Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খালের হাল সেই তিমিরে, এগোলই না উদ্ধারকাজ

চব্বিশ ঘণ্টা পরেও বাগজোলা খালে পড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করা গেল না। কারণ, বাগজোলা খাল পরিষ্কারের কাজই শুরু করা যায়নি মঙ্গলবার সারা দিনে। যে ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কোন পাঁকে খাবি খাচ্ছে খাল সংস্কারের কাজ। বিকেলের দিকে কিছুটা অংশ পরিষ্কার করা হয়। এক জন ডুবুরিও নামেন। তবে নিখোঁজ ব্যক্তির হদিস মেলেনি।

আবর্জনায় ভরা বাগজোলা খালের এই অংশেই ঘটে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।

আবর্জনায় ভরা বাগজোলা খালের এই অংশেই ঘটে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টা পরেও বাগজোলা খালে পড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করা গেল না। কারণ, বাগজোলা খাল পরিষ্কারের কাজই শুরু করা যায়নি মঙ্গলবার সারা দিনে। যে ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কোন পাঁকে খাবি খাচ্ছে খাল সংস্কারের কাজ। বিকেলের দিকে কিছুটা অংশ পরিষ্কার করা হয়। এক জন ডুবুরিও নামেন। তবে নিখোঁজ ব্যক্তির হদিস মেলেনি।

খালে আটকে পড়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে উদ্ধার করা দূরে থাক, এ দিন বিকেল পর্যন্ত খালে নামতেই পারেননি ডুবুরি বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, আবর্জনা সাফ না করে খালে নামলে তাঁদেরই প্রাণ সংশয় হতে পারে। আর এর জেরেই ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সেচ দফতরের পরিকাঠামোর হাল নিয়ে। অভিযোগ, নিয়মমাফিক খাল সাফাই তো হচ্ছেই না, উল্টে জরুরি ভিত্তিতে খাল পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়লে সেটুকু করার মতো পরিকাঠামোই নেই ওই দফতরের।

বছর কয়েক আগে বাগজোলা খালে উল্টে গিয়েছিল যাত্রিবাহী বাস। মাসখানেক আগে পড়ে যান এক বাইক-আরোহী। এর পরে সোমবার রাতে অজ্ঞাতপরিচয় কাগজকুড়ানি খালে পড়ে যান। গত দু’বারের মতো এ বারও ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে হিমশিম অবস্থা। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দু’বারের ঘটনায় তবু খালের জলে নেমে উদ্ধারকাজ শুরু করা গিয়েছিল। কিন্তু এ বার যে জায়গায় ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি আটকে পড়েছেন বলে অনুমান, সেখানে এতটাই আবর্জনা জমে রয়েছে যে উদ্ধারকার্যে নামতেই পারছেন না কেউ।

কেন সারা দিনে খাল পরিষ্কার হল না? পুলিশ ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, খালের যা অবস্থা তাতে মানুষ নেমে ঠিকমতো পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। যন্ত্র দিয়ে করতে হবে। কিন্তু সারা দিনে সেই যন্ত্র পাওয়া গেল না কেন?

সেচ দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, খাল পরিষ্কারের ড্রেজিং যন্ত্র এখন কাছাকাছি নেই। তা নিয়ে এসে খালে নামিয়ে পাঁক তোলার কাজ শুরু করতে করতেই দিন দুই-তিন লেগে যাবে। এই পরিস্থিতিতে হাল্কা ওজনের যন্ত্র দরকার, যেটি খালে দ্রুত নামানো যাবে আবার খালের অনেক গভীর প্রবেশ করিয়ে পাঁক তোলা যাবে। ঘটনাস্থলে থাকা সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, এ রকম যন্ত্র এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে নেই।

অন্য কোনও বেসরকারি সংস্থা থেকে এমন হাল্কা যন্ত্র পাওয়া যায় কি না, সেই চেষ্টাও করেছে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “আমরা সকাল থেকেই বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছি, যাতে অন্তত জলে নেমে খোঁজাখুজি শুরু করা যায়। বিকেলের দিকে কিছুটা পরিষ্কার করে কোনও রকমে এক জন ডুবুরি নামে।”

এ দিন তাই কার্যত সারাদিন বসেই কাটিয়ে দেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মী ও ডুবুরিরা। এক ডুবুরি ভোলানাথ পাল বলেন, “আমরা তো জলে নেমে কাজ করি। পাঁকে নেমে নয়। এই খালে নামলেই প্রায় আট ফুট ডুবে যাচ্ছি। পাঁকের মধ্যে অক্সিজেন মাস্ক কাজ করে না। খালের জলে জমা আবর্জনায় বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হচ্ছে। খালে নামলে অসাবধানতায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।”

একই কথা বলেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মী বিজয় বীর। তিনি বলেন, “২৫ ডিসেম্বর রাতে যে মোটরবাইক চালক পড়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে উদ্ধার করতেও এসেছিলাম। তখন খালে যে সমস্যা ছিল, সেই সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ওই ঘটনা থেকে কেউ শিক্ষা নেয়নি। ভেবেছিলাম ওই দুর্ঘটনার পরে হয়তো খালের এই অংশ কিছুটা পরিষ্কার হবে। তা হওয়া দূরে থাক, আরও আবর্জনার স্তূপ জমেছে।”

বাগজোলা খালের কেষ্টপুর অংশে জমা আবর্জনার এই হালের কথা মেনে নিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যাও। তিনি বলেন “কেষ্টপুর অংশে আবর্জনা স্তূপ জমে থাকলেও বাগজোলা খাল সাফাইয়ের কাজ কিন্তু হচ্ছে। দমদমের দিকে আপার বাগজোলা ও রাজারহাটের দিকে লোয়ার বাগজোলা খালের পলি তোলা ও খাল কাটার কাজ জোরকদমে চলছে।” কিন্তু কেষ্টপুরের অংশে বাগজোলা খাল পরিষ্কার হচ্ছে না কেন? বিশেষত যেখানে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে এবং উদ্ধারকাজ করা যাচ্ছে না? মন্ত্রীর যুক্তি, “ওই অংশে সাফাইয়ের কাজে হাত দেওয়া হবে। ওখানকার লকগেটে চারটি ভেস্ট রয়েছে। ভাল ভাবে জল যাওয়ার জন্য আরও ছ’টি ভেস্ট করা দরকার। তবে বাগজোলা খালের উপর দিয়েই বাগুইআটি উড়ালপুল হচ্ছে বলে ওই অংশের কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।” মন্ত্রীর দাবি, উড়ালপুলের কাজ শেষ হলেই আরও ছ’টি ভেস্ট তৈরির কাজ ও খালের পাঁক তোলা শুরু হবে। তিনি বলেন, “শুনেছি মার্চেই উড়ালপুলের কাজ শেষ হবে। তা হলে আমরা মার্চেই কাজ শুরু করতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bagjola canal bagjola khal rescue operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE