লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগে দমদম এলাকায় এক দিনে তিনটি খাল সংস্কারের শিলান্যাস করেছিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কাজ শুরু হবে দিন কয়েকের মধ্যেই। সেই সঙ্গে জানিয়েছিলেন ওই এলাকার দীর্ঘ দিন ধরে ঠিক মতো সংস্কার না হওয়া বাগজোলা খালেরও পলি তোলার কাজ শুরু হবে।
লোকসভা ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে মাস দেড়েকের বেশি। চলে এসেছে বর্ষা। বর্ষার প্রথম টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ভেসে গিয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি। বাগজোলা বাইপাস ক্যানাল ওয়ান ও ক্যান্টনমেন্ট খাল প্রথম বর্ষাতেই কার্যত উপচে পড়েছে। বাগজোলা খাল সংস্কারের কাজ শুরু হলেও অভিযোগ, খালের বেশির ভাগ জায়গায় পলি তোলার কাজ শুরুই হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের তাই আশঙ্কা, আর একটা টানা বৃষ্টিতেই ভেসে যাবে বাগজোলা খাল সংলগ্ন এলাকা। প্রশ্ন উঠেছে, ভোট কেটে যাওয়ার পরে এখনও কেন কোনও খাল সংস্কারের কাজে হাত পড়ল না? তাঁদের আশঙ্কা, বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে আগামী দিনে খাল সংলগ্ন দমদমের বিস্তীর্ণ এলাকার পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হবে।
বাগজোলা বাইপাস ওয়ান (বি বি ওয়ান) খাল সংলগ্ন বেশির ভাগ এলাকাই চলতি সপ্তাহের বৃষ্টিতে জলমগ্ন। বাগুইআটি এলাকার রবীন্দ্রপল্লি, সাহাপাড়া, প্রতিবেশীপাড়াই শুধু নয়, ওই খাল যেখানে শেষ হচ্ছে সেই জগৎপুর এলাকারও বেশ কিছু অংশে জল জমেছে। প্রায় একই অবস্থা ক্যান্টনমেন্ট খালেও। কৈখালি থেকে শুরু হওয়া ওই খাল মল রোড, শ্যামনগর হয়ে দমদম পার্কের কাছে বাগজোলা খালে গিয়ে মিশেছে। ওই খাল সংলগ্ন এলাকরাও অবস্থা প্রায় এক।
কোথাও প্রায় হাঁটু জল, কোথাও আবার বাড়ির ভিতরে খালের নোংরা জল ঢুকে গিয়েছে। আবাসনের ভিতরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাও জলমগ্ন। সাপ, জোঁকের উপদ্রবও বেড়েছে বলে অভিযোগ। এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা জানাচ্ছেন, প্রতি বর্ষায় এই অবস্থার জন্য তারা ক্রমশই একতলাকে উঁচু করছেন। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, এত দিন জনপ্রতিনিধিরা বলছিলেন শিলান্যাস হয়ে গেলেও লোকসভা ভোট চলে আসায় কাজ শুরু করা যায়নি। এ বার তো সেই অজুহাতও খাটছে না। ভোট তো কবেই মিটে গিয়েছে। কেন এখনও পলি তোলার কাজ শুরুই হল না? বাগুইআটি এলাকার এক বাসিন্দা রাহুল কর্মকার বলেন, “মন্ত্রী যখন ভোটের আগে খাল সংস্কারের জন্য শিলান্যাস করলেন তখন ভাবলাম এই বর্ষায় আর দুর্ভোগ হবে না। কিন্তু এখন যা অবস্থা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে এ বার দুর্ভোগ আরও বাড়বে।”
দমদম পার্ক এলাকার এক বাসিন্দা অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “বর্ষার শুরুতেই এমন অবস্থা, আগামী তিন মাস যে কী দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে, কে জানে! প্রতি বছর দমদম পার্কে জল জমে আর তা দ্রুত নামানোর জন্য ভি আই পি রোড অবরোধ করি আমরা। এই ছবিটা মনে হয় এ বারও পাল্টাল না।” সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “ভোটর সময়ে মডেল কোড অফ কনডাক্টের জন্য কোনও কাজ শুরু করা যায়নি। তবে কিছু দিন আগেই ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া হয়ে গিয়েছে। বি বি ওয়ান ও ক্যান্টনমেন্ট খালের সংস্কারের কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। বর্ষাার জন্য কাজটা আমরা অস্থায়ী ভাবে করব। বর্ষা কেটে গেলে পাকাপাকি কাজ শুরু হবে। বাগজোলা খালের পলি তোলার কাজ কয়েকটি জায়গায় এখন পুরোদমে চলছে। এ বার বর্ষায় বাগজোলা খাল সংলগ্ন এলাকা অনেক কম জলমগ্ন হবে।”