Advertisement
E-Paper

‘গুরু বলে কারে প্রণাম করবি মন...’

সারা পৃথিবী এখন যাকে হারমোনিয়ম বলে চেনে তার স্রষ্টা ছিলেন তাঁর ঠাকুরদাদা। তিনি নিজে পালি ভাষায় প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্নাতক। হকি, ক্রিকেট, বিলিয়ার্ড, ফুটবল— সবেতেই সমান পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু ফুটবলের কারণে শেষমেশ সঙ্গীতের কাছেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবলা, পাখোয়াজ, ঢোল, খোল থেকে হারমোনিয়ম, পিয়ানো, বেহালা, অর্গ্যান, গিটার, ক্ল্যারিওনেট বাজানোয় সাবলীল সেই মানুষটি এ দেশের সঙ্গীতজগতের অন্যতম নক্ষত্র। সঙ্গীত সৃষ্টির পাশাপাশি সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবেও তিনি বরেণ্য। জন্মশতবর্ষ শেষেও বহু আলোচিত আচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। লেখা ও সাক্ষাৎকার: উজ্জ্বল চক্রবর্তীসারা পৃথিবী এখন যাকে হারমোনিয়ম বলে চেনে তার স্রষ্টা ছিলেন তাঁর ঠাকুরদাদা। তিনি নিজে পালি ভাষায় প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্নাতক। হকি, ক্রিকেট, বিলিয়ার্ড, ফুটবল— সবেতেই সমান পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু ফুটবলের কারণে শেষমেশ সঙ্গীতের কাছেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবলা, পাখোয়াজ, ঢোল, খোল থেকে হারমোনিয়ম, পিয়ানো, বেহালা, অর্গ্যান, গিটার, ক্ল্যারিওনেট বাজানোয় সাবলীল সেই মানুষটি এ দেশের সঙ্গীতজগতের অন্যতম নক্ষত্র। সঙ্গীত সৃষ্টির পাশাপাশি সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবেও তিনি বরেণ্য। জন্মশতবর্ষ শেষেও বহু আলোচিত আচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ‘অতীতের তাঁরা’য়।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০০:০০


অঙ্কন: নির্মলেন্দু মণ্ডল।

তানসেন সমারোহে সে বার কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করতে এসেছেন বড়ে গোলাম আলি খান। উদ্যোক্তাদের কাছে তিনি এক জনের সঙ্গে আলাপ করার অনুরোধ জানালেন। তাঁর নাম জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। কলকাতারই ছেলে। বহু গুণিজনের কাছে তিনি জ্ঞানবাবুর কথা শুনেছেন। উদ্যোক্তারা গোলাম সাহেবকে নিয়ে গেলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের ডিক্সন লেনের বাড়িতে। দু’জনেরই একে অন্যকে ভাল লেগে গেল। সম্পর্কের সেই শুরু। তার পর বরাবর বড়ে গোলাম আলি নিজেই আসতেন জ্ঞানবাবুর বাড়িতে। একাধিক বার অনেক দিন ধরে থেকেছেন। বসত সারা দিনের আসর। চলত দেওয়া-নেওয়ার পালা, সঙ্গীতের আদানপ্রদান। শুধু বড়ে গোলাম আলি খান নন, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে এমন দিকপাল সঙ্গীতজ্ঞের আসা-যাওয়া কিন্তু লেগেই থাকত। আমির খান, আলি আকবর, রবিশঙ্কর, বিলায়েত, হীরাবাঈ বরদেকার, রোশন কুমারী, শামতাপ্রসাদ, আল্লারাখা, বিসমিল্লা খান— তালিকা বেশ দীর্ঘ।

সঙ্গীতই জীবনের ধ্রুবতারা

এমএ পরীক্ষা দেওয়ার আগে হঠাৎ এক দিন হকি খেলে বাড়ি ফেরার পথে ডান চোখে কেমন যেন ঝাপসা দেখলেন জ্ঞানপ্রকাশ। ডাক্তার দেখে জানালেন, রেটিনায় রক্তক্ষরণ। কিন্তু কেন? জানা গেল, কয়েক মাস আগে ফুটবল খেলার সময় হেড দিতে গিয়ে বিপক্ষের এক খেলোয়াড় জ্ঞানপ্রকাশের চোখে পা দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। নানা পরীক্ষায় দেখা যায়, তার থেকেই চোখে রক্তক্ষরণ। শেষে ওই চোখের দৃষ্টিও চলে যায় তাঁর। কিছু দিনের মধ্যে বাঁ চোখ আক্রান্ত হয়। ফলে ২১ বছরের জ্ঞানপ্রকাশের আর এমএ পরীক্ষা দেওয়া হল না। বন্ধ হয়ে গেল খেলাধুলোও। পাশাপাশি ঘুরে গেল জীবনের মোড়ও। সঙ্গীতকেই জীবনের মোক্ষ করে নতুন ভাবে পথ চলা শুরু হল জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের।

জন্ম, ছেলেবেলা এবং পড়াশোনা

১৯১৩ সালের ৯ মে কলকাতার ৩৮ নম্বর ক্রিক রো-র বাড়িতে জন্মেছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ। বাবা কিরণচন্দ্র ঘোষ, মা নলিনীদেবী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে জ্ঞানপ্রকাশই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তাঁর তিন দাদা জ্যোতিপ্রকাশ, ইন্দুপ্রকাশ এবং চারুপ্রকাশ আর দিদি শান্তিলতা। জ্ঞানপ্রকাশের ছেলেবেলার সমস্ত স্মৃতিই এই বাড়িটিকে ঘিরে। গানবাজনা, খেলাধুলো, অভিনয়, বাজি পোড়ানো সবেতেই ছিল ভীষণ উৎসাহ। পড়তেন খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল ‘কলিনস ইনস্টিটিউট’-এ। স্কুলে তেমন একটা গানবাজনা না হলেও বাড়িতে পুরোদমে হত। তবে সে ব্রাহ্মসঙ্গীত এবং রবীন্দ্রনাথের গান।

ঠাকুরদাদা দ্বারকানাথ ঘোষ ছিলেন হারমোনিয়মের ভারতীয় সংস্করণের স্রষ্টা। তাঁর হারমোনিয়ম প্রস্তুতকারক সংস্থার নাম ‘ডোয়ার্কিন অ্যান্ড সন্স’। সেখানে হারমোনিয়ামের পাশাপাশি বিক্রি হত ক্ল্যারিওনেট, কর্নেট প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র। বাড়ির পিয়ানো অর্গ্যানের পাশাপাশি সেই সব যন্ত্রতেও হাত পাকাতেন ছোট জ্ঞানপ্রকাশ। পরিবারের সদস্যেরা মিলে অর্কেস্ট্রা তৈরি করেছিলেন। কোনও পয়সা না নিয়েই সেই অর্কেস্ট্রা তাঁরা বাজিয়ে আসতেন বিভিন্ন জায়গায়। এ সবের সঙ্গেই ক্রিক রো-র বাড়িতে খেলাধুলোর ক্লাব শুরু হয়। তখন জ্ঞানপ্রকাশ স্কুলে পড়েন। ছবি আঁকাতেও তাঁর হাত বেশ দড় ছিল। অবনীন্দ্রনাথ তাঁর আঁকা দেখে জানিয়েছিলেন, ছেলেটির আঁকার সহজাত প্রবণতা আছে।

ম্যাট্রিকুলেশনে পালি ভাষায় ‘লেটার’ পেলেন। ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখানে খেলাধুলো, গানবাজনা, অভিনয় সব কিছুতেই অংশ নিতেন। এর মধ্যেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএ পাশ করলেন। এমএ-তে ভর্তি হলেন বিশ্ববিদ্যলয়ে। এর পাশাপাশি বাবা কিরণচন্দ্রের আগ্রহে আইন পড়াও শুরু করেন তিনি।

ফের থেকে সঙ্গীত শুরু

চোখের আঘাত সব কিছু থেকে সরিয়ে তাঁকে সঙ্গীতের দরবারে এনে ফেলল। ছোট থেকেই তবলার শিক্ষক থাকলেও জ্ঞানপ্রকাশের এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষা হয় মসীত খানের হাতে। তার আগে যদিও আজীম খানের কাছে দীর্ঘ দিন তবলা শিখেছিলেন তিনি। বছর পঞ্চাশের মসীত খান বাইশ-তেইশের জ্ঞানপ্রকাশকে বাড়িতে এসে তবলা শেখাতেন। তখন পুরোদমে তবলা শেখা চলছে, পাশাপাশি গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে চলছিল গান শেখাও। বস্তুত, সঙ্গীতের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর অনায়াস যাতায়াত ছিল। শেখার আগ্রহ যেমন ছিল, তেমনই ছিল শেখানোর আগ্রহ। কিন্তু মসীত সাহেব এই শেখানোর ব্যাপারটা পছন্দ করতেন না। এক জন শিক্ষার্থী কি শেখাতে পারে? এই প্রশ্ন ছিল মসীত সাহেবের। কিন্তু জ্ঞানপ্রকাশের যুক্তি ছিল, তিনি যা শিখেছেন সেগুলি ছাত্রদের শেখালে শেখা বিষয়গুলি চর্চার পাশাপাশি রপ্তও হয় সহজে। সঙ্গীত জীবনে নতুন করে পথ চলার শুরু তাঁর এ ভাবেই। তার পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি জ্ঞানপ্রকাশকে। শিক্ষকের সংখ্যাও দিন দিন যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।

সঙ্গীত শিক্ষার আশ্চর্য পদ্ধতি

যৌবনের বেশির ভাগ সময় জুড়েই তিনি শুধু সংগ্রহ করে গিয়েছেন; কখনও তবলার মহার্ঘ গত, কখনও আবার কণ্ঠসঙ্গীতের গায়কী। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন সঙ্গীতের কাছে। বড় কোনও শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশন শুনে তিনি শিখেছেন। শিখেছেন তাঁদের সঙ্গে বাজিয়েও। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ বিশ্বাস করতেন, ভাল যা কিছু নিজের ভেতর গ্রহণ করা হয় তার পুরোটাই শিক্ষা। তাঁর ছাত্র অজয় চক্রবর্তীর কথায়: “গুরুজি সমস্ত মানুষের ভালটা গ্রহণ করার চেষ্টা করেছেন। যা শুনে তিনি ভাল বলতেন, সেটাকেও তালিম বলে মানতেন।” তাই বাড়ির আসরে যখন বড়ে গোলাম আলি বা আমির খান সঙ্গীত পরিবেশন করতেন, তখন একনিষ্ঠ ছাত্রের মতো শিখতেন জ্ঞানপ্রকাশ। একই রকম ভাবে শিখতেন তাঁর ছাত্রদের কাছ থেকেও। আসলে সঙ্গীতচর্চায় এমন খোলা মনকেই বরাবর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

সমকালীন শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন ছিল?

তাঁর পুত্র তবলাবাদক মল্লার ঘোষ বললেন, “প্রাচী সিনেমার কাছে আমাদের ডিক্সন লেনের বাড়িতে আচার্য বড়ে গোলাম আলি খান একাধিক বার থেকেছেন। তিনতলা সে বাড়ির উঠোনে আসর বসত।” আচার্য আমির খান সাহেবও থেকেছেন। রবিশঙ্কর, আলি আকবর খানও সারা দিনের জন্য আসতেন। রেওয়াজ করতেন। মল্লারের কথায়: “বাবা তাঁদের সঙ্গে বাজাতেন। শিখতেন। যেন বাবাকে তালিম দিচ্ছেন সবাই। এটা ঠিক আদানপ্রদান নয়, তাঁরা ভালবেসে শিখিয়ে যেতেন। আসলে সে সময়ের শিল্পীদের কাছে জ্ঞানবাবুর সঙ্গ করাটা একটা বিরাট ব্যাপার ছিল।” লখনউ থেকে আহমেদ জান থিরকৌয়া এমনই এক আসরে তবলা বাজিয়ে, জ্ঞানপ্রকাশকে তালিম দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সম্পর্কে আবার মসীত খানের বন্ধু ছিলেন। এখনকার তবলাবাদক জাকির হোসেনের বাবা আল্লারাখা খানও ডিক্সন লেনের এই বাড়িতে এসেছেন। জ্ঞানপ্রকাশের সঙ্গে এ বাড়ির উঠোনে আসরও বসিয়েছেন।


১৯৯১ সালের একটি অনুষ্ঠানে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। ছবি: রাজীব বসু।


হারমোনিয়াম এবং জ্ঞানপ্রকাশ

সে কালের শিল্পীদের কাছে ‘ডোয়ার্কিন অ্যান্ড সন্স’-এর হারমোনিয়ম ছিল একটা আভিজাত্যের ব্যাপার। পারিবারিক কারণে ছোট থেকেই সেই হারমোনিয়ামের সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত ছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ। তবে তিনি নিজে শেষের দিকে সেই হারমোনিয়াম ব্যবহার করতেন না। ‘সুর ও বাণী’র হারমোনিয়াম-ই ছিল তাঁর খুব প্রিয়। প্রস্তুতকারক যোগেশচন্দ্র বিশ্বাস। বছরে তিন-চার বার সেই হারমোনিয়াম ‘টিউনিং’ করতে আসতেন যোগেশবাবু। সারা দিন তাঁর লেগে যেত জ্ঞানবাবুর দু’-তিনটি হারমোনিয়াম ঠিক সুরে বাঁধতে। মাঝে মাঝেই তিনি বলতেন, “দেখুন তো জ্ঞানবাবু, ‘নি’টা ঠিক সুরে লাগছে কি না? আচ্ছা ‘গা’টা?” জ্ঞানপ্রকাশ রিডের তলায় থাকা পিতলের পাতগুলিকে আরও কতটা ঘষে বা চেঁচে সুর ঠিক করতে হবে, যোগেশবাবুকে বুঝিয়ে বলে দিতেন। আর যোগেশবাবুও লাফিয়ে উঠে বলতেন, “উফ্ অসাধারণ!” আসলে ঠিকঠাক ‘টিউনিং’ করতে গেলে শুধু ভাল হারমোনিয়াম বাদক হলেই হয় না, কানে সুর থাকার প্রয়োজন। পাশাপাশি হারমোনিয়ামের প্রযুক্তিগত দিকটাও জানা দরকার। জ্ঞানপ্রকাশের এই তিনটি গুণই যথার্থ অর্থে ছিল। সাধে কি আর সঙ্গীতকার কবীর সুমন বলেন, “আচার্য জ্ঞানপ্রকাশ হারমোনিয়াম বাদনেও প্রকৃত অর্থে গুরু ছিলেন।”

সুরকার জ্ঞানপ্রকাশ


তবলাশিল্পী শ্যামল বসুর সঙ্গে
জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। ছবি: রাজীব বসু।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পুরো তালিম ছিল জ্ঞানপ্রকাশের। ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের যে মাদকতা আছে, সেই মহিমা সর্বসমক্ষে এনেছিলেন তিনি। ভারতে যতগুলি তালবাদ্য পাওয়া যায় তার সব ক’টি নিয়ে একটি অর্কেস্ট্রা সৃষ্টি করেছিলেন। নাম দিলেন ‘ড্রামস অফ ইন্ডিয়া’। ষাটের দশকের শেষে সেটি এইচএমভি থেকে রেকর্ড হয়ে বেরোয়। সারা পৃথিবীতে এই রেকর্ড ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। অস্ট্রেলীয় সরকার সেই রেকর্ডের ১০ হাজার এলপি এইচএমভি কোম্পানির কাছে অর্ডার দিয়েছিল। কী ছিল না সেই তালবাদ্যের তালিকায়— ঢোল, খোল, নাল, নাকাড়া, পাখোয়াজ, ঢাক, তবলা, মৃদঙ্গ প্রভৃতি।

বাংলা এবং হিন্দি ভাষার অসংখ্য চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সমস্ত ছবিই সেই আমলে ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল— বিচার, বসন্তবাহার, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, আঁধারে আলো, যদু ভট্ট ইত্যাদি। তাঁর সুরে গান গেয়েছেন বড়ে গোলাম আলি খান, আমির খান, বিলায়েত খান থেকে শুরু করে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। অনেক শিল্পী গান তুলতেও আসতেন তাঁর কাছে। তার মধ্যে উল্লেখ্য কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন প্রমুখ। জ্ঞানপ্রকাশের সুরে পঞ্চাশের দশকে দু’টি ভজন রেকর্ড করেছিলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪১-’৪২ সাল নাগাদ জ্ঞানপ্রকাশ তখনকার বোম্বেতে পাড়ি দিলেন। এই সময়ে তিনি হিন্দি ছবি ‘পরায়া ধন’-এ অভিনয় করেন। ছবিটির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ।

আকাশবাণীতে জ্ঞানপ্রকাশ

দক্ষিণ ভারতের বালমুরলী কৃষ্ণ এবং জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ছিলেন আকাশবাণীর প্রথম সঙ্গীত প্রযোজক। এই পদে তিনি প্রায় ১৫ বছর কাজ করেছেন। সহকর্মী হিসেবে পেয়েছেন সুদিন চট্টোপাধ্যায়, ভি জি যোগ, বিমান ঘোষ, সুরেন পাল প্রমুখকে। তাঁর আমলে আকাশবাণীর সঙ্গীত বিভাগ ঢেলে সাজা হয়েছিল। প্রযোজক থাকাকালীন ‘রম্যগীতি’ এবং ‘সঙ্গীতাঞ্জলি’ নামের দু’টি অনুষ্ঠান শুরু করেন। শ্রোতৃমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এই অনুষ্ঠান দু’টি। আকাশবাণীর কাজ করতে গিয়ে নিত্যনতুন সঙ্গীতের উদ্ভাবনও করতেন জ্ঞানপ্রকাশ।

বিদেশে জ্ঞানপ্রকাশ

সঙ্গীতকার হিসেবে প্রায় সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। জাপানে এবং রাশিয়ায় ভারতের হয়ে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ প্রতিনিধিত্ব করেছেন কয়েকটি অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া মার্কিন মুলুকের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন প্রায় ৫ বছর। সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি, বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষক ছিলেন।

শেষের সে দিন

বালিগঞ্জের কাছে ‘হেমছায়া’ নামের বাড়িতে জীবনের শেষ ৩০ বছর কাটিয়েছেন ভারতীয় সঙ্গীতের এই দিকপাল ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৫ সালে এক বার তিনি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর পর সুস্থ হয়ে উঠলেও বছর দু’য়েকের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন জ্ঞানপ্রকাশ। এ যাত্রা আর রক্ষা মিলল না। ৮৪ বছর বয়সে ১৯৯৭-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘হেমছায়া’তেই মারা যান বহু খ্যাতনামা শিল্পীর এই সঙ্গীতগুরু। মৃত্যুকালে রেখে গিয়েছিলেন স্ত্রী ললিতা ঘোষ এবং একমাত্র পুত্র মল্লারকে।

শ্রদ্ধার্ঘ্য...

কবীর সুমন

অজয় চক্রবর্তী

মল্লার ঘোষ

গৌতম ঘোষ

ujjwal chakrabarty mallar ghosh kabir suman ajoy chakraborty gyanprokash ghosh gautam ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy