর্তমান অবস্থায় লোভ ও স্বার্থপরতা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু পৃথিবীতে সবার মাঝে যদি প্রেম থাকে, তা হলে পৃথিবীর আশা রাখতে পারে। কেন না হিংসার চেয়ে প্রেম বলবান। সত্তর দশকের শুরুতে এক চিঠিতে লিখেছিলেন ফাদার রবের আঁতোয়ান। ঠিক এর দশ বছর পরেই দুরারোগ্য ক্যান্সারে প্রয়াত হন তিনি, ১৯৮১। সুবীর রায়চৌধুরী লিখেছেন “তাঁকে পাই সহকর্মীরূপে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে। এক দশকের ওপর আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।... ’৭৯ সালের বড়োদিনে অমিয় দেব, শুদ্ধশীল বসু, হায়াত্‌ মামুদের সঙ্গে আমিও (শান্তিভবনে) গিয়েছিলাম। খুব খুশি হয়েছিলেন। অনেক কিছু খাওয়ালেন।’’ ভিনদেশি যে সব বিদ্বজ্জনের আগমনে কলকাতা হয়ে উঠেছিল বিদ্যানুরাগীদের তীর্থক্ষেত্র, ফাদার আঁতোয়ান সেই গুরুকুলেরই একজন। বহুভাষাবিদ মানুষটির প্রিয় ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত, ধর্মীয় গানও রচনা করে সুর দিতেন। এখানকার আবহমান জীবনস্রোতে মিশে গিয়েছিলেন, প্রিন্স গোলাম মহম্মদ রোডের শান্তিভবন ছিল এই চিরতরুণ মানুষটির প্রাণকেন্দ্র। এ দেশে আসেন ১৯৩৯-এ। গ্রিক ও লাতিনে স্নাতক ও দর্শনে স্নাতকোত্তর। ভারতে এসে স্নাতক হন ইংরেজিতে, স্নাতকোত্তর সংস্কৃতে। বুদ্ধদেব বসু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের অন্তরঙ্গ সুহৃদ। জন্ম বেলজিয়ামে, ১৯১৪-র ১১ অগস্ট। আজ তাঁর শতবর্ষ পূর্ণ হল। তাঁকে নিয়ে চমত্‌কার একটি জন্মশতবর্ষ সংকলন প্রকাশ করল ‘ঋতপথ’ (সম্পা: অনিমেষ দত্ত বণিক) পত্রিকা, স্মৃতিচারণ এবং ফাদারের জীবন কর্ম নিয়ে নানা আলোচনার সঙ্গে আছে দুর্লভ কিছু আলোকচিত্রও। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে রবিবার শতবার্ষিক অনুষ্ঠানে এটি প্রকাশ পেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE