Advertisement
০৪ মে ২০২৪

‘টিম ২’ কতটা লড়াই দেবে, তারই অপেক্ষা

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। দক্ষিণ কলকাতার এক সাড়া জাগানো মণ্ডপের মূল কারিগর ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আসা এক যুবক। কিন্তু নামী শিল্পীর আড়ালে তাঁর নাম অনেকেই জানতে পারেনি! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজো ময়দানে ক্রমশই নিজের জাত চিনিয়েছেন ওই যুবক।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও সৌভিক চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। দক্ষিণ কলকাতার এক সাড়া জাগানো মণ্ডপের মূল কারিগর ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আসা এক যুবক। কিন্তু নামী শিল্পীর আড়ালে তাঁর নাম অনেকেই জানতে পারেনি! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজো ময়দানে ক্রমশই নিজের জাত চিনিয়েছেন ওই যুবক।

কেউ আবার বছর কয়েক আগেও আর এক নামী শিল্পীর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। আর এক যুবা শিল্পীর মূল হাতিয়ারই ছিল লোকশিল্প। প্রথম দিকে তেমন কল্কে না পেলেও গত কয়েক বছরে ক্রমশই ‘দাম’ বেড়েছে তাঁর। কেউ কেউ আবার পুজো ময়দানে আসার কয়েক বছরের মধ্যেই হয়ে উঠেছেন উঠতি তারকা।

শহরের পুজোয় নামী শিল্পীদের পাশে রয়েছেন এঁরাও। কার্যত তাঁদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেই। পুজোকর্তাদের অনেকেই বলেন, নামী শিল্পীদের নিয়ে বড় ক্লাবগুলি কাড়াকাড়ি করে ঠিকই। কিন্তু এই ‘টিম ২’ যে কোনও সময়েই পাশা উল্টে দিতে পারেন।

কারা রয়েছেন এই ‘টিম ২’-এ?

গত কয়েক বছর ধরেই নামী শিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন গৌরাঙ্গ কুইল্যা। শহরের অনেক নামী পুজোই তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন পুজোর ভার। এ বারও যেমন দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনীতে পুজোর থিম সাজাচ্ছেন গৌরাঙ্গ। সেখানে এ বার দেখা মিলবে বিরাট বিরাট কাঠের পুতুলের। কোনও পুতুলই নাকি ২৫ ফুটের কম নেই। ভবানীপুরের অবসরে টেরাকোটা, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়ি ঘাস, তালপাতা, খেজুরপাতার কাজ দেখা মিলবে। হরিদেবপুরের ৪১ পল্লীতে নতুন ধরনের থিম গড়ছেন গৌরাঙ্গ। স্বপ্নের জগৎ গড়তে ডালপালা, কাল্পনিক রাজহাঁস থাকছে। দেখে মনে হবে, বিভিন্ন ধরনের কাজগুলি শূন্যে ভাসছে! অথচ পুরোটাই থাকছে তুলির টানে।

পুজো ময়দানে লোকশিল্পের ‘কারিগর’ অনির্বাণ দাস এ বার পাঁচটি পুজোর মধ্যে তিনটিতেই বেছে নিয়েছেন লোকশিল্পকে। হরিদেবপুর অজেয় সংহতিতে ছো নাচের মুখোশ দিয়ে রামায়ণকে তুলে ধরছেন তিনি। থাকছে বিরাট মাপের সব মুখোশ। পাতিপুকুর বসাকবাগানে ঘাসের শিল্প গড়ছেন এবং দমদম পার্ক তরুণ দলে পুরনো মন্দিরে চড়কের মেলাকে তুলে ধরছেন তিনি। বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘে থাকছে ডান্ডিয়া নাচের পরিবেশ এবং কাঁকুড়গাছির একটি পুজোয় দশকর্মার জিনিসপত্র ব্যবহার করছেন তিনি।

পুজো ময়দানে বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। গত কয়েক বছরের মতো এ বারও দমদমের মলপল্লীতে রয়েছেন তিনি। পুতুল, ছোটবেলার কবিতা, সাপলুডো দিয়ে ‘ছোট মুখে বড় কথা’র থিম গড়ছেন তিনি। কাঁকুড়গাছি স্বপ্নার বাগানে থাকছে সিঁড়ি, নাগরদোলা, আয়না দিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন তিনি। গড়িয়াহাট সমাজসেবী সঙ্ঘে রঙের কৌটো, তুলি ব্রাশই তাঁর মণ্ডপ সাজানোর উপকরণ।

প্রতিমা গড়া দিয়েই পুজো ময়দানে এসেছিলেন পরিমল পাল। ক্রমে শহরের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন তিনি। গত বছরের মতো এ বারও নলিন সরকার স্ট্রিটে কাগজ বুনে বুনে মণ্ডপ গড়ছেন তিনি। তিনি জানান, ‘আবাহন বুননে মননে’ নামের এই থিম আঞ্চলিকতার উদ্ধে উঠে তুলে ধরবে পৃথিবীর সব শিল্পীর অন্তরের আবেগ। এ ছাড়াও কাঁকুড়গাছি মিতালি, সন্তোষপুর লেক পল্লী, ৬৬ পল্লীর মতো বারোটি পুজোর প্রতিমা গড়েছেন তিনি।

পুজো ময়দানের লোকেরা বলেন, থিমে চমক দেওয়াটাই শিল্পী বিশ্বনাথ দে-র ‘ইউএসপি’। এ বার ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীনে থিম গড়ছেন ‘বন্দনা চন্দ্র বন্দনে’। চাঁদমালার মতো দেবীর তিনটি চোখ। থাকছে কোশাকুশির মতো পুজোর অনুষঙ্গও। ৬৪ পল্লীতে তিনি কাজ করছেন ঘুড়ি, লাটাই নিয়ে। শিল্পী শিবশঙ্কর দাস এ বার রয়েছেন নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘে। বিরাট আকারের সূর্যমুখী ফুলের কায়দায় মণ্ডপ সাজাচ্ছেন তিনি। দমদম পার্ক ভারতচক্রে সাত রঙে মণ্ডপ সাজছে। থাকছে ‘অডিও-ভিস্যুয়াল’ এফেক্টও।

গত কয়েক বছরে ভিড় টানার লড়াইয়ে উঠে আসছেন রিন্টু দাস নামে এক তরুণ শিল্পীও। মূলত ‘ইনস্টলেশন’-এর উপরে কাজ করা রিন্টু এ বার সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ সাউথের মণ্ডপে ২ কোটি ৪০ লক্ষ সেফটিপিনে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন। থাকছে ২২ ফুট লম্বা সেফটিপিনও। পার্ক সার্কাস সর্বজনীনের পুজোয় রিন্টু তুলে ধরছেন পরিবেশ ও গাছকে। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ২১ পল্লীতে সাবেকিয়ানা ও থিমের লড়াইকেই হাতিয়ার করেছেন এই শিল্পী।

পুজো ময়দানে নবীন শিল্পী মহেন্দ্র পালেরও ভরসা লোকশিল্পে। গত
বছর হাতিবাগান নবীনপল্লীতে গড়েছিলেন বিষ্ণুপুরের মৃণ্ময়ী মায়ের মন্দির। এ বার সেখানে কাগজশিল্প ‘পেপার ম্যাশে’। চিন থেকে শুরু হওয়া এই শিল্প ইওরোপ, আমেরিকায় ছড়িয়েও কার্যত বিলুপ্ত। তাকেই আবার তুলে ধরছেন তিনি। আর এক নবীন শিল্পী প্রদীপ দাস কাশী বোস লেনে তুলে এনেছেন কন্যাসন্তান বাঁচানোর থিমকে। ‘মেয়েবেলা’র থিম সাজাতে মণ্ডপ সাজছে সিলিকনের পুতুল দিয়ে। মণ্ডপ হচ্ছে ফুলের গর্ভকেশরের ঢঙে। মণ্ডপের মাঝে বিরাট ফুলের মধ্যে মিলবে এক ঘুমন্ত শিশুকন্যা।

এমন সব তারকা নিয়ে ‘টিম ২’ এ বার পাশা কতটা ওল্টাতে পারে, সেটাই এখন দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE