রাত দু’টো। দু’হাতে দু’টি বড় বড় ব্যাগ নিয়ে এক ব্যক্তি বেরিয়ে এলেন শপিং মল থেকে। ক্লোজ্ড-সার্কিট টিভিতে (সিসিটিভি) প্রথমে এই ছবি দেখে পুলিশের কোনও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু ঠিক পরের দিনই ওই শপিং মলের তরফে চুরির অভিযোগ মেলে। আর তখন ওই ক্যামেরার ছবি দেখেই ধরা হয় দুষ্কতীকে। মাসখানেক আগেকার ধর্মতলার ঘটনা এটি।
সিসিটিভি থাকাতেই এই ঘটনায় অভিযুক্তকে ধরা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে, যেখানে সিসিটিভি না থাকায় নাজেহাল হতে হয় তদন্তকারী অফিসারদের। অনেক ক্ষেত্রে তদন্তের কাজও আটকে যায় কোনও তথ্য না পাওয়ায়। কিন্তু এ বার থেকে আর সে রকম কোনও অপ্রীতিকর সমস্যার মুখ পড়তে হবে না বলেই মনে করছেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা। কারণ, শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে রাজ্য প্রশাসন এ বার গড়ে তুলেছে পূর্ণাঙ্গ ক্যামেরা-পরিকাঠামো। যাকে লালবাজারের কর্তারা বলছেন ‘ইন্টেলিজেন্ট সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম’ (আইএসএস)।
লালবাজার সূত্রে খবর, কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নতুন করে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। আগের অকেজো ক্যামেরাগুলিও বদলে নতুন ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। গোটা শহরে এই মুহূর্তে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০০টি। প্রযুক্তির প্রয়োগ বা ফুটেজের বৈশিষ্ট্যে উন্নত হওয়ায় এই নতুন ক্যামেরাগুলি দিয়ে সহজেই যে কোনও অপরাধমূলক কাজের তদন্ত করতে সুবিধা হবে। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, নতুন করে লাগানো এই ক্যামেরাগুলিতে এক মাসের ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। তা ছাড়া, ক্যামেরায় যে সব ছবি রেকর্ড হবে, তাতে যে কোনও তদন্তের কাজে খুঁটিনাটি সব তথ্যই বিশ্লেষণ করতে পারবেন গোয়েন্দারা।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই ৫০০টি ক্যামেরার মধ্যে আবার ৫০টি হল ‘ইনফ্রারেড’ বা ‘নাইট ভিশন’ ক্যামেরা। যার মাধ্যমে এ বার থেকে রাতেরও স্পষ্ট ছবি পেতে শুরু করেছে পুলিশ। এতে ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুরু করে গোয়েন্দা বিভাগ সকলেই উপকৃত হবেন। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরায় রাতের ছবি স্পষ্ট আসে না। ব্যক্তি, যানবাহন থেকে শুরু করে সব জিনিসই কালো দেখতে লাগে। কিন্তু ‘ইনফ্রারেড’ বা নাইট ভিশন ক্যামেরায় রাতের সব ছবিই স্পষ্ট ধরা পড়ে। ফলে বস্তু স্থির থাকুক বা নড়াচড়া করুক সবই রেকর্ড হয়।
লালবাজারের ওই গোয়েন্দাকর্তার কথায়, “এই ক্যামেরাগুলির মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালানো হবে। দিনের পাশাপাশি রাতের ছবিও যাতে স্পষ্ট পাওয়াায়, তাই সাধারণ ফিক্সড, প্যান-টিল জুম ক্যামেরার পাশাপাশি লাগানো হয়েছে ইনফ্রারেড ক্যামেরা। আর সেই ক্যামেরায় রেকর্ড করা ছবি দেখার জন্য লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুম ও ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম ছাড়াও শহরের বিভিন্ন ডিসি অফিস ও ট্রাফিক গার্ডগুলিতে এলাকা-ভিত্তিক কন্ট্রোলরুম তৈরি হয়েছে। সেখানে বসানো হবে সিসিটিভি। এর ফলে ক্যামেরা-বসানো সব ক’টি এলাকায় সমান নজরদারি চালানো যাবে বলে মনে করছে পুলিশ। পাশাপাশি কলকাতার পুলিশকর্তারা মোবাইলেও এই ক্যামেরার ছবি দেখতে পাবেন। কলকাতা পুলিশের যুগ্ন-কমিশনার পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “নতুন এই ক্যামেরাগুলির জন্য অপরাধমূলক কাজের তদন্তে সুবিধা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy