Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

ছোটরাও তৈরি করছে দুর্গামূর্তি

কাশফুল আর নীল মেঘের আনাগোনা ছাড়াও কলকাতার আগমনী সাধারণত একটু অন্য রকমই হয়। কলকাতার দুর্গাপূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। শুরু থেকেই মাতৃমূর্তির রূপদানে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন শিল্পীরা। এ কালে যে তার ব্যতিক্রম ঘটছে এমনটা নয়। ভারতীয় সংগ্রহশালায় রয়েছে দেবীরূপের নানা নিদর্শন। পাথর ধাতু কাঠ ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে সে কালের শিল্পীরা মাতৃমূর্তি নির্মাণ করেছেন। ফি বছর এখানে আয়োজন করা হয় আগমনী উত্‌সবের।

এ বারে আয়োজনের কেন্দ্রে প্রধানত ছোটরা, জানালেন এডুকেশন অফিসার সায়ন ভট্টাচার্য। ২৫ তারিখের মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই মাটি দিয়ে জাদুঘর চত্বরে গড়ে তুলবে প্রাচীন মূর্তির অনুসরণে ১২ ফুট উচ্চতার একটি দুর্গা মূর্তি (সঙ্গে তারই প্রস্তুতি, বাঁ দিকে) দুর্গা বিভিন্ন রূপে, এ নিয়ে ছিল আলোচনা এবং পটে গানে দুর্গার রূপ ফুটিয়ে তুললেন মণিমালা চিত্রকর। আগামিকাল বিকেল চারটেয় দেবীপক্ষ, তর্পণ, মহালয়া-- ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে ‘দেবী ও তাঁর উত্‌সব’ শীর্ষকে বলবেন তপতী গুহ ঠাকুরতা। থাকছে মহিষমর্দিনী নিয়ে প্রদর্শনী এবং তনুশ্রীশঙ্করের পরিচালনায় ২৬ তারিখ বিকেলে ‘দুর্গা বন্দনা’। এ দিনই ঢাক ও ধুনুচি নাচ, ২৭ শে শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নিবেদনে আগমনী গান ও পুরুলিয়ার শিল্পীদের ছো নাচে মহিষমর্দিনী। রানিকুঠির গ্যালারি লা ম্যের-এ ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধেয় শুরু হচ্ছে দুর্গা নিয়ে একটি চিত্র ভাস্কর্য প্রদর্শনী, থাকবে ৪২ জন শিল্পীর কাজ। চলবে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত, ৪-৮ টা। ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছিলেন সারা বিশ্বে দুর্গার রূপবৈচিত্র। গ্রিক দেবী আথেনাও যে দুর্গার সমগোত্রীয়, সে কথাও জানান তিনি। ব্রতীনবাবুর সেই ভাবনা নিয়েই গত সপ্তাহে দুর্গার ছবি আঁকার কাজ শুরু করেছেন শিল্পী পার্থ রায়। গ্যালারি কেমোল্ডে এই ছবি আঁকার সঙ্গেই ছিল দুর্গা নিয়ে নানা প্রসঙ্গে আলোচনা। পার্থবাবু এই সব ছবি নিয়ে প্রদর্শনী করবেন আগামী বছর। ও দিকে বেহালার গুরুসদয় সংগ্রহশালায় আগামিকাল শুরু হচ্ছে ওঁদের নিজস্ব সংগ্রহ (সঙ্গে ডান দিকে তারই একটি দুর্গাপট) এবং এ কালের শিল্পীদের আঁকা দুর্গাচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী ‘দুর্গতিনাশিনী দুর্গা’। থাকছে আগমনী গান, প্রদর্শনী চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত, ১০-৫ টা। গত শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে বসেছিল একটি বৈঠকি আড্ডা, যার মধ্যমণি ছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন এবং কৃষ্ণা বসু। উত্‌সবের সে কাল ও এ কাল নিয়ে জমে উঠেছিল এই আয়োজন।

বলেন্দ্রনাথ

‘তোমার রত্নাবলী বেশ হয়েছে, একটু আধটু সংশোধন করে দিলুম।’ বলু’কে লেখা রবিকাকার এমন চিঠি আরও আছে: ‘দৃঢ় সংকল্প পূর্ব্বক ধৈর্য রক্ষা করে শান্ত অবিচলিত চিত্তে আপনার কাজ করে যাও।’ মাত্র ২৯ বছর বেঁচেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র এবং কবি ও প্রাবন্ধিক বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘প্রথম যখন কাব্য পড়িতে আরম্ভ করি, আমার বয়স খুব বেশি নয়।’ লিখেছেন বলেন্দ্রনাথ, এই লেখালেখির মধ্য দিয়েই পিতৃব্য রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর সখ্য। দেবেন্দ্রনাথের পুত্র বীরেন্দ্রনাথ বলেন্দ্রনাথের পিতা, মা প্রফুল্লময়ী দেবী। তাঁর জীবন ও সাহিত্যকর্মের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আর অপূর্ণ বলেই তথ্যসূত্র (সম্পা: সুব্রত রায়চৌধুরী) বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে: ‘ঠাকুরবাড়ির বলেন্দ্রনাথ’। এতে সাহিত্যের স্রষ্টা, কর্মী, সমালোচক বা আরও নানা রূপে তিনি আলোচিত হয়েছেন নানা নিবন্ধে। তাঁর জীবনরেখা আর রচনা-তালিকা তো রয়েইছে, সঙ্গে চিঠিপত্র, স্মৃতিকথা, প্রার্থনা-শোকবার্তাও।

অন্য মাধ্যমে

গত কয়েক মাস বাজার ঘুরে সংগ্রহ করেছেন রাশি রাশি পেঁয়াজের খোসা। তাই দিয়েই তৈরি করেছেন ১৬০ গ্রাম ওজনের দুর্গা। পেশায় বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মী হরিসাধন বিশ্বাস। ফি-বছর গড়েন নানা রকম দুর্গা। তেজপাতা, রবারের পাইপ, গেঞ্জির কাপড়, ফুলের পাপড়ি বিভিন্ন সময়ে এই সব তাঁর উপকরণ। তাঁর কথায়, পেঁয়াজের খোসা নানা রঙের হয়। তাই দিয়েই দুর্গা, অসুর, সিংহ ইত্যাদির রঙের বৈচিত্র। পুজোর ক’দিন দুর্গাটি দেখা যাবে বরানগর ন’পাড়ার পুলিশ কোয়ার্টারের মণ্ডপে।

দশভুজা

বাংলার লোকশিল্পের চাহিদা রয়েছে, কিন্তু নানা কারণে শিল্পীরা ব্রাত্য হয়েই থাকেন। উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে তাঁরা প্রায়শই বঞ্চিত। এঁদের কথা মনে রেখেই সুকান্ত সেতুর পাশে সুলেখার নিজস্ব বিপণিতে সম্প্রতি উদ্বোধন হল ‘দশভুজা’ প্রকল্পের। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফ্রিড এবং সুলেখা-র যৌথ উদ্যোগে রচিত এই প্রকল্পে রয়েছে নানা ক্ষেত্রের দশ জন মহিলা শিল্পীর হাতের কাজ। শোলা, পোড়ামাটি, ডোকরা, কাঁঠালিয়ার পুতুল, বালুচরি প্রভৃতি পাওয়া যাবে এই বিপণিতে। সঙ্গে পুজোর আবহে উপস্থিত থাকবেন শিল্পীরাও। প্রকল্পের উদ্দেশ্য শিল্পী ও শিল্পের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি সংযোগ করে দেওয়া। এর উদ্বোধনে হাজির ছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁস্যাজের ডিরেক্টর স্তেফান, খাদি গ্রামোদ্যোগের গৌরীশঙ্কর দত্ত ও অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। অন্য দিকে জোকার গুরুসদয় সংগ্রহশালায় ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে উদ্বোধন হবে একটি বিক্রয় কেন্দ্র। গুরুসদয় দত্তের স্বপ্নকে সামনে রেখেই এই কেন্দ্রে সারা বছর দর্শক এবং আগ্রহীরা কিনতে পারবেন লোকশিল্প ও হস্তশিল্পের নানা নিদর্শন, জানালেন কিউরেটর বিজনকুমার মণ্ডল।

বাংলা গান

গ্রন্থ সমালোচনার পূর্ণাঙ্গ পত্রিকা বিতর্কিকা-র (সম্পা: অভ্র ঘোষ মিলন দত্ত তপস্যা ঘোষ) বিষয়: ‘প্রসঙ্গ: বাংলা গান’। তবে গ্রন্থ সমালোচনার বাইরেও বিষয়ের দাবিতে এ সংখ্যায় ‘গুরুত্বপূর্ণ ভাবুকদের সঙ্গে সাক্ষাত্‌কার বা আলাপচারিতা’ প্রকাশ করা হচ্ছে, জানিয়েছেন অভ্র ঘোষ। বাংলা গান নিয়ে তাই পত্রিকার পক্ষ থেকে অশোক মিত্র ও সুধীর চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রণব বিশ্বাস ও আশীষ লাহিড়ী। ‘পঞ্চাশের দশক থেকে বাংলা গান আমাকে কোনোদিনই টানেনি। বাংলা সিনেমার গান আমাকে একেবারেই স্পর্শ করে না।’ জানিয়েছেন অশোক মিত্র। আর সুধীর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ বয়সের গানগুলোর মজা হচ্ছে যে সকালবেলা একটা সুর তৈরি করে দিলেন, বিকেলবেলা সেটা তালে ফেলে অন্য রকম করে দিলেন নাচের কারণে, এইগুলো খুব ইন্টারেস্টিং লাগে।’ সঙ্গে শাস্ত্রীয়-রবীন্দ্র-আধুনিক-লোক গানের বই নিয়ে একগুচ্ছ প্রবন্ধ। সঙ্গে বাংলা গানের বইয়ের চমত্‌কার তালিকা। এবং বিতর্কিকা-র আড্ডা।

মূকাভিনয়

আয়লার তাণ্ডবে সুন্দরবনের মানুষের অবস্থা, পরমাণু চুল্লির ভয়াবহতা আর ভূমধ্যসাগর উপকূলে গাজার ফালিতে মানুষের খানদানি নৃশংসতার নতুন অধ্যায় এগুলির মধ্যে মিল কোথায়? মিলিয়েছেন সুশান্ত দাস মূকাভিনয়-শিল্পী। মানুষের কর্মকাণ্ডে আবহাওয়া বদলায়, ঝঞ্ঝা মারাত্মক হয়। বিধ্বংসী যুদ্ধপ্রযুক্তিকে বিদ্যুত্‌ তৈরির কাজে লাগাতে গিয়ে ঘটে চের্নোবিল, ফুকুশিমা। গাজার আর্তি নিয়ে সুশান্তর সাম্প্রতিক নির্মাণ নো মোর ব্লাডশেড। বর্ণনা ও বিশ্লেষণে সুশান্তের উপকরণ শুধু শরীরের গতি ও ভঙ্গি, সাজসজ্জা, কদাচিত্‌ নেপথ্য ধ্বনি। ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় প্রসেনিয়াম আর্ট সেন্টারে (রিপন স্ট্রিট নার্সিং হোমের উল্টো দিকে) এলোকোয়েন্ট-কায়া ও প্রসেনিয়াম-এর নিবেদন সুশান্তর তিনটি আখ্যান।

নাটক আর নাটক নয়

এই মহালয়ায় ‘সুখচর পঞ্চম রেপার্টারি থিয়েটার’ (পরিচালক মলয় মিত্র) পঁচিশে পা দিচ্ছে। যদিও অনেক আগে থেকেই তা হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক আশ্রয় ছোট বড় সকলেরই। নাট্যগোষ্ঠীর ক’জন কর্মীর উদ্যোগে তৈরি হয়েছে জলসাঘর সোদপুর স্টেশনের ধারে ছোট্ট আর্ট গ্যালারি, স্টুডিয়ো থিয়েটার, বইঘর, আড্ডা আর চা পানের বাতাবরণ। গত ন’মাস ধরেই এখানে চলছে সঙ্গীত অধিবেশন, নিরীক্ষামূলক নাটক, নাটকের ক্লাস, মহড়া, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, বই প্রকাশ, শিল্প প্রদর্শনী, এমন আরও কত কী! পঁচিশের এই দীর্ঘ আনন্দময় যাত্রা নিয়েই জলসাঘর-এ মহালয়ার দিন ভোর থেকে রাত ‘সুখচর পঞ্চম’-এর জন্মদিন। প্রকাশ পাবে নাট্যগোষ্ঠীর মুখপত্র সুখচরের চিঠি-ও। ও দিনের এই কাণ্ডকারখানার নাম দেওয়া হয়েছে: ‘নাটক আর নাটক নয়’।

অনুভবে রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনৃত্য ও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক কাজের মাধ্যমে গত পঁচিশ বছর ধরে দেশে ও বিদেশে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে কলাক্ষেত্রম নৃত্য প্রতিষ্ঠান। শুভাশিস ভট্টাচার্য ও সুস্মিতা ভট্টাচার্যের চেষ্টায় আজ তাদের রজতজয়ন্তী বর্ষে পদার্পণ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুভাশিস রবীন্দ্রকবিতা ও নৃত্যনাট্য নিয়েই বহু দিন ধরে কাজ করছেন। ওদের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান চলবে সারা বছর। সূচনা ২৮ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র সদনে, সাড়ে ৬টা। গানে পাঠে নৃত্যে উপস্থাপিত হবে ‘অনুভবে রবীন্দ্রনাথ’, থাকবেন রায়া ভট্টাচার্য বিশ্বজিত্‌ চক্রবর্তী মনোজ মুরলী নায়ার জয়তী চক্রবর্তী অলক রায়ঘটক ও শর্মিষ্ঠা নন্দী। নৃত্য পরিচালনায় শুভাশিস ভট্টাচার্য ও সুস্মিতা ভট্টাচার্য।

স্থাপত্য বাঁচাতে

কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে, লালদিঘির সামনে কারেন্সি বিল্ডিং। ১৮৩৩-এ তৈরি বাড়িটিতে স্বাধীনতার পর থেকে ছিল এ জি অফিস। বিশিষ্ট স্থাপত্যের বাড়িটি ক্রমশই বিপন্ন হয়ে পড়লে এটি ভেঙে ফেলা শুরু হয়। বিশাল গম্বুজ-সহ অনেকটা ভাঙার পর ২০০২ সালে এটি সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে ঘোষিত হয়, সংস্কারের দায়িত্ব নেয় ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এ এস আই)। কিন্তু আংশিক সংস্কার হলেও প্রামাণিক নথি বা ছবির অভাবে গম্বুজটি এখনও পুনর্গঠন করা যায়নি।

ছবি: গোপী দে সরকার।

এ দেশে নথি বা ছবি না পাওয়াটাই দস্তুর। সম্প্রতি এখানে এ এস আই ও চেক দূতাবাসের উদ্যোগে উদ্বোধন হল ‘চেক কাসল্‌স’ শীর্ষক এক অনবদ্য প্রদর্শনীর। উদ্বোধন করলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ছিলেন ভারতে চেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত মিলোস্লাভ স্তাসেক। চেকোস্লোভাকিয়ার নানা প্রান্ত থেকে বেছে নেওয়া ৩৭টি স্থাপত্যচিত্র এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। রাষ্ট্র এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপত্য কী ভাবে সংরক্ষিত হতে পারে তার প্রমাণ প্রদর্শনী জুড়ে। শুধু আলোকচিত্র নয়, এখানে রয়েছে সেই সব স্থাপত্য সংক্রান্ত পুরনো লিথোগ্রাফ, এনগ্রেভিং, কাঠখোদাই ছবি বা তৈলচিত্র (সঙ্গে তারই একটি)। চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত, সরকারি ছুটির দিন বাদে ১১-৫টা।

থিয়েটারে ফেরা

ক্ষমতা-কে প্রশ্ন করবেন বলেই ফের থিয়েটারে ফিরছেন অঞ্জন দত্ত। থিয়েটার তাঁর কাছে আদি প্যাশন, সিনেমায় অভিনয়-পরিচালনা বা গানের জগতে আসার অনেক আগে থেকেই। পুজো পেরোলেই নতুন নাটক মঞ্চস্থ করছেন: ‘অবনী অপেরা’। নিজেরই রচনা নির্দেশনা। ১৯৭৪-২০০৪, এ-নাটকের কালপর্ব, অবনী আর অনির্বাণ মুখ্য দু’টি চরিত্র, একজন শিল্পী অন্য জন রাজনীতিক। অনেকটা অঞ্জনের আত্মজৈবনিক ছবি ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’র রণদীপ আর দ্বৈপায়ন চরিত্র দুটির প্রসারিত রূপ যেন। সত্তরের অগ্নিগর্ভ রাজনীতি থেকে নতুন শতকের গোড়া পর্যন্ত কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের একটু-একটু করে বদলে-যাওয়া, শিল্প-সংস্কৃতি-সমাজ-রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই, তা নিয়েই নাটক। ‘প্রশ্ন তুলেছি আমি ক্ষমতা নিয়ে, কারণ ইতিহাসে বারবার দেখা যাচ্ছে যে-কোনও মতাদর্শের রাজনীতিই শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা-র কাছে আত্মসমর্পণ করে। ফলে কলুষিত হয় শিল্প-সংস্কৃতিও। এই তিক্ত উপলব্ধিটা দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতেই বেছে নিয়েছি দশকগুলো, যদিও ক্ষমতা-র এই ইতিবৃত্ত চিরকালীন।’ খেয়াল করিয়ে দেন অঞ্জন, ‘আমাদের দৈনন্দিন বেঁচে থাকা নিয়েও আত্মসমালোচনা আছে এ-নাটকে। ব্যক্তি বনাম সমষ্টির দ্বন্দ্বে ফেঁসে গিয়েছি আমরা বরাবর, দুটো যে একে অপরের পরিপূরক তা ভুলতে বসেছি। সে দিক থেকে আমার এ-নাটক অস্তিত্ববাদী।’ অবনী-র ভূমিকায় স্বয়ং অঞ্জন, আর অনির্বাণ-এর চরিত্রে রাজর্ষি দে, ‘ফ্যাতাড়ু’, ‘ইনামিনাডিকা’র নাটককার। সঙ্গীত পরিচালনায় নীল দত্ত। ৫ অক্টোবর জ্ঞানমঞ্চে প্রথম অভিনয়।

মত্‌স্য বিজ্ঞানী

চার সেন্টিমিটার মাছটিকে চাপ দিয়ে ডিম বের করে নিলেন। ও দিকে একটি পুরুষ মাছকে টিপে মিল্ট বার করে সেই ডিমের উপর ছড়িয়ে দিলেন। মিনিট দশেকেই অদ্ভুত কাণ্ড! গোল ডিমগুলো ডিম্বাকৃতি হয়ে ক্রমে ভ্রূণ তৈরি হয়ে বেরিয়ে এল চারাপোনা। এই ভাবেই মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন মত্‌স্য বিজ্ঞানী হীরালাল চৌধুরী। গবেষণায় ছিল অদম্য উত্‌সাহ। নার্সারি পুকুরে ডিমপোনা ছেড়ে একটানা বসে লক্ষ করতেন সেগুলোকে। বৈঠকখানা বাজার থেকে রুই-কাতলার মাথা চেয়ে নিয়ে পিটুইটারি গ্রন্থি বার করে শিশিতে সংরক্ষণ করতেন। এই ভাবে আসে সরপঁুটি, মৃগেল ও রুইয়ের প্রজননে সাফল্য। জন্ম ১৯২১-এ শ্রীহট্টে। পরীক্ষার ঠিক আগে ডান হাতের কনুই ভাঙলেও ম্যাট্রিকে অষ্টাদশ স্থান পান। জলপানি পেয়ে বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪১-এ প্রাণিবিদ্যায় অনার্স নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। জুবিলি বৃত্তি পান। কলকাতায় বোমা পড়া বা দুর্ভিক্ষের মধ্যেও পড়া চালিয়ে গেছেন। ম্যালেরিয়া নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এম এসসি-তে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হন। শ্রীহট্ট মুরারিচাঁদ কলেজে জীববিজ্ঞানে অধ্যাপনা শুরু। শ্রীহট্ট পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় চাকরি খোয়ালেন। পরে ব্যারাকপুরে কেন্দ্রীয় মত্‌স্য গবেষণালয়ে যোগ দেন। সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট তখন সদ্য তৈরি হয়েছে। ঘরবাড়ি বা যন্ত্রপাতি কিছুই ছিল না। এর মধ্যেই এসেছিল প্রণোদিত প্রজননে সাফল্য। বিদেশের বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যেতেন তিনি কী ভাবে গবেষণা চালাচ্ছেন। অবসর নিয়ে কাজ করেছেন বিদেশেও। দরিদ্রের খাদ্য ভাণ্ডারে অবদান তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল। ৯৩ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE