Advertisement
E-Paper

জঞ্জালে ঢাকুক, তবু ময়দানেই সমাবেশ

ভিড়ের ঠেলায় রবিবার এমনিতেই ধুলোয় ভরে গিয়েছিল শহরের ফুসফুস। বেলা বাড়তেই শুরু হল ব্রিগেডের সভায় আসা বাম সমর্থকদের খাওয়াদাওয়ার আসর। ভিড়ে ময়দানে স্টোভ জ্বালিয়ে বিক্রি হল গরম তেলেভাজাও! সভা শেষে ঘরমুখো হলেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। এঁটো থালা, ফলের খোসা পড়ে রইল ময়দানেই! মাঠের ধার ঘেঁষে কয়েক হাজার থার্মোকলের থালা, বাটি, উচ্ছিষ্ট খাবার পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০২:২১
সভা শেষে ময়দান। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।

সভা শেষে ময়দান। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।

ভিড়ের ঠেলায় রবিবার এমনিতেই ধুলোয় ভরে গিয়েছিল শহরের ফুসফুস। বেলা বাড়তেই শুরু হল ব্রিগেডের সভায় আসা বাম সমর্থকদের খাওয়াদাওয়ার আসর। ভিড়ে ময়দানে স্টোভ জ্বালিয়ে বিক্রি হল গরম তেলেভাজাও!

সভা শেষে ঘরমুখো হলেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। এঁটো থালা, ফলের খোসা পড়ে রইল ময়দানেই! মাঠের ধার ঘেঁষে কয়েক হাজার থার্মোকলের থালা, বাটি, উচ্ছিষ্ট খাবার পড়ে। পড়ে রয়েছে অজস্র চায়ের কাপ, প্লাস্টিকের গ্লাস। ফলের খোসা, খবরের কাগজে মাঠের একাংশ ছেয়ে গিয়েছে। রাস্তার ধারে রাখা জলের ট্যাঙ্কে হাত-মুখ ধোয়া জলে ফুটপাথের বেশ খানিকটা জুড়ে থইথই!

বসন্তের পড়ন্ত বিকেলে ব্রিগেডের এই চেহারা দেখে অনেক পরিবেশবিদই বলছেন রাজনৈতিক দলগুলি তাদের নিজেদের স্বার্থ নিয়ে যতটা সচেতন, পরিবেশ নিয়ে ততটা হলে শহরের ফুসফুসের এই হাল হত না। “রাজনৈতিক দলগুলি শুধু নিজেদের আদর্শেই আলাদা। সভা করে পরিবেশ নোংরা করায় তাদের কোনও পার্থক্য নেই,” বলছেন এক পরিবেশবিদ।

বস্তুত, ময়দানের সভায় পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ বহু দিন আগে থেকেই ছিল। নয়ের দশকে ময়দানে উনুন জ্বেলে রান্না, উন্মুক্ত শৌচাগার কিংবা বাস-ম্যাটাডর দাঁড় করানো ছিল চেনা ছবি। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, “সে সময়ে সভার শেষে ব্রিগেডের চেহারাই বদলে যেত।” এক দশক আগে ময়দানের সবুজ রক্ষা নিয়ে সরব হন পরিবেশকর্মীরা। রাজনৈতিক সভার জেরে ময়দান নোংরা করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করেন সুভাষবাবু। সেই মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ময়দানে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করা যাবে না। খাবার খেয়ে নোংরা থালা-বাসন সাফ করে দিতে হবে। উন্মুক্ত শৌচাগারের বদলে জৈব শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। ময়দান-ভিক্টোরিয়া চত্বরের এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে গাড়ি রাখা যাবে না। পরিবেশকর্মীদের আক্ষেপ, সেই রীতি মানলেও রাজনৈতিক সভার জেরে পরিবেশ দূষণ আটকানো যায়নি।

পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, শুধু নোংরাই নয়, লক্ষ-লক্ষ মানুষের পায়ের চাপে যে পরিমাণ ধুলো ওড়ে, তাতেও যথেষ্ট দূষণ হয়। এ দিন দুপুরেও ব্রিগেডের চারপাশে সেই ছবিটাই ধরা পড়েছে। ওই এলাকায় কয়েক মিনিট হাঁটাহাঁটি করলেই ধুলোয় হাঁচিকাশি শুরু হয়ে যাচ্ছিল। শরীর বাঁচাতে অনেকেই মুখ ঢেকেছিলেন রুমাল-মাস্কে।

তা হলে কি সভার জেরে ময়দানের পরিবেশ নষ্টই ভবিতব্য?

রাজ্যের শাসক-বিরোধী সব দলই অবশ্য দাবি করেছে, সভার পরে তাঁরা নিজ উদ্যোগেই মাঠ পরিষ্কার করেন। এ দিনও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব জঞ্জাল সাফ করা হবে।” বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “আমাদের সভার পরে আমি দাঁড়িয়ে থেকে মাঠ পরিষ্কার করেছি।” সভা শেষে মাঠ সাফ করার দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা ও কলকাতার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদারও।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক সভা ঘিরে শুধু মাঠ নয়, যে রাস্তা দিয়ে মিছিল আসে, সেগুলিও নোংরা হয়। সেগুলি কিন্তু সে ভাবে সাফ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহর নোংরা রাখা যাবে না, এ কথা মেনে আমরাই রাস্তা পরিষ্কার করে দিই।”

সাফ করা হোক বা না-হোক, শহরের প্রাণকেন্দ্রে রাজনৈতিক সভা করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। হাইকোর্টের মামলাতেও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। সুভাষবাবু বলেন, “ব্রিগেড সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন। হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে ওই ময়দানে রাজনৈতিক সভা না করার পক্ষেই সওয়াল করেছিল সেনা।” ময়দানের পরিবর্তে শহরের উপকণ্ঠে কোনও সভাস্থল খুঁজে বার করা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছিল হাইকোর্ট। কিন্তু সেই খোঁজ শেষ হয়নি।

ময়দান থেকে যে সভা সরানো যাবে না, সে প্রশ্নে অবশ্য একমত তৃণমূল-বিজেপি-সিপিএম। তৃণমূল নেতা তথা মেয়র শোভনবাবুর বক্তব্য, “কলকাতায় আন্দোলন একটা বৈশিষ্ট্য। তাই এখানে আন্দোলন থাকবে। কিন্ত সেটা যাতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে হয়, সকলেরই দেখা উচিত।” বিজেপি নেতা রাহুলবাবু অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, “কলকাতায় খেলা-মেলার সময় পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। শুধু রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের সময়ে তোলা হয় কেন?” এবং সিপিএম নেতা শ্যামলবাবুর মন্তব্য, “রাজনৈতিক সভা ঘিরে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু বছরের বাকি দিনগুলিতে ময়দানের পরিবেশ নিয়ে কেউ খোঁজ রাখেন?”

তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন চিফ ল’ অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ব্রিগ্রেডে জনসভার সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিলে এই দূষণে লাগাম টানা যেতে পারে।

kolkata maidan left front meeting pollution brigade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy