Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০

নাট্যোত্‌সবে ভারতীয় সংস্কৃতির বহুস্বর

অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর একটা ছোট্ট সম্প্রদায়কে কী ভাবে বিশ্বায়নের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়তে হচ্ছে, তা নিয়েই মণিপুরের কোরাস রেপার্টারি থিয়েটার-এর প্রযোজনা ‘বাক্‌খাই’ (বাঁ দিকে স্থিরচিত্র)। নির্দেশক থওয়াই থিয়াম (রতন থিয়াম-এর পুত্র) জানিয়েছেন ‘বিশ্বায়ন আস্তে আস্তে সম্প্রদায়টির মানুষজনকে সামাজিক সম্মান থেকে চ্যুত করে ফেলে, প্রায় অনস্তিত্বের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। সম্প্রদায়টি হারিয়ে ফেলে তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মায় পেশা পর্যন্ত। ইউরিপিদিসের নাটকটাকে এ ভাবেই বিন্যস্ত করেছি।’ নান্দীকার-এর ৩১তম জাতীয় নাট্যোত্‌সবে (অ্যাকাডেমিতে ১৬-২৫ ডিসেম্বর) কলকাতার দর্শক দেখতে পাবেন নাটকটি। ‘মণিপুর বা উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখন দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ।

বাকি দেশটার সঙ্গে এর প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব বা বোঝাপড়া নিয়ে সব সময়ই সজাগ থাকা উচিত আমাদের। প্রতি বারের মতো এ বারেও চেষ্টা করেছি নাট্যোত্‌সবে ওখানকার প্রতিনিধিত্ব রাখতে। অসমের নাট্যদলও আসছে।’ বলছিলেন নান্দীকার-এর কর্ণধার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। ‘সিকিম, ভুবনেশ্বর, বিহার, দিল্লি, জম্মু— সারা দেশ থেকেই নানা নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনা থাকছে। কর্পোরেট প্রভুত্বের দাপটে দেশের প্রত্যন্ত আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে ‘পিছিয়ে-পড়া’ তকমা এঁটে দেওয়া হচ্ছে। চেষ্টা চলছে বিভিন্ন আঞ্চলিকতার বহুস্বরকে একমাত্রিক পরিসরে বেঁধে ফেলার। এর বিপরীতে হেঁটে বহুস্তরীয় ভারতীয় সংস্কৃতি উজ্জীবনের জন্যেই এ উত্‌সব।’ দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা, কলকাতা, ছোটদের এবং বাংলাদেশের নাটকের সঙ্গে খালেদ চৌধুরীর উপর প্রদর্শনী থাকছে নাট্যোত্‌সবে। এ দিকে কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র’র বিংশ নাট্যোত্‌সবও খালেদ চৌধুরীর স্মৃতিতে উত্‌সর্গীকৃত। কল্যাণী নাট্যচর্চা’র তিনটি প্রযোজনার মঞ্চ রূপায়ণ করেছিলেন খালেদ চৌধুরী। এ-উত্‌সবে কাম্যু’র জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘হারিয়ে যায় মানুষ’-এর পুনর্নির্মাণ ও পুনরভিনয় করছে কল্যাণীর এই নাট্যগোষ্ঠী (ডান দিকে স্থিরচিত্র)। বাংলা নাটকের এ-উত্‌সবের উদ্বোধনে (ঋত্বিক সদন, কল্যাণী, ১৭-২৮ ডিসেম্বর) মানবিক কাজের সঙ্গে যুক্ত অথচ অগোচরে থাকা কিছু মানুষকে সম্মান জানানো হবে। এরই মধ্যে দর্শককে মাতিয়ে সদ্য সমাপ্ত হল বিধাননগরে লবণহ্রদ মঞ্চে ‘সল্টলেক থিয়েটার’ নাট্যসংস্থার ত্রয়োদশ নাট্যোত্‌সব (৭-১৪ ডিসেম্বর)। শীতের নানা উত্‌সবের মধ্যে মানুষজনের সবচেয়ে পছন্দ এই থিয়েটারের ওম!

প্রয়াণ

জঙ্গলের মানুষের জঙ্গলে কী অধিকার ছিল? ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস থেকে সদ্য পাশ করা তরুণ অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭০-এর দশকে মেদিনীপুরের আরাবাড়ি জঙ্গলে কাজ করতে গিয়ে দেখেন সেখানকার প্রান্তিক মানুষদের যন্ত্রণা। তাঁদের নিয়ে তৈরি করলেন সংগঠন। সরকারি বনবিভাগের সঙ্গে চুক্তি হল ‘যৌথ বন পরিচালনা’র। ঠিক হয়, জঙ্গলের কাঠ সরকার বিক্রি করলে লাভের ২৫ শতাংশ পাবেন জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষ। জঙ্গলের কাঠ, ফলমূলে অধিকার থাকবে তাঁদের। জঙ্গলকে রক্ষা করবেন তাঁরাই। চুক্তিটি আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত হয়। ১৯৯৪-এ এল ‘পল গেটি’ পুরস্কার। আজও দেশের জঙ্গলে এই নিয়মই প্রযোজ্য। অজিতবাবু বিশ্বব্যাঙ্কে কাজ করেছেন। বিদেশের জঙ্গলের জন্যও দিয়েছেন মূল্যবান পরামর্শ। তাঁর গবেষণাকে ভিত্তি করে যৌথ বন পরিচালনা নিয়ে দুটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। লিখেছেন মনে বনে বনান্তরে বইটি। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন তিরাশি বছর বয়সে।

আর্মানি সংস্কৃতি

কলকাতার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে আর্মেনিয়ানদের ইতিহাস। ওঁদের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে সযত্নে ক্যামেরায় ধরেছেন আলোকচিত্রী ও গবেষক রঙ্গন দত্ত। ওঁর সংগ্রহে রয়েছে কলকাতার তিনটি এবং চুঁচুড়ার আর্মেনিয়ান চার্চের ছবিও। রঙ্গনের তোলা আলোকচিত্র নিয়ে ধর্মতলার ই-মলে শুরু হল প্রদর্শনী ‘আর্মেনিয়ানস ইন ক্যালকাটা, চার্চেস অ্যান্ড ফেস্টিভ্যালস’। একটি আলোকচিত্র বিপণন সংস্থা আয়োজিত প্রদর্শনীটি চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১০-৮ টা প্রতিদিন। সঙ্গে আর্মানি ক্রিসমাসের ছবি।

প্রাক্তনী

কলেজে পড়ার সময় স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে জেলে যান, সেখান থেকেই স্নাতক হন ময়মনসিংহের পূর্ণেন্দুপ্রসাদ ভট্টাচার্য। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। পরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কাজ করেন। আই এস আই-এ প্রশান্ত মহলানবিশের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। ৩৭ বছর সম্পাদনা করছেন ত্রৈমাসিক ‘সাহিত্যমেলা’। বর্তমানে শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক কেন্দ্রের সঞ্চালক ও পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি। বেশ ক’টি গবেষণাগ্রন্থের লেখক। পেয়েছেন নানা সম্মান। ৯৫ বছর বয়সেও স্বচ্ছন্দে ট্রাম-বাসে চলাফেরা করেন। ১৬ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটেয় এই বিশিষ্ট প্রাক্তনীকে সংবর্ধনা দেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তনী সংস্থা।

সময়োপযোগী

যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন তখনও পদমর্যাদার পরিসরে নিজেকে আটকে রাখতেন না। এ রাজ্যের নানা সংকটে হয়ে উঠেছিলেন প্রায় বিবেকের মতো। তিনি গোপালকৃষ্ণ গাঁধী, মহাত্মা গাঁধীর পৌত্র। আজ, ১৫ ডিসেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁধীয়ান স্টাডি সেন্টারের উদ্যোগে আলিপুর ক্যাম্পাসে দুপুর ২টোয় অবিনাশচন্দ্র দত্ত স্মারক আলাপচারিতায় তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে অধ্যাপক চিন্ময় গুহ। সারা দুনিয়া জুড়ে, আমাদের গোটা দেশ জুড়ে যে ক্রমবর্ধমান সংকট, তা-ই তাঁদের কথা বলার বিষয়: ‘অপরাধ, বিবেক, প্রায়শ্চিত্ত: ভারতীয় অভিজ্ঞতা’।

সেই নাটক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই ১৯৪১-এ জার্মান ছাত্রটি গিয়েছিলেন ডেনমার্কে তাঁর শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে। দু’জনেই কোয়ান্টাম ফিজিক্সের দুই দিকপাল, নিলস বোর ও ভের্নার হাইজেনবার্গ। কেন গিয়েছিলেন হাইজেনবার্গ? পরমাণু অস্ত্র তৈরি নিয়ে তাঁদের মধ্যে কি কোনও কথা হয়েছিল? এ নিয়ে নানা মতের পাশাপাশি রয়েছে দুই পণ্ডিতের পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি, বহু বিতর্ক। মাইকেল ফ্রেন ১৯৯৮-তে এই নিয়ে লেখেন বিখ্যাত নাটক ‘কোপেনহেগেন’। বিদেশে বহু-অভিনীত নাটকটি এ বার মঞ্চস্থ হতে চলেছে কলকাতায়। উপলক্ষ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলন উত্‌সব। লেখকের অনুমতি নিয়ে নাটকটির বাংলা অনুবাদ করেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অভিনয় ও পরিচালনায় ২৩ ডিসেম্বর ডিরোজিয়ো হলে দেখা যাবে নাটকটি।

মুক্তিযোদ্ধা

বিটারসুইট ভিক্টরি/ আ ফ্রিডম ফাইটার্স টেল (ইউনিভার্সিটি প্রেস, ঢাকা)। না, এটা কোনও ইতিহাসগ্রন্থ নয়, ১৯৭১-এর স্মৃতি। অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেই ঝোড়ো দিনগুলির কথাই লিখেছেন কাইয়ুম খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখন, পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন মুক্তিবাহিনির সেক্টর সেভেন-এ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হয়ে। আশির দশকের শুরুতে আমেরিকায় পাড়ি, গবেষণা সাঙ্গ করে শিক্ষকতা করেন আমেরিকারই নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে ফিরে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘মুক্তিযোদ্ধা’র সম্মান পেতে-পেতে তাগিদ অনুভব করেন স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবৃত্তান্ত লেখার। ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের ‘বিজয় দিবস’-এ কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে যে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধিত করা হবে, তাঁদের মধ্যে কাইয়ুম খান-সহ থাকবেন বাংলাদেশের অন্য প্রবীণ স্বাধীনতা-সংগ্রামীরাও।

শহরনামা

শহরের নানা টানাপড়েন, সমস্যা, বেঁচে থাকার উপায়, উন্নয়নের ডামাডোল, প্রান্তিক বাসিন্দা, ভালমন্দের দ্বন্দ্ব নিয়ে নিয়ত ছবি তৈরি হয়ে চলেছে। প্রামাণ্যচিত্র। তাতেই ধরা পড়ে কতটা জীবন্ত বা মুমূর্ষু একটা শহর। এমনই একগুচ্ছ ছবিতে এ দেশের নানা শহরের মুখ, কলকাতা দিল্লি মুম্বইয়ের সঙ্গে বেঙ্গালুরু হায়দরাবাদও। অনির্বাণ দত্তের ‘ওয়েস্টেড’ থেকে মীরা নায়ারের ‘ইন্ডিয়া ক্যাবারে’। ১৭-১৯ ডিসেম্বর রোটারি সদনে ‘শহরনামা: আ সিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। ছবি দেখানোর ফাঁকে-ফাঁকে থাকবে আলোচনাও। উদ্যোক্তা ফিল্মস ডিভিশন, সঙ্গে দ্য ক্যালকাটা সামারিটানস, অ্যাকশন এড, সিরিক।

রকস্টার

‘রক নিয়ে, রক শিল্পীদের নিয়ে যে ভাবে চর্চা করে চলেছি, কেউ করেননি সে ভাবে। সেই ষাটের দশক থেকে এই শিল্পীরা রক সংগীতে যা যা প্রথা তৈরি করেছেন, তা নিয়ে লিখেছি। সারা বিশ্বের রক মনীষীদের কথা বলতে চেয়েছি, ফিরে যেতে চেয়েছি সেই সব ঐতিহাসিক চরিত্রের কাছে।’ নিজের নতুন বই রকস্টার (আনন্দ) নিয়ে বলছিলেন রূপম। বাংলায় রক বা রকস্টার বলতে তাঁকেই ভাবেন বাঙালি, মনে ভেসে ওঠে তাঁর অননুকরণীয় অদম্য ‘স্টেজ অ্যাক্ট’। পেয়েছেন জাতীয় থেকে রাজ্য স্তরের বহু পুরস্কার। সংগীতচর্চার পাশাপাশি চালু তাঁর নিয়মিত লেখালেখিও, ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে দু’টি বই। ‘সেগুলিতে উঠে এসেছিল আমার গানের কথা। আর এই নতুনটিতে রক শিল্প ও শিল্পীদের কথা লিখতে-লিখতে আসলে আমার চর্চার শিকড়ই খুঁজেছি।’ ২০ ডিসেম্বর সন্ধে সওয়া ৬টায় উত্তম মঞ্চে রকস্টার-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। গ্রন্থপ্রকাশ উপলক্ষে রূপম একাই গাইবেন তিন ঘণ্টা, একাই বাজাবেন সমস্ত যন্ত্রানুষঙ্গ। নিজের জনপ্রিয় বা বহুশ্রুত গানগুলির বদলে মূলত তাঁর অপ্রকাশিত গানই শোনাবেন শ্রোতাদের।

রুট ৫৫

কেউ উত্তরপাড়া থেকে আবার কেউ উড়ে আসবেন ক্যালিফর্নিয়া বা সিঙ্গাপুর থেকে। প্রজন্ম আর ভৌগোলিক ব্যবধান যা-ই হোক না কেন, ওঁদের মিল এক জায়গাতেই। ওঁরা শিবপুর বি ই কলেজের প্রাক্তনী। ২১ ডিসেম্বর সকাল সাতটায় ধর্মতলায় মেট্রো সিনেমার সামনে থেকে হাওড়া ব্রিজ হয়ে ওঁরা দৌড়বেন শিবপুর বি ই কলেজ পর্যন্ত। দৌড়ের নাম ‘রুট ৫৫’। অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ দেওয়া হবে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে।

পরম

বাংলার লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ ও কলাবতী মুদ্রার মুখপত্র ‘পরম’ এবং প্রকৃতি ভ্রমণ পত্রিকা ‘রংরুট’ মিলে ১৮/৭ ডোভার লেনে ১৬ ডিসেম্বর দুপুর একটায় শুরু করতে চলেছে গ্রামীণ শিল্পের স্থায়ী বিপণি ‘পরম’। সেখানে একই ছাদের তলায় মিলবে মেদিনীপুরের চন্দনপুরের কাঁসার কাজ, ঢোকড়া, দিনাজপুরের মেল্লি, শোলার ফুল আর মুখোশ, কুনোরের ঘোড়া আর পোড়ামাটির কাজ, বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস, দুর্গা পট, জড়ানো পট, পটুয়াদের টেপা পুতুল, ইত্যাদি। উদ্বোধন করবেন চদর বদর পুতুলনাচ শিল্পী দিনাজপুরের ডমন মুর্মু।

নতুন চোখে

বিজ্ঞানের আবহাওয়ার সম্বন্ধে আমাদের দেশের লোকের মনটা চন্দ্রলোকের মতোই। যতটা সাধ্য, হাওয়া খেলিয়ে দেবার ইচ্ছা অনেক দিন থেকে মনে ছিল, কিন্তু হাওয়াটা ওজনে ভারী হয়েছে এমন নালিশ কানে উঠেছে।-- মাল থাকবে অথচ ভার থাকবে না এমন জাদুবিদ্যা ওস্তাদের পক্ষেই সম্ভব।’ বিশ্বপরিচয় প্রসঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রকে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আজ থেকে প্রায় আট দশক আগে সবার উপযোগী করে বিজ্ঞানগ্রন্থ লেখার প্রথম ফসল হিসেবে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয়। এ বার রবীন্দ্রনাথের গানের ভিতর দিয়ে বিশ্বপরিচয়-কে নতুন করে দেখা ও দেখানোর অভিনব কাজটি শুরু করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। আদতে পদার্থবিদ তিনি, তাই বিশ্বপরিচয় তথা রবীন্দ্রনাথকে দেখেছেন বিজ্ঞান-দৃষ্টিতে। এই নিয়ে তিনি সম্প্রতি বললেন বেঙ্গল ক্লাবে। ‘রবীন্দ্রনাথ: গানে-বিজ্ঞানে’ শীর্ষক সেই আলোচনায় পদার্থবিদ্যার নানা তত্ত্বের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নানা গানকে মিলিয়ে দেখেছেন সুশান্তবাবু। সম্প্রতি শহরে এসেছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগে নতুন মুক্তমঞ্চ ‘নাগচম্পাতলা’ উদ্বোধন করতে। বললেন, ‘বিশ্বপরিচয়ের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানদৃষ্টির পরিচয় তো পাওয়া যায়ই, সেই সঙ্গে তাঁর সঙ্গীতস্রষ্টার মনটি যে কতটা এই মহাবিশ্ব-মহাকাশের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল সেটাও বোঝা যায়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চর্চা করার চেষ্টা করেছি।’ জানালেন, বিশ্বপরিচয়-এর ইংরেজি অনুবাদের কাজ চলছে, প্রকাশিত হবে গ্রন্থনবিভাগ থেকে। শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় বিভিন্ন উপলক্ষে তাঁর ভাষণগুলি নিয়ে একটি সংকলনেরও কাজ চলছে।

সারস্বত

কতটা পথ হাঁটলে একটা মাইলস্টোনে পৌঁছনো যায়? দেশ স্বাধীন হওয়ার দশ বছরের মাথায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তেইশ বছরের ঝকঝকে এক তরুণ। ছাত্র তৈরির সমান্তরালেই শুরু হল সমকালীন প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা। তাঁর গবেষণার ধারা ২০১৪-তেও অনবচ্ছিন্ন। সমাজবিজ্ঞানী জয়ন্তকুমার রায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ‘সেন্টিনারি প্রফেসর’ ছিলেন তেইশ বছর। ১৯৬৮-তে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত বই ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ন্যাশনালিজম অন ট্রায়াল ভাবী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার দিগ্‌দর্শন জুগিয়েছিল। আবার আশির দশকে তাঁরই লেখায় বাংলাদেশে দারিদ্র দূরীকরণে ক্ষুদ্র ঋণ ও সেই সূত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি নিয়ে তাঁর সুদীর্ঘ গবেষণা। সাম্মানিক অধিকর্তা ও পরে সর্বময় প্রশাসকের দায়িত্বে সমৃদ্ধ করেছেন কলকাতার মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ-এর মতো সংস্থাকে। এই মুহূর্তে ব্যস্ত সীমান্ত-পারের সন্ত্রাস বিষয়ে একটি বইয়ের লেখন-সম্পাদনায়। শুকনো তত্ত্বসর্বস্বতায় বিশ্বাসী নন, গবেষণাকে মিলিয়েছেন সমাজকল্যাণমূলক কাজে। তাঁরই দেখানো পথে রাজ্যের প্রায় চারশো গ্রামে অন্তত ন’হাজার পরিবার দারিদ্রসীমার ওপরে উঠতে পেরেছে। বয়স সম্প্রতি আশি পেরিয়েছে, কিন্তু ‘অশীতিপর’ শব্দের অর্থটাই পালটে দিয়েছেন তিনি।

kolkatar karcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy