বনগাঁ বা কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচনের ফলাফলে আপাত ভাবে তৃণমূলে যতই স্বস্তির ভাব দেখা যাক না কেন, বিজেপি-র ভোটবৃদ্ধিতে দল উদ্বিগ্ন। এমনকী, বামেদের ভোট ভেঙে যে বিজেপি-র ভাঁড়ার ভরছে, তারও ইঙ্গিত মিলেছে এই ভোটেও। সঙ্গে সারদা-অস্বস্তি তো আছেই। এই পরিস্থিতিতে কলকাতার পুর-নির্বাচনে বাম ভোট যাতে বিজেপি-র দিকে চলে না যায়, সে জন্য সচেতন ভাবে মরিয়া চেষ্টা শুরু করে দিল তৃণমূল। যার অন্যতম কৌশল বাম কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে প্রধানত বাছাই করা হচ্ছে তাঁদের, যাঁরা একাধিক বার জেতা অথবা নিজের এলাকায় কাজের নিরিখে জনপ্রিয়।
তারই প্রথম ধাপ হিসেবে বুধবার তৃণমূলে যোগ দিলেন সিপিএম কাউন্সিলর মহম্মদ জসিমুদ্দিন। তিনি বলেছেন, “বিজেপিকে ঠেকাতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর দল তৃণমূলই। তাই ভোট ভাগ করার সুযোগ দিতে চাই না।” রাজনৈতিক মহলের মতে, ‘ঝুলির বেড়াল’ বেরিয়ে পড়েছে এখানেই। কারণ, ২০১০ সালের নির্বাচনে ১৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বামেদের দখলে যায় ৩৩টি। গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে বিজেপি একাই ২৭টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে। স্বভাবতই বামেদের ভোট বিজেপির ঝুলিতে গেলে বিপদ বাড়বে তৃণমূলের।
তৃণমূল নেতাদের যুক্তি, এখনও অনেক বাম কাউন্সিলর রয়েছেন যাঁরা বিজেপির ছায়া পর্যন্ত মাড়াতে চান না। তাই বামেদের ভোট বিজেপিতে যাওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাও তাঁরা তৈরি হতে দিতে নারাজ। এতে নিজেদের হেরে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকছে। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলই তাঁদের একমাত্র ‘সম্মানজনক’ অবস্থান। তৃণমূলের মধ্যেই অনেকে অবশ্য মনে করেন, এটা রাজনৈতিক অবক্ষয়ের চরম নিদর্শন। যাঁরা যাচ্ছেন এবং যাঁরা নিচ্ছেন, উভয়ের ক্ষেত্রেই তা সত্য।
পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “তৃণমূল রাজনীতিতে ক্লাব কালচার শুরু করছে। লোভ দেখিয়ে কাউন্সিলর টানার জঘন্য খেলায় নেমেছে।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সমালোচনা গায়ে না মেখে বলেন, “বামপন্থী অস্তিত্ব সঙ্কটে। যাঁরা সুস্থ মস্তিস্কের, তাঁরা তৃণমূলে আসতে চান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে চান। তাঁদের স্বাগত।”
তৃণমূলের অন্দরের খবর, একা জসিমুদ্দিন নন, আগামী ক’দিনে ওই তালিকা বাড়বে। বাম শরিকদল ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, সিপিআইয়ের একাধিক কাউন্সিলরও ইট পেতে রেখেছেন। কিন্তু তাঁরা যে তৃণমূলে ঢুকেই কাউন্সিলর পদের প্রার্থী হতে পারবেন, সে নিশ্চয়তা মিলেছে কি না স্পষ্ট নয়। জসিমুদ্দিনের প্রসঙ্গ তুলে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কলকাতা পুর-নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই ধরনের কোনও শর্ত জসিমুদ্দিন দেননি। তবে এলাকার জন-প্রতিনিধি এলাকার উন্নয়নে কী কাজ করেছেন, কতটা জনপ্রিয় তার একটা ভিত্তি তো থাকবেই। সে সব দেখেই দল সিদ্ধান্ত নেবে।” তৃণমূলের অন্দরের খবর, আসন সংরক্ষণের বাধ্যতা যেখানে নেই, সেখানে তাদের বর্তমান কাউন্সিলরদের মনোনয়ন দেওয়ার পথেই যাওয়ার কথআ ভাবছে দল। লক্ষ্য একই, বিজেপি-র ‘জুজু’ আটকাতে নিজেদের ঘরের পাঁচিল যতদূর সম্ভব ‘অটুট’ রাখা।
অন্য দিকে, উপনির্বাচনের স্বস্তির জয়ের পরে দীর্ঘদিনের ব্যবধান কাটিয়ে এ দিন তৃণমূলে ভবনে যান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দলের সদর দফতরে গিয়ে নিজের ঘরে নেতাদের ডেকে আসন্ন পুরভোট নিয়ে আলোচনা করেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, পুরসভায় দলের আসন সংখ্যা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেন মমতা। বুঝিয়ে দেন, কলকাতা পুরসভায় বর্তমানে দলের যে সব কাউন্সিলর রয়েছেন, তাঁদের আসনগুলি যথাসম্ভব বজায় রেখে জয়ের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। তবে সংরক্ষণ, সীমানা পুনর্বিন্যাস বা প্রয়োজনভিত্তিক কারণে কোনও কোনও আসনের প্রার্থী রদবদল করা যে অবশ্যম্ভাবী তেমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন দলনেত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy