Advertisement
E-Paper

প্রত্যাশিত ভাবেই ট্যাক্সি ধর্মঘটে দিনভর নাকাল মহানগর

ধর্মঘট ব্যর্থ করতে পর্যাপ্ত বাস নামানোর আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। শাসক দলের ট্যাক্সি ইউনিয়নের দাবি ছিল, রাস্তায় নেমে তারা ধর্মঘট রুখবেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হল না। প্রত্যাশিত ভাবেই শুক্রবারের ট্যাক্সি ধর্মঘটে ভুগল শহর। হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বিমানবন্দর, উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা সর্বত্রই ট্যাক্সি না পেয়ে নাজেহাল হলেন মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
ধর্মঘট ভেঙে রাস্তায় কেন? ট্যাক্সিকে হুমকি ধর্মতলায়। (ডান দিকে) কী করে বাড়ি যাব? শিয়ালদহ স্টেশনে দুর্ভোগের মুখ। শুক্রবার।  নিজস্ব চিত্র

ধর্মঘট ভেঙে রাস্তায় কেন? ট্যাক্সিকে হুমকি ধর্মতলায়। (ডান দিকে) কী করে বাড়ি যাব? শিয়ালদহ স্টেশনে দুর্ভোগের মুখ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ধর্মঘট ব্যর্থ করতে পর্যাপ্ত বাস নামানোর আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। শাসক দলের ট্যাক্সি ইউনিয়নের দাবি ছিল, রাস্তায় নেমে তারা ধর্মঘট রুখবেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হল না। প্রত্যাশিত ভাবেই শুক্রবারের ট্যাক্সি ধর্মঘটে ভুগল শহর। হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বিমানবন্দর, উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা সর্বত্রই ট্যাক্সি না পেয়ে নাজেহাল হলেন মানুষ।

sবিরোধী ট্যাক্সিচালক ও মালিক ইউনিয়নগুলির ডাকা এই ধর্মঘট সফল হওয়ার ইঙ্গিত ছিল বৃহস্পতিবারেই। যা ব্যর্থ করতে পথে নামার আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন ও শাসক দলের ট্যাক্সি ইউনিয়ন। কিন্তু বাস্তবে তাদের ছিটেফোঁটা অস্তিত্বও মেলেনি। ফলে, দিনের শেষে সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, বিএমএস-সহ শ্রমিক সংগঠনগুলি এবং মালিক সংগঠন বেঙ্গল ট্যাক্সি ইউনিয়নের দাবি, তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন শহরের সব ট্যাক্সিচালকই। সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, “সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও ভাড়া বাড়ছে না। অন্য দিকে, পুলিশি জুলুম অব্যাহাত। এর প্রতিবাদেই সমস্ত ট্যাক্সিচালক ধর্মঘট করেছেন।” সিপিআইয়ের সংগঠন এআইটিইউসি অনুমোদিত ইউনিয়নের নেতা নওল কিশোর শ্রীবাস্তবও একই যুক্তি দিয়ে বলেন, “যেহেতু সব চালকই সমান ক্ষতিগ্রস্ত, তাই সকলেই ধর্মঘটে সামিল হন। রাস্তায় কোনও ট্যাক্সি বেরোয়নি।”

শাসক দলের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স ইউনিয়নের নেতা শম্ভুনাথ দে-র অবশ্য দাবি, “ধর্মঘট আংশিক সফল। সকাল সাড়ে ন’টা অবধি রাস্তায় ট্যাক্সিও ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মঘটীদের চাপের মুখে রাস্তা থেকে ট্যাক্সি উঠে গিয়েছে।”

তবে শম্ভুনাথবাবু বললেও শাসক দলের নেতারাই আড়ালে-আবডালে অন্য কথা বলছেন। তাঁদের কথায়, “একে ধর্মঘটের দাবিগুলির সঙ্গে ট্যাক্সিচালকেরা সহমত পোষণ করেন। এমনকী, প্রোগ্রেসিভের চালকