Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

রঙে রঙে বর্ণপরিচয়

বরফ থেকে যখন সবুজ পাতায় ফিরে আসে আমেরিকা আর কানাডা, তেমন এক বসন্তেই ‘বর্ণপরিচয়’ অভিনয় করতে গিয়েছিলাম সেখানে।’ বলছিলেন দেবশঙ্কর হালদার। তাঁর একক অভিনীত (বাঁ দিকের ছবি) নাটকটি এই প্রথম দেখতে পাবেন কলকাতার দর্শক, শূদ্রক-এর নাট্যোত্‌সবে, ১৯ অক্টোবর সন্ধে ৭টায় অ্যাকাডেমিতে। দক্ষিণ রুচিরঙ্গ নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনায় ও রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের রচনা-নির্দেশনায় বিদেশের পর বেঙ্গালুরুতেও অভিনীত হয়েছে নাটকটি। ‘ও দেশে একা অভিনয় করার আমন্ত্রণ ছিল তো, মঞ্চবাহুল্য থাকবে না, বহিরঙ্গের বদল বলতে শুধু পোশাক পরিবর্তন। সে ভাবেই বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়েছি। আর অনেক মানুষ হওয়ার প্রবণতা সব সময়ই তাড়িয়ে ফেরে আমাকে, এ-নাটকে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছি। আমাদের বসন্তোত্‌সবটাকেই নিয়ে গেছি ও দেশের বসন্তে। দোলের সময় ভবানীপুরের বনেদি বাড়ি, সেখানে ছ’বছরের নাতি থেকে সত্তর বছরের দাদু অবধি যেমন পুরুষ চরিত্র, বউমা-শাশুড়িরাও আছে তেমনই। এমন একটা সরগরম বাড়ির হাসিকান্না সুখদুঃখ নিয়েই এ-নাটক। কথক থেকে এক-একটা চরিত্রের ভিতর ঢুকে যাই, সহজ অনাড়ম্বর গল্প, টিপিক্যাল নাট্যজটিলতা নেই। হালকা বসন্তের হাওয়ায় স্মৃতি, অনুভূতি, বাস্তবের আলোছায়া ছোঁয়ার চেষ্টা। রবীন্দ্রসঙ্গীত, সুকুমার রায়ের ছড়া থেকে হিন্দি ফিল্মের গানের কলি, বাস্তবের অনুষঙ্গে উঠে আসে সবই। রঙে-রঙেই যেন একে অন্যকে চেনে, নাটকের নাম তাই বর্ণপরিচয়।’ কথোপকথনে দেবশঙ্কর।

শূদ্রক-এর চতুর্দশ উত্‌সব এ বারে অ্যাকাডেমিতে ১৭-২৭ অক্টোবর। ২০-২৭ চিত্রকলার প্রদর্শনী: ক্রসরোড আর্ট সমকালীন প্রেক্ষিতে ঐতিহ্যের বিস্তার। উদ্বোধন করবেন যোগেন চৌধুরী। কিউরেটর অসিত পাল। ১৭-১৯ নাট্যোত্‌সব, উদ্বোধন করবেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। কলকাতার বাইরে থেকে আসছে প্রয়াত হাবিব তনভির-এর নাট্যগোষ্ঠী, তাঁর কন্যা নাগিনা-র নেতৃত্বে: ‘গাঁও কা নাম সসুরাল’ ও ‘লালা সওহরত্‌ রায়’। শূদ্রক-এর কর্ণধার দেবাশিস মজুমদারের রচনা-নির্দেশনা ও রাজনারায়ণ ভট্টাচার্যের উপস্থাপনায় সদ্যমঞ্চস্থ একটি নাটকও আছে এ উত্‌সবে: ‘আনর্তিতা’। জন্মশতবর্ষে বেগম আখতারের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য এই নাটকটি ‘ধ্রুপদী নৃত্য, সঙ্গীত ও নাট্যকলার ত্রিবেণী সঙ্গম’, জানালেন দেবাশিস। মুখ্য ভূমিকায় ইন্দ্রাণী মৈত্র, সঙ্গে আলোকপর্ণা গুহ (মাঝের ছবি)।

পঁচিশ বছর

একটি প্রতিষ্ঠানের পঁচিশ বছর হয়তো দারুণ উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। কিন্তু যদি তার জন্ম হয়ে থাকে ১৯৮৯-তে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময়ে, আর তা যদি হয় ‘এরিয়া স্টাডিজ’-এর গর্বিত ধারক, তবে পঁচিশ বছর পর নিশ্চয়ই তলিয়ে দেখা জরুরি, ঠিক কী করতে চেয়েছিল সেই প্রতিষ্ঠান, এবং কত দূর সেটা করা গেল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনে টাফ্ট্স্ ইউনিভার্সিটিতে সে বছর তৈরি হয়েছিল সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ওশান স্টাডিজ।

প্রতিষ্ঠাতা, ঐতিহাসিক সুগত বসু। পরে সুগত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলে সেন্টারের দায়িত্ব নেন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আয়েশা জালাল। দু’জনের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে একটা সিরিয়াস আগ্রহের কেন্দ্র তৈরি হয়। বহু ঐতিহাসিক সমাজতাত্ত্বিক সাহিত্যিক সাংবাদিক অর্থনীতিবিদ কিংবা প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব এখানে এসে ভাবনার বিনিময় করেছেন। সেন্টারের ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার মান ও গুরুত্ব থেকেছে প্রশ্নাতীত। ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর সেন্টারের পঁচিশ বছর উপলক্ষে আয়োজিত কনফারেন্স-এ নতুন গবেষণা ও ভাবনার ঝড় উঠল। ফুটে উঠল সেন্টারের মূল আদর্শটি: দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যাকে কেবল এই অঞ্চলের নিজস্ব বাস্তব বলে ভুল করলে চলবে না। তার মধ্যে নিহিত রয়েছে বৃহত্তর বিশ্ব-ইতিহাসের বহু সংকট ও সমাধানের ইঙ্গিত। উদ্বোধক বক্তৃতায় এই মূল কথাটিই ব্যাখ্যা করলেন অমর্ত্য সেন, ‘এরিয়া স্টাডিজ’-এর উদ্দেশ্য ও ব্যাপ্তি নিয়ে নতুন করে ভাবালেন। সঙ্গের ছবিতে অমর্ত্য সেন, সঙ্গে ডিরেক্টর আয়েশা জালাল।

রুজির টানে

ফি বছর দুর্গাপুজোয় ভিন রাজ্যের বহু মানুষ আসেন এই শহরে। উদ্দেশ্য প্রতিমা দর্শন ও উপার্জন। বিসর্জনের পর দেবীমুখ ও কাঠামো সংগ্রহ করতে একবুক জলে নেমে পড়ে আট-দশের ছেলেমেয়েগুলো। কলকাতা পুরসভার দৌলতে অবশ্য সব ঘাটে সেই সুযোগ না থাকলেও ইতিউতি দেখা মেলে ওদের। ভিজে যাওয়া মুখ বিক্রি হয় তিরিশ-চল্লিশ টাকায়। আর কাঠামোর দাম নির্ভর করে ক্রেতার মর্জির ওপর। অবশ্য সুন্দর মুখ তড়িঘড়ি বিক্রি হয় কুমোরটুলির শিক্ষার্থী শিল্পীর কাছে একটু বেশি দামেই। পুজো শেষে ওদের কেউ কেউ ঘরে ফিরে যায়। কেউ রয়ে যায় এই শহরেই। শৈশব হারিয়ে শুরু হয় রুজির সন্ধান।

নাটকের খোঁজে

নিজে অসামান্য নাট্যরচয়িতা বলেই বোধহয় বঙ্গদেশে তরুণ নাটককার খুঁজে বেড়ান মনোজ মিত্র। সত্যিই তো এ-বঙ্গে মৌলিক নাটকের বড় অভাব, যে কোনও থিয়েটার প্রযোজনাকে তাকিয়ে থাকতে হয় বিদেশি রূপান্তরের দিকে। এই চেনা পথ থেকে বেরিয়ে মনোজবাবু পঁচিশ বছর ধরে তাঁর সুন্দরম নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রতি বছর বাছাই করে আনছেন নাটক রচয়িতার নতুন মুখ। ফলে জমে উঠছে মৌলিক নাটকের সম্ভার, কিছু কাল আগে দে’জ থেকে প্রকাশও পেয়েছে সেই সুন্দর নাট্য সম্ভার। এ বারে সেরা নির্বাচিত হয়েছেন রাজীব রায় গোস্বামী, আর তাঁর পূর্ণ দৈর্ঘ্যের মৌলিক নাটক ‘জলের কাছে যাব’। ১৯ অক্টোবর সন্ধে ৬টায় শিশির মঞ্চে রাজীবকে ‘পার্থপ্রতিম স্মরণে সুন্দরম পুরস্কার’-এ ভূষিত করা হবে। এ ছাড়া এ বারেই মানব চন্দ স্মরণে চালু হল সেরা অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার, পাচ্ছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে বাড়তি পাওনা কার্তিক দাস বাউলের গান।

শান্তির লক্ষ্যে

বিশ্বশান্তির পথিক অশীতিপর দাইসাকু ইকেদা বৌদ্ধ সংগঠন সোকা গাকাই ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শান্তির লক্ষ্যে অবিরাম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছরই শান্তি ও মানবজীবনের নিরাপত্তার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে তিনি পেশ করছেন একটি করে প্রস্তাব। ২০১৪ সালে তাঁর প্রস্তাব পরিবর্তনশীল বিশ্বের জন্য মূল্যবোধ সৃষ্টি। তাঁর লক্ষ্য বিশ্ব জুড়ে এমন এক সমাজ গড়ার পথ দেখানো, যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজের সম্ভ্রমকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এ কাজের মূলমন্ত্র তিনটি: শিক্ষা প্রসার, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠন, এবং যুব সম্প্রদায়কে শামিল করা। ইকেদার এই শান্তি প্রস্তাব ‘ভ্যালু ক্রিয়েশন ফর গ্লোবাল চেঞ্জ: বিল্ডিং রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড সাসটেনেব্‌ল সোসাইটিজ’ বিষয়ে সম্প্রতি কলা কুঞ্জে এক আলোচনার আয়োজন করে ভারত সোকা গাকাই। ছিলেন মালবিকা সরকার, সুজিতকুমার বসু, আলতামাস কবীর এবং সংগঠনের ডিজি ইন্দ্রনাথ চৌধুরী।

গৌর খ্যাপা

কণ্ঠের পাশাপাশি তাঁর হাতের গাবগুবি বা খমকের জাদু মাতিয়ে রাখত শ্রোতাদের। তাঁর ছিল নিজস্ব লোক ভাষাজ্ঞান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু কথা বলে মুগ্ধ করে রাখতে পারতেন মানুষকে। বব মার্লে, জেনিস জপলিন, বব ডিলানের সঙ্গে সখ্য ছিল, ষাটটিরও বেশি দেশে অনুষ্ঠান করেছেন। আসলে ‘এ তো যে সে খ্যাপা নয়, এ হল গৌর খ্যাপা’। গত বছর প্রয়াত হন শিল্পী। ল্যাডলী মুখোপাধ্যায় বারো বছরের শ্রমে দেড় ঘণ্টার তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন ‘খ্যাপার মন বৃন্দাবন’। ৯ অক্টোবর নন্দন ১-এ ছবিটি দেখানো হল গৃহ সোসাইটির আয়োজনে।

দিনবদল

বিজয়ার পর আজ আর ক’জন ডাকঘরে চিঠি ফেলতে দৌড়ন? মোবাইল, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, নোটবুক এ সব থেকে তো সহজেই চটজলদি পাঠানো যায় শুভেচ্ছা বার্তা। ডাকঘরের এক কালের সেই রমরমা আর নেই।

সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) প্রতিষ্ঠা হয় ৯ অক্টোবর ১৮৭৪-এ। টোকিয়োতে অনুষ্ঠিত ইউপিইউ কংগ্রেস ৯ অক্টোবরকে ঘোষণা করে ওয়ার্ল্ড পোস্টাল ডে হিসেবে। সদ্য পেরিয়ে গেল সেই দিনটি, এ শহরের একদা অন্যতম ব্যস্ত ডাকঘরের সামনের ডাকবাক্সগুলি সে দিনও বড্ড জীর্ণ বিবর্ণ। সঙ্গে শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবিতে তারই কাছে বসে ল্যাপটপে মেল করতে ব্যস্ত তরুণী।

সুবর্ণজয়ন্তী

বিনোদনশিল্পে পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করলেন অমিতকুমার। ১৯৬৪-তে অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। প্রথম জীবনে মা রুমা গুহঠাকুরতার ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়ারে যোগ দেন অমিতকুমার। ছেলের সঙ্গীতপ্রতিভা সম্বন্ধে জানতে পেরে কিশোরকুমার তাঁকে মুম্বইয়ে নিয়ে যান। তেরো বছর বয়সে অমিতের প্রথম গান। শঙ্কর- জয়কিষেণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজন্মের গীতিকার-অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।

তাঁর গানে লিপ দিয়েছেন দিলীপকুমার অমিতাভ বচ্চন থেকে প্রসেনজিত্‌। ১৩ অক্টোবর কিশোরকুমারের মৃত্যু দিন। সেই দিনই অমিতকুমারকে সম্মান জানাবে ‘অমিতকুমার ফ্যান ক্লাব’। সংস্থাটিরও এ বার দশ বছর পূর্ণ হল। সে দিন অমিতকুমারের জনপ্রিয় হিন্দি গানগুলোর সংকলন নিয়ে প্রকাশিত হবে এমপি৩ ‘অ্যামেজিং অমিতকুমার’। শিল্পীর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণাও হবে সে দিন। সঙ্গের ছবিতে অমিতকুমার ও রাহুল দেববর্মন।

থিয়েটারের বাইরে

থিয়েটার করার বাইরে গ্রুপ থিয়েটারের কর্মীরা যুক্ত হয়ে পড়েন নানা সামাজিক কাজে। শুধু কলকাতায় নয়, কলকাতার বাইরেও। কলকাতার তিনটি নাট্যগোষ্ঠী এমনই এক কাজে সম্প্রতি শামিল হল। রঙরূপ, উষ্ণীক ও নান্দীকার তাদের সুপরিচিত পাঁচটি নাটক ‘মায়ের মতো’, ‘কাল্লুমামা’, ‘মাধবী’, ‘অজ্ঞাতবাস’ ও ‘নাচনী’ মঞ্চস্থ করল ৯-১৭ অক্টোবর চন্দননগর রবীন্দ্র ভবনে। উদ্দেশ্য শ্রীরামপুর চাইল্ড গাইডেন্স সেন্টার-এর শিক্ষক ও ছাত্রদের সাহায্য করা। ১৯৮৬ সালে মাত্র তিনজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রকে নিয়ে যাত্রা শুরু, আজ সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৬০। সঙ্গে এই শিক্ষাদানে অভিজ্ঞ শিক্ষকশিক্ষিকা। আর্থিক সমস্যা তবু নিত্যসঙ্গী, সে জন্যই এই নাট্য-উত্‌সব। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘ভবানীপুর স্বজন’ ও চন্দননগর ‘সম্পর্ক’র সদস্যরা।

নতুন করে

তখন সদ্য হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছি। একটা টিনের সুটকেস নিয়ে মফস্সল থেকে কলকাতায় আসা। ১৯৭৬। বাড়িতে ঘোর আপত্তি থিয়েটার করায়, অথচ চোখে স্বপ্ন অভিনেত্রী হব।’ বলছিলেন সন্ধ্যা দে, বাংলা নাটক নিয়ে অ্যাকাডেমিক চর্চায় যাঁর হাতযশ। সম্পাদনা করছেন অজিতেশ নাটকসমগ্র-র এক-একটি খণ্ড, বেরিয়েছে অজিতেশ গদ্যসংগ্রহ, বেরোবে তাঁর কবিতা ও গানের সম্ভারও, প্রকাশনায় প্রতিভাস। ১৯৭৬-এই প্রথম অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হন সন্ধ্যা, শ্যামপুকুরে নান্দীকার-এর ঘরে ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ গেয়েছিলেন তিনি। শুনে অজিতেশ কেয়া চক্রবর্তীকে ডেকে বললেন, ‘পাপপুণ্য-এর আদুরি পেয়ে গেছি।’ ’৭৭-এ নান্দীমুখ প্রতিষ্ঠার পর ’৭৮-’৮৩ আমৃত্যু অজিতেশের সঙ্গে আদুরি’র অভিনয় করেন সন্ধ্যা। বাংলা আকাদেমিতে ১৪ অক্টোবর অজিতেশের মৃত্যুদিনে স্মরণ অনুষ্ঠানে তাঁর লেখা ও সুরারোপিত নাটকের গান গাইবেন সন্ধ্যা, তাঁর নাট্যদল ‘গল্ফগ্রিন সাঁঝবেলা’ পাঠ করবে নাটক, বলবেন অশোক মুখোপাধ্যায়। বাংলা নাট্যকোষ (১৯৪৮-২০০০) বা অন্যধারার থিয়েটার: উত্‌স থেকে উজানে-র মতো প্রামাণ্য গ্রন্থের রচয়িতা হয়েও সন্ধ্যার খেদ: ‘পাপপুণ্য-এর পর আর তেমন চ্যালেঞ্জিং চরিত্র পাইনি।’ তিরিশ বছর পর ‘কসবা অর্ঘ্য’র কর্ণধার মনীশ মিত্র মিনার্ভায় ২৬ অক্টোবর সন্ধে সাড়ে ৬টায় তাঁর রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করছেন যে ‘সোফোক্লেসের হ্যামলেট যন্ত্রণা’, তাতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন সন্ধ্যা। জানালেন ‘এক নিঃসঙ্গ একাকী মা-র চরিত্র। নারী-মনস্তত্ত্বের জটিল অনুভূতি... অত্যন্ত কঠিন সেরিব্রাল অভিনয়।’

সার্ধশতবর্ষে

আধুনিক অসমিয়া সাহিত্যের প্রকৃত নির্মাতা সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া (১৮৬৪-১৯৩৮)। অথচ তাঁর ৭৪ বছরের জীবনে অধিকাংশ কেটেছে প্রবাসে কলকাতায় ও সম্বলপুরে। কলকাতার সঙ্গে তাঁর যোগ প্রায় ৩২ বছরের (১৮৮৬-১৯১৭)। উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় এসে সিটি কলেজ থেকে এফ এ এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ থেকে বি এ পাশ করেন। ১৮৯০-এ যুক্ত হন কাঠের ব্যবসায়। এ সময় দুই বছর সম্পাদনা করেছেন অসমিয়া মাসিকপত্র ‘জোনাকী’। ১৮৯১-এ বিয়ে করেন ঠাকুর পরিবারে। পাত্রী রবীন্দ্রনাথের ভাইঝি প্রজ্ঞাসুন্দরী। বিয়ের পর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ নাতজামাই লক্ষ্মীনাথকে উপহার দেন সোনার কলম। ১৯১৬-য় চাকরি নিলেন বার্ড কোম্পানিতে। ১৯১৭-য় গেলেন সম্বলপুরে। ১৯৩৮-এ অসমে ফেরা। ডিব্রুগড়ে ১৯৩৮-এর মার্চেই মৃত্যু হয় তাঁর। উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের গোড়ায় বাঙালি বিদ্বজ্জনদের অনেকেরই ধারণা ছিল অসমিয়া বাংলার উপভাষা এবং তার সাহিত্য তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। রবীন্দ্রনাথ ‘ভারতী’ পত্রিকায় যে ‘ভাষাবিচ্ছেদ’ প্রবন্ধ লেখেন (শ্রাবণ ১৩০৫) তাতেও এই ধারণার সমর্থন। লক্ষ্মীনাথ ‘পুণ্য’ পত্রিকায় ‘আসামী ভাষা’ প্রবন্ধে এর প্রতিবাদ করেন। এই শুরু। এর পর থেকে অনেক বাঙালি পণ্ডিতের সঙ্গেই বিতর্কে নামতে হয় তাঁকে। সারা জীবন প্রবাসে থাকলেও অসমিয়া অস্মিতার প্রতীক ছিলেন তিনি। তাই তিনি লিখতে পেরেছেন অসমের জাতীয় সংগীত হিসেবে গণ্য ‘মোর দেশ’ গানটি (১৯১০)। গত এক বছরে অসমের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সার্ধশত জন্মজয়ন্তী পালিত হয়েছে। ১৪ অক্টোবর এর সমাপ্তি অনুষ্ঠান ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্মারকগ্রন্থ ছাড়া প্রকাশ পাবে মন্দিরা দাসের লেখা ভাষাবিতর্ক: বেজবরুয়া আরু বাঙালি পণ্ডিত সমাজ, যেখানে বিতর্কের ইতিহাসের সঙ্গে থাকছে বাঙালি বিদ্যাজীবীদের মূল রচনা এবং লক্ষ্মীনাথের প্রত্যুত্তর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE