Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০

সিনেমায় শহরের অন্য মুখ

সাহায্যের হাত বাড়াল না শহর’ প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়ে ওঠে মহানগরীর না-মানুষ মুখ। ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাত্‌ বুকের বাঁ দিকটা চেপে পড়ে যান কেউ, মাঝরাস্তায় বাইক-দুর্ঘটনায় কাতরাতে থাকে রক্তাক্ত যুবক, জনসমক্ষে ইভটিজিংয়ের শিকার হয় তরুণী। আক্রান্ত, সন্ত্রস্ত মানুষটাকে ঘিরে পথচলতি মুখের ভিড়, পায়ের জটলা বাড়ে। সবাই তাকিয়ে দেখে, কেউ এগিয়ে আসে না। সমাজমনস্তত্ত্বের ভাষায় এটাই ‘বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট’, কাউকে চরম বিপদে দেখেও শ্যুধু দেখেই যাওয়া, বা মুখ ফিরিয়ে সটান চলে যাওয়া। ১৯৬৪ সালের নিউ ইয়র্কে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় আক্রান্ত হন কিটি জেনোভেস নামের এক তরুণী।

আততায়ীর এলোপাথাড়ি ছুরি চলেছিল অন্তত আধ ঘণ্টা, আটত্রিশ জন সাক্ষী ছিলেন কিন্তু কেউ ছুটে আসেননি, ডাকেননি পুলিশকেও। জেনোভেসের মৃত্যুর ফলাও রিপোর্টিং বাইস্ট্যান্ডার এফেক্টকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসে। ঠিক কী কারণে যে এমনিতে শিক্ষিত ও মূল্যবোধবান মানুষ বিপন্ন সহমানুষের যন্ত্রণা তাকিয়ে দেখেন কিন্তু তার নিরাময়ে এগিয়ে আসেন না, সেটাই আমাকে ভাবিয়েছিল, বলছিলেন অতনু ঘোষ। তাঁর নতুন ছবি ‘এক ফালি রোদ’ আদতে বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট নিয়েই একটা এক্সপেরিমেন্ট। স্ক্রিপ্টেই আছে কয়েকটা ‘মক ক্রাইসিস সিচুয়েশন’, যার শ্যুটিং হয়েছে ব্যস্ত শহরপথে।

গাড়ির জানলা কালো কাপড়ে মুড়ে ভেতরে লুকনো ক্যামেরায় শ্যুট হয়েছে, অ্যাক্টরদের পকেটে-থাকা মোবাইলে রেকর্ড হয়েছে গাইড ট্র্যাক। আর পথচলতি মানুষের প্রতিক্রিয়া? ছদ্ম হার্ট অ্যাটাক পরিস্থিতিতে গোড়ায় ‘জল দিন’ বলে এগিয়ে এসেছিলেন যিনি, তিনিই একটু পর ‘দোকান ফেলে এসেছি’ বলে ধাঁ। অধিকাংশই ঠুঁটো দর্শক, শ্যুধু একটি ছেলে একটি মেয়েকে চড় মারছে দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়ে এক জন বলেছেন ‘মার তো ছেলেটাকে!’ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে অতনুর ছবি।

ভাষাচার্য

রীতিমতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পণ্ডিত, কিন্তু ধোপদুরস্ত ধুতিপাঞ্জাবিতে ছিলেন ষোলো আনা বাঙালি। প্রয়াণের ৩৭ বছর পরেও বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর কাজ আকরসূত্রের মর্যাদাবাহী। রবীন্দ্রনাথ যাঁকে ‘ভাষাচার্য’ উপাধি দিয়েছিলেন, ২৬ নভেম্বর সেই সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় পা দেবেন ১২৫ বছরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে খয়রা অধ্যাপক পদে যোগ দেন ১৯২২-এ, অধ্যাপনা করেন ত্রিশ বছর। দেশবিদেশে বক্তৃতা, বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনার সঙ্গে নানা বিদ্বত্‌ প্রতিষ্ঠানের কর্মভার পালন করেছেন। কলকাতা সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে ২৬ নভেম্বর সাড়ে ৫টায় ৪ এলগিন রোডে বৈতানিক সভাকক্ষে সুনীতিকুমারের স্মরণ অনুষ্ঠানে আলোচনায় থাকবেন সব্যসাচী ভট্টাচার্য, পবিত্র সরকার, ছায়া চট্টোপাধ্যায়, উজ্জ্বলকুমার মজুমদার ও বারিদবরণ ঘোষ। বিশেষ অতিথি কাশীকান্ত মৈত্র। সমসাময়িক দৃষ্টিতে সুনীতিকুমার (সম্পা: পল্লব মিত্র, পারুল) বইটির পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করবেন চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়।

প্রসাদ কহে

রৌদ্রে-জলে সেই স্মৃতি মরে যায়নি। দোহার-এর আগেও প্রসাদের সেই গান-যাত্রার স্মৃতি। প্রসাদ মানে কালিকাপ্রসাদ। একটি সাংগীতিক পরিবারে জন্মসূত্রে লোকসংগীত ও শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম পেয়েছেন আশৈশব। স্বচ্ছন্দে বাজাতে পারেন নানা রকম বাদ্যযন্ত্র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে এম এ পাশ করে শ্যুরু করা গবেষণার সূত্রে চা-বাগান, কোলিয়ারি, টিসকো থেকে সংগ্রহ করেন বারোশো-রও বেশি লোকসঙ্গীত। আর সম্প্রতি যশরাজ-প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান মিউজিক অ্যাকাডেমির আর্কাইভ-প্রকল্পের জন্য কালিকা অসম, মেঘালয়, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের লোকশিল্পীদের প্রায় পাঁচ হাজার গান সংগ্রহ করেছেন। এই সূত্রেই গানের যাত্রায় তাঁর সঙ্গ হয়েছে বহু মাটির শিল্পীর সঙ্গে। লোকগান থেকে আদ্যন্ত নাগরিক ছবি ‘সেলফি’র জন্য প্রথম সংগীত-পরিচালনা, একক থেকে দোহার-এর মধ্যমণি হয়ে ওঠা এই যাত্রার কথা আর গান নিয়ে এ বার কালিকাপ্রসাদের একক অনুষ্ঠান, ‘প্রসাদ কহে’। ২৯ নভেম্বর সন্ধে ছটায় জ্ঞানমঞ্চে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে ‘আনন্দসভা’।

নাগচম্পাতলা

খানিকটা লন আর তার শেষে ছোট্ট একটা মঞ্চ। লনের ধারে একটি নাগচম্পা গাছ। এই নিয়েই ঘরোয়া একটি মঞ্চ তৈরি হয়েছে বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগে। নাম মুক্তমঞ্চ, নাগচম্পাতলা। বিশ্বভারতী-র নানা ধরনের অনুষ্ঠান হবে সেখানে। সেই মঞ্চের উদ্বোধন করবেন বিশ্বভারতী-র উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, ১ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায়। বলবেন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবে রবীন্দ্রসঙ্গীত। সে দিনই শ্যুরু হচ্ছে গ্রন্থনবিভাগের বিশেষ গ্রন্থমেলা। মেলা চলবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত, ২-৮টা। বিশেষ ছাড়ে সেখানে বিক্রি হবে কিছু বই, জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি গ্রন্থনবিভাগে আবার শ্যুরু হতে চলেছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষণ পাঠক্রম। নব্বই-পেরনো এই প্রকাশন-প্রতিষ্ঠান একটু একটু করে আবার পুনর্জীবিত হয়ে উঠছে, আশার কথা, সন্দেহ নেই।

কিশোর বাহিনী

১৯৫০-এর দশকে কলকাতার উপকণ্ঠে, শ্যামনগর-দক্ষিণপাড়া অঞ্চলে, স্থানীয় স্কুলের সদ্যনিযুক্ত শিক্ষক নির্মল সেন কিছু ছেলেমেয়েকে নিয়ে তৈরি করলেন ‘দমদম কিশোর বাহিনী’। সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরোক্ষ অনুপ্রেরণায়, অবশ্যই। কয়েক বছরের মধ্যেই ক্লাবটি স্থানীয় ছেলেমেয়েদের জীবনে এক আশ্চর্য ভূমিকা নিতে শ্যুরু করল। নাটক, গান-বাজনা, আবৃত্তি, খেলাধুলো তো বটেই, ক্লাবটি তৈরি করে ফেলল নিজস্ব পত্রিকা, পাঠাগার, সাপ্তাহিক স্বাস্থ্যশিবিরও। স্কাউট-গাইড, ব্রতচারী-র ব্যবস্থা হল। ক্লাবে এসে নাটক দেখলেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাটক শেখালেন বিভাস চক্রবর্তী। পত্রিকায় লিখলেন সত্যজিত্‌ রায়ও। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি অবশ্য সবই ফুরিয়ে গেল। সম্প্রতি নির্মল সেন, প্রসাদ দত্ত, রেখা গুহর মতো কিছু প্রয়াত প্রাক্তনীর স্মরণে জমায়েত হলেন ক্লাব-সদস্যরা। সকলেই প্রৌঢ়, কিন্তু পুরনো কথায়, আড্ডায় সময় পিছিয়ে গেল অর্ধ শতক। এ বার থেকে নিয়মিত দেখা করবেন সকলে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন পরস্পরকে।

মরমিয়া

মানুষের খোঁজ ভিন্ন, খোঁজার রাস্তাও ভিন্ন। লালনসাঁই, রসিদউদ্দিন, রাধাবল্লভ, ভবাপাগলা-- বাংলার এই সব সাধক মহাজনদের রচিত পদে যেমন রূপকধর্মী সহজ ভাষা, তেমনই রবীন্দ্রনাথের গানেও পরিশীলিত ধ্রুপদী ভাষায় অসীম জীবন দর্শনের খোঁজ। হৃদয়ের গভীর নির্জন আলোছায়া বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিফলিত হয়েছে বাংলার মরমিয়া সাধন সঙ্গীত এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতে। ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই / চিরদিন কেন পাই না’—এই পাওয়া না পাওয়া, চেতন-অচেতন, সাকার-নিরাকারের ভাবগত ব্যাখ্যা, বিন্যাস, উপলব্ধি ও দুই তরফের গান নিয়েই ২৭ নভেম্বর সন্ধে ৬ টায় রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান: ‘টেগোর অ্যান্ড দ্য মিস্টিক সঙস অফ বেঙ্গল’। হৃদকমলের এই আয়োজনে থাকছে লোকগানের দল সহজিয়া এবং শ্রীকান্ত আচার্য।

নতুন ভোর

সুরই সেতু বেঁধে দিল দুজনার মধ্যে। সমীর আইচ চিত্রশিল্পী আর ত্রিপুরার প্রাণেশ সোম সঙ্গীতশিল্পী। দুজনেরই গুরু অমর পাল। প্রায় একযুগ ধরে ওঁরা গান শিখছেন এক সঙ্গে। এ বারে ২৮ নভেম্বর সন্ধেয় বিড়লা অ্যাকাডেমি মঞ্চে ওঁরা সম্মান জানাবেন গুরুকে। এই মঞ্চ থেকেই জন্ম নেবে নতুন লোকগানের দল ‘ভোর’, ওঁদের সঙ্গেই আছেন আর এক শিল্পী রীতা বসু। ত্রয়ীর ভোর-এর অনুষ্ঠানে থাকবে ভাটিয়ালি, চটকা, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি, বা মারফতি গান এবং সঙ্গে কিছু কথা এই সব গানকে ঘিরে। শপথ থাকবে আগামীতে বাংলার নিজস্ব সম্পদ এই লোকগান ও তার পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার, জানালেন সমীর আইচ। সঙ্গের ছবিতে গুরুর সঙ্গে মহড়ায় দুই শিল্পী।

গল্পমেলা

শিশ্যুদিবসে শিশ্যুদের নানা ভাবে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ দিতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ও সিগাল ফাউন্ডেশন ফর আর্টস-এর যৌথ উদ্যোগে ভিক্টোরিয়ার খোলা মাঠে বসেছিল ‘গল্পমেলা: দ্য পিসওয়ার্কস স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যাল’।

