Advertisement
E-Paper

জটিল রোগ, বাঁচাতে এককাট্টা গোটা পাড়া

একটা গোটা পাড়া জেগে উঠেছে তাঁর জন্য। কেউ টাকা দিচ্ছেন। কেউ হাসপাতালে রাত জাগছেন। কেউ আবার চেনা-অচেনা লোকজনের কাছে খবরটা পৌঁছে দিয়ে তাঁদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। হাতে লেখা লিফলেট বিলি হচ্ছে। অফিস কামাই করে, বাড়ির কাজে জোড়াতালি গিয়ে গোটা পাড়া একত্রিত হচ্ছে হাসপাতালে। বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলার অসুস্থতাকে ঘিরে রাতারাতি এক হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা। যে করে হোক, মুমূর্ষু ওই মহিলাকে বাঁচিয়ে তোলার পণ করেছেন সকলে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
চিকিৎসা চলছে মিতালি সাহার।  —নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা চলছে মিতালি সাহার। —নিজস্ব চিত্র

একটা গোটা পাড়া জেগে উঠেছে তাঁর জন্য। কেউ টাকা দিচ্ছেন। কেউ হাসপাতালে রাত জাগছেন। কেউ আবার চেনা-অচেনা লোকজনের কাছে খবরটা পৌঁছে দিয়ে তাঁদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। হাতে লেখা লিফলেট বিলি হচ্ছে। অফিস কামাই করে, বাড়ির কাজে জোড়াতালি গিয়ে গোটা পাড়া একত্রিত হচ্ছে হাসপাতালে। বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলার অসুস্থতাকে ঘিরে রাতারাতি এক হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা। যে করে হোক, মুমূর্ষু ওই মহিলাকে বাঁচিয়ে তোলার পণ করেছেন সকলে।

যেখানে বাবা-মা দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকলে বা ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হলে তাঁদেরই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নজির তৈরি হচ্ছে চারপাশে, সেখানে এক অনাত্মীয়াকে বাঁচাতে এই মিলিত লড়াই বিস্মিত করছে অনেককেই। যে বেসরকারি হাসপাতালে মিতালি সাহা নামে ওই রোগিণী ভর্তি, সেখানকার কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, এমন উদ্যোগ দেখে তাঁরাও মুগ্ধ। ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চান তাঁরাও।

শাড়িতে পাড় বসিয়ে সামান্য রোজগার করতেন বিজয়গড়ের রামঠাকুর সরণির বাসিন্দা মিতালি। সেই সূত্রেই এলাকায় বহু বাড়িতে তাঁর যাতায়াত ছিল। স্থানীয়েরা জানান, স্বভাবের জন্য মিতালি সকলেরই প্রিয় ছিলেন। কিন্তু সেই পাড়াতুতো সম্পর্ককে দায়বদ্ধতা হিসেবে মেনে নেওয়ার কোনও জবরদস্তি ছিল না কারও কাছেই। তবুও ৩৫ বছরের মিতালি গুলেনবেরি সিনড্রোমে আক্রান্ত জানার পর রাতারাতি তাঁকে ঘিরে এককাট্টা হয়ে যান সকলে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গুলেনবেরি সিনড্রোম স্নায়ুর এক অত্যন্ত জটিল রোগ। এতে দ্রুত অসাড় হয়ে যায় গোটা দেহ। শ্বাসকষ্টও মারাত্মক আকার নেয়। তখন রোগীকে ভেন্টিলেশনে না রেখে উপায় থাকে না। মিতালির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। স্নায়ুরোগ চিকিৎসক তৃষিত রায় বলেন, “নার্ভের গায়ে যে প্রোটিন থাকে তার বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে এই রোগ দেখা দেয়। শরীর অসাড় হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসনালী এবং খাদ্যনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর চিকিৎসা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ এবং দীর্ঘ দিন চালাতে হয়। না হলে যে কোনও বিপর্যয় ঘটতে পারে।”

মিতালীর এক প্রতিবেশী মায়া ঘোষ বলেন, “খবরটা পেয়েই আমরা খুব অস্থির হয়ে পড়েছি। পাড়ার সকলের চিন্তা এখন ওই একটাই পরিবারকে নিয়ে। টাকার অভাবে মেয়েটির চিকিৎসা বন্ধ থাকবে, এটা হতে পারে না।”

মিতালির স্বামী সমর সাহা জানিয়েছেন, ১৭ জানুয়ারি তাঁর স্ত্রীকে বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পর থেকে তিনি ভেন্টিলেশনে। দিন কয়েক আগে মিতালিকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করার চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে। ফের ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। তাঁর কথায়, “জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। আমাদের তো কোনও সামর্থ্যই নেই। আত্মীয়েরা অনেকে এগিয়ে এসেছেন। আর প্রতিবেশীরা যা করছেন তা ভাবাই যায় না। মনে হচ্ছে, আমরা সকলে যেন একই পরিবারের সদস্য।” তবে আরও অর্থের প্রয়োজন। দ্রুত তা জোগার করতে না পারলে মিতালিকে বাঁচানো কঠিন বলে জানান সমরবাবু।

যে হাসপাতালের মিতালিদেবী ভর্তি তাদের তরফে সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “এটাকে ‘স্পেশ্যাল কেস’ হিসেবে বিবেচনা করছি আমরাও। তাই হাসপাতালের তরফেও আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করব।”

soma mukhopadhyay bijay garh mitali saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy