প্রচণ্ড গরমে শুকিয়ে খটখটে বাংলার ভেড়ি-পুকুর। কলকাতার বাজারগুলোয় তাই কমে গিয়েছে ভেড়িতে জন্মানো ট্যাংরা, পার্শে, ভেটকির সরবরাহ। মাছ-বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, অন্ধ্রপ্রদেশের মাছের জোগানও কম। ফলে রুই-কাতলাও অপ্রতুল। দেখা নেই পমফ্রেট, তোপসে, ইলিশের। মাছের দামে আগুন। ইলিশের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০০ টাকায়। মাছ-ব্যবসায়ীদের মতে, কয়েকটা কালবৈশাখী না হলে মাছের দাম আরও বাড়বে।
মানিকতলার মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি স্টলই যেন ধুঁকছে। আগুন দাম। সারা বছরই ছোট মাছ যেমন ট্যাংরা, পার্শে, মৌরলার স্তূপ সাজিয়ে বিক্রি করতে বসেন পরেশ দাস। তিনি জানালেন, ছোট ট্যাংরার দামই ৫০০ টাকা, একটু বড় সাইজের ট্যাংরা ৬০০ থেকে ৭০০, পার্শে ৫০০ টাকার আশপাশে, তোপসে প্রায় ৪০০, কাজরী মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দরে, তেলাপিয়ার দামও প্রায় ২০০ ছুঁয়েছে।
মানিকতলা বাজার কমিটির সচিব প্রভাত দাস বললেন, “কলকাতার বাজারে মূলত উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভেড়ি-পুকুর থেকে মাছ আসে। বৃষ্টি না হওয়ায় সেই সব ভেড়ির বেশির ভাগেরই জল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। উত্তর ২৪ পরগনার খড়িবাড়ি, সরবেরিয়া, মালঞ্চ এলাকার ভেড়ি বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, রায়দিঘির ভেড়ি থেকে মাছ প্রায় আসছেই না। যেটুকু আসছে, তারও জোগান খুব কম।” মাছ-বিক্রেতারা জানালেন, সম্প্রতি যে দু’টি কালবৈশাখী হয়েছে, তাতে ভেড়িগুলোর খুব লাভ হয়নি। ভেড়ির মাটি ওই বৃষ্টির জল শুষে নিয়েছে। আরও কয়েকটা বৃষ্টি দরকার।
গড়িয়াহাট বাজারের মাছ-বিক্রেতারা বললেন, “আমাদের এখানে, যেখানে এক জন মাছ-বিক্রেতা সারা দিনে ১০ কিলো মাছ কিনত, সে কিনছে বড়জোর ২-৩ কিলো। চাহিদার তুলনায় জোগান তলানিতে। পাবদা থেকে শুরু করে ট্যাংরা প্রায় সব ভাল মানের মাছেরই দাম ৫০০ টাকা ছাড়িয়েছে।”
প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম আসছে অন্ধ্রের রুই-কাতলাও। মানিকতলার মাছ-বিক্রেতা প্রদীপ মণ্ডল জানালেন, গত এক মাসে বড় কাতলার দাম ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। বড় রুই ২০০ টাকার আশপাশে। পাতিপুকুরের পাইকারি মাছ বাজারের বিক্রেতা বাপ্পা সাউ বললেন, “আগে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে দিনে যত ট্রাক মাছ আসত, তার থেকে ১০ ট্রাক কম আসছে।” পাতিপুকুর বাজারের পাইকারি মাছ-বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, অত দূর থেকে এই গরমে মাছ আনতে গিয়ে প্যাকিং করায় সমস্যা হচ্ছে। দু’দিন ধরে ট্রাকে করে মাছ আনার সময়ে বরফ গলে মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেশি মাছ পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া, মাস কয়েক আগে অন্ধ্রপ্রদেশে অতিবর্ষণেও মাছচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একই অবস্থা সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রেও। মাছ-বিক্রেতারা জানালেন, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে সামুদ্রিক মাছের জোগান কম থাকে। কারণ সমুদ্রের মাছ এই সময়ে ডিম পাড়ে। তাই ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া বারণ। কারণ ট্রলারের ডিজেল জলে মিশলে মাছের প্রজননে সমস্যা হয়। লেক মার্কেটের মাছ-বিক্রেতারা জানালেন, এই সব কারণে বছরের এই সময়ে অল্প পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ আসে, সেগুলির দামও বেশি থাকে। তবে এই বছর অন্যান্য মাছের জোগানও কম থাকায় সমুদ্রের মাছের দাম আরও বেড়ে গিয়েছে। ভাল মানের পমফ্রেট ৭০০ টাকা। ইলিশ-বিক্রেতারাই জানাচ্ছেন, ১০০০ টাকা কেজি দরে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো সবই গত বছরের হিমঘরের ইলিশ।