ছবি: শ্যুভাশিস ভট্টাচার্য।

নবদিশা: আলিপুর ও টালিগঞ্জ থানা, সর্বশিক্ষা অভিযান, কৈলাস বিদ্যামন্দির, বিক্রমগড় হাইস্কুল, উইমেন্স ইন্টারলিঙ্ক ফাউন্ডেশন, চাইল্ড কেয়ার হোম, কালীঘাট শ্মশান সেন্টার, দিশা ফাউন্ডেশন, ওরিয়েন্ট গার্লস মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, হমারি মুশকান-এর শিশ্যুরা জীবনের ভাল দিকের সন্ধানে কী ভাবে এগিয়ে যেতে পারে তারই গল্প শোনালো সে দিন। সঙ্গে ছিল অভিনয়ও। খুদে গল্পবলিয়েদের সাবলীল কথনে উঠে এল সুস্থ জীবন ও পরিবেশের নানা কথা। সুযোগ ও যত্ন পেলে এরা যে অসাধ্যসাধন করতে পারবে, সে নজির রইল গল্পমেলায়।

দুই পথিকৃত্‌

প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এ বছরই শ্যুরু করেছে বিশেষ বক্তৃতামালা। ‘বাংলায় বিশ্বনাগরিকতা ও জাতীয়তাবাদ’ বিষয়ে সিরিজের পঞ্চম বক্তৃতাটি দেবেন ও পি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী শিব বিশ্বনাথন। দিল্লির সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটিজ-এ দু’দশক অধ্যাপনা করেছেন তিনি। অনুষ্ঠান ২৫ নভেম্বর বিকেল চারটেয়, জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসের উদয়শংকর হল-এ। অন্য দিকে জোকার গুরুসদয় সংগ্রহশালায় ২৯ নভেম্বর বিকেল চারটেয় বাংলার লোকসংস্কৃতি চর্চার পথিকৃত্‌ গুরুসদয় দত্তের জীবনের প্রায় অনালোচিত একটি দিক তুলে ধরবেন প্রশাসক তথা গবেষক আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিটিশ প্রশাসনের কাজে থেকেও দেশপ্রেমিক সত্তাটিকে সযত্নে লালন করছিলেন গুরুসদয়, লিলুয়ার শ্রমিক আন্দোলনে তাঁর রায় ছিল রাজশক্তির বিরুদ্ধেই। কখনও তিনি দাঙ্গা থামাচ্ছেন, কখনও জেলায় কৃষির উন্নয়নে সমবায় ব্যবস্থার প্রচলন করেছেন। গুরুসদয় সংগ্রহশালার সঙ্গে অনুষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দক্ষিণী সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র।

সাধারণ মেয়ে

কোনও বিখ্যাত মানুষের জীবনী নয়, গল্প নয় ইতিহাস বা সাম্প্রতিক রাজনীতির, নেহাতই সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প মঞ্চে নাটক করতে মন চাইছিল তাঁর। সেই ভাবনারই ফসল হিসেবে সম্প্রতি মঞ্চে অভিনীত হল অর্পিতা ঘোষের নির্দেশনায় নাটক ‘দুটো দিন’ (পঞ্চম বৈদিক, পরবর্তী অভিনয় ৩০ নভেম্বর, মিনার্ভায়)। ‘নাটক আধুনিক সময়ের অথচ সাদামাঠা মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প, চিরন্তন সত্য, অথচ সাধারণ। রাজনীতি, সমাজনীতি, ক্ল্যাসিকাল নাটকের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে একটু সাধারণ জীবনের কথা নাটকে বলার ইচ্ছে করছিল। সুযোগটা করে দিল ব্রাত্য বসু। ওর কাছে চাইলাম আর ও লিখে দিল একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের দুটো দিনের গল্প, বাবা আর দুই মেয়ের গল্প’, বলছেন অর্পিতা। বাবা দেবশংকর হালদার, দুই মেয়ের ভূমিকায় অর্পিতা আর পৌলোমী বসু। শ্যুধু নাটকই নয়, সিনেমাও পরিচালনা করছেন অর্পিতা, আর সেখানেও বন্ধু ব্রাত্য বসুর হাত। সিনেমার নাম ‘প্রস্তাব’। প্রস্তাবটা অবশ্য প্রথমে ছিল নাটকের। ‘একটা গল্প নিয়ে নাটকের কথা ভাবছিলাম, ব্রাত্যকে বলতেই ও বলল, নাটক না, এটা নিয়ে সিনেমা বানাও। আমি, সিনেমা! চমকে গিয়েছিলাম, শেষে ব্রাত্য-র উত্‌সাহেই সাহস সঞ্চয়।’ মূল তিন চরিত্রে ব্রাত্য বসু, ঋত্বিক চক্রবর্তী আর ত্রিধা চৌধুরী। শ্যুরু হয়েছে ছবির কাজ। কিন্তু প্রস্তাবটার মধ্যে একটু বিদেশি বিদেশি গন্ধ আছে না? ‘‘বহুদিন আগে দেখা এক বিদেশি ছবি ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’-এর প্রোপোজালটুকুই এ গল্পে আছে, বাকিটা অন্য কাহিনি,’ হাসতে হাসতে সাফ জবাব অর্পিতা-র।

বিদুষী

রবীন্দ্র-শতবর্ষে নতুন করে ‘সন্দেশ’ প্রকাশিত হল (১৯৬১), সম্পাদক সত্যজিত্‌ রায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়। নতুন পর্বে এক ঝাঁক নবীন লেখকের মধ্যে প্রথম বছরেই পাঠকদের নজর কাড়ে গৌরী চৌধুরীর লেখা ‘মালশ্রীর পঞ্চতন্ত্র’। পুরনো গল্প নতুন ছাঁদে, নতুন স্বাদে পরিবেশিত হল বিদুষী লেখিকা একটি লেখাতেই ছোটদের মনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেন। এ লেখা পড়ে লীলা মজুমদার বলেছিলেন, ‘এর ভাষা হল খাঁটি বাংলা, যে-ভাষা এ দেশের জল-মাটি-হাওয়া-ফুল-ফল দিয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে। আত্মসচেতন শহুরে ভাষা এ নয়, এ হল ঘরোয়া ভাষা, যে ভাষায় ছোটো ছেলেমেয়েরা মাকে ডাকে।’ সেই লেখিকা ছোটদের জন্য লিখেছেন মনের আনন্দে।

স্কেচ: সুব্রত চৌধুরী।

বিবাহসূত্রে তিনি চৌধুরী থেকে ধর্মপাল হয়েছেন, সংস্কৃত-সাহিত্য-সম্ভার গ্রন্থমালার জন্য অনেকগুলি কাব্য-নাটক অনুবাদ করেছেন, তবু ছোটদের জন্য লেখায় ক্লান্তি নেই। বহুপ্রজ ছিল না তাঁর কলম, তবে তা ছিল রত্নপ্রসূ। ঠিক অবনীন্দ্র ঘরানার। এই লেখার জন্য পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার। গৌরী ধর্মপাল (১৯৩১-২০১৪) ছিলেন সংস্কৃতের নামী শিক্ষক, কৃতী ছাত্রী। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, কলাবিভাগের সব শাখা মিলিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। ছোটদের জন্য লেখায় ছিল তাঁর মানসিক স্ফূর্তি, আর বেদ ছিল তাঁর জীবনচর্চার বিষয়। প্রথম জীবনে খুলেছিলেন জোড়বাংলা পাঠশালা, সেখানে ছবি আঁকা শেখাতেন আর্ট কলেজের নবীন স্নাতক, ইংরেজি পড়াতেন খাস অক্সোনিয়ান, আর তিনি পড়াতেন সংস্কৃত ও বাংলা। অর্থাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরিণত বয়সে খুলেছিলেন বেদ পাঠশালা। বেদ নিয়ে লিখেছেন অনেকগুলি বই। বস্তুত বেদ তাঁর যাপনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় শেক্সপিয়র সরণির অরবিন্দ ভবনে তাঁর স্মরণসভা।

kolkatar karcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy