Advertisement
E-Paper

জটে বেহাল বিটি রোড, ভোগান্তি যাত্রীদের

প্রায় দু’ কিলোমিটার রাস্তায় আটটি বাস স্টপ। সেখান থেকেই মানুষ রাস্তা পারাপার করেন। বিটি রোডের এই অংশে যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি হয়েছে দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে বনহুগলির আগে পর্যন্ত একটি একমুখী উড়ালপুল। গত দু’বছর ধরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ট্রাফিক দফতর। তার উপর বাসের সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমেছে বলে মানুষের অভিযোগ।

কাজল গুপ্ত ও বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৬
এ ছবি প্রতি দিনের। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় ।

এ ছবি প্রতি দিনের। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় ।

প্রায় দু’ কিলোমিটার রাস্তায় আটটি বাস স্টপ। সেখান থেকেই মানুষ রাস্তা পারাপার করেন। বিটি রোডের এই অংশে যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি হয়েছে দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে বনহুগলির আগে পর্যন্ত একটি একমুখী উড়ালপুল। গত দু’বছর ধরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ট্রাফিক দফতর। তার উপর বাসের সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমেছে বলে মানুষের অভিযোগ।

যানজট কমাতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন, এমন কথা বহুশ্রুত হলেও স্থানীয় বাসিন্দা থেকে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, যানজটের সমস্যা আজও রয়েছে। সেটা বড় জোর কিছুটা কমেছে।

নিত্যযাত্রী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সকাল ১০টা থেকে বারোটা পর্যন্ত যানজট রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের নির্দিষ্ট কোনও কারণ তাঁরা অন্তত বুঝতে পারেন না। আবার একাংশের অভিযোগ দিনেরাতের যে কোনও সময়েই যানজট হয়।

কিন্তু কেন?

স্থানীয় বাসিন্দা রমেন্দু বসাক বেকবাগান যাবেন বলে অনন্যার মোড় থেকে একটি বেসরকারি বাসে ওঠেন। ঘড়িতে তখন সাড়ে দশটা। তিনি বলেন, অনন্যা পার হতে না হতেই বাস গেল থেমে। সিঁথির মোড় পেরতেই এগারোটা বেজে গেল। রাতে যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন আবার ঘোষপাড়া থেকে যানজট। বাধ্য হয়ে পালপাড়া ফাঁড়িতে নেমে হেঁটে হেঁটে অনন্যা মোড়ে পৌঁছলেন।

গড়িয়ার বাসিন্দা শুভাশিস পাল বেলঘরিয়া থেকে তাঁর অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে পিজি হাসপাতালে যাওয়ার সময় যানজটের সাক্ষী রইলেন। তাঁর কথায়, যানজট দেখে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক উল্টো লেন বরাবর চলতে থাকলেন। কিন্তু টবিন রোডের মুখে এসেই আটকে পড়লেন। হুটার বাজিয়েও লাভ হয়নি, কেননা ফিরতি পথের রাস্তাতেও তত ক্ষণে যানজট ছড়িয়ে গিয়েছে।

যানজটের কারণ হিসাবে দেখা গেল, গাড়ির চাপ, যখন তখন লরি, ট্রাক কিংবা ম্যাটাডরের বাড়বাড়ন্ত। অন্য দিকে মাত্র ২ কিলোমিটার রাস্তায় পারাপারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এই অংশের গতি শ্লথ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য এক পুলিশ কর্তার কথায়, দুর্ঘটনা রুখতে বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক কর্মীরা যান নিয়ন্ত্রণ করেন। রাস্তা পারাপারের জন্য গাড়ি থামাতেই হয়। বাসিন্দাদের দাবিতেই বিভিন্ন মোড়ে পারাপারের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ সবের পাশাপাশি যাত্রী তুলতে বাসকর্মীদের একাংশের গাড়ি যত্রতত্র দাঁড় করানো, রাস্তার দু’ধারে পার্কিং এবং বিভিন্ন দখলদারিতে রাস্তার আয়তন কমে যাওয়া, সাইকেল, রিকশা, অটো থেকে বাস, ট্রাক সবই এ রাস্তায় চলার করণে যানজট হয়।

সমস্যার কথা সবটা স্বীকার করতে নারাজ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ট্রাফিক দফতর। এক পুলিশ কর্তার কথায়, তিনটি জেলার সংযোগকারী বিটি রোডের ওই অংশে গাড়ি, পথচারী ও যাত্রীদের চাপ বেশি। ফলে নির্দিষ্ট কিছু সময় গাড়ির গতি শ্লথ হয়ে যায়। আবার বিটি রোডের দু’পারের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমও এই বিটি রোড। ফলে রাস্তার তুলনায় পারাপারকারী কাটআউটের সংখ্যা বেশি। কিন্তু তার মধ্যেও যানজট আগের থেকে কমেছে।

অবশ্য তিনি লরির গতিবিধি নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, লরি বা মালবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে শহরে ঢোকা ও বেরনোর নির্দিষ্ট সময় সীমা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তা লঙ্ঘন করছেন চালকদের একাংশ। সেখানে নিয়মিত পদক্ষেপও করা হচ্ছে।

ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ঢক্কানিনাদই যে সার তা দৃশ্যত প্রতিনিয়ত প্রমাণিত হচ্ছে। বড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ আছে। কিন্তু অভিযোগ, তাঁদের অনেকটা পাড়ার ঠেকে আড্ডা দেওয়ার মতো ভাব। দেখছি কিন্তু দেখছি না। গাড়িঘোড়ার তাই নিয়ম কানুন মানার বালাই নেই। সকাল দশটায় রোজ ব্যারাকপুরের অন্যতম ব্যস্ত এবং সঙ্কীর্ণ রাস্তা সেন্ট্রাল রোডে স্কুল পড়ুয়া, অফিসযাত্রীদের ভিড় হয়। এ পথে এমনিতেই বড় গাড়ি ঢুকতে মানা। তবু প্রায় প্রতি দিনই পুলিশের চোখের সামনে লরি ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ।

এ দিকে বি টি রোড সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছিল জোর কদমে। এখন বিভিন্ন জায়গায় অর্ধেক কাজ হয়ে থেমে আছে। সেই সব জায়গা রাস্তা থেকে অনেকটা নেমে যাওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রেও পুলিশি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীরা। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা সিভিক পুলিশকর্মীরা অনেকে ট্রাফিক সামলানোর সব পাঠই নেননি। ফলে বিশেষ বিশেষ সময়ে তাঁদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

ব্যারাকপুরের ডিসি ট্রাফিক দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে যানবাহনের চাপ ২৪ ঘণ্টা। ট্রাফিক ও সিভিল পুলিশ দিয়ে তা সামলাতে হিমসিম খেতে হয়। সমস্যা সমাধানে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ডানলপ থেকে সোদপুর চৌমাথা পর্যন্ত চারটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অটো সিগন্যাল ইতিমধ্যেই বসানো হয়েছে। রাতে রাস্তা পারাপারের জন্য রিফ্লেক্টর এবং দুর্ঘটনা এড়াতে ডিভাইডারে লোহার রেলিং বসানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি পথচারী ও চালকদের সচেতনতা বাড়াতে সারা বছর ধরে কমিশনারেটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়। আশা করছি এ সব দিয়ে পথ দুর্ঘটনা ও যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সম্ভব হবে।”

bitan bhattacharya kajal gupta bt road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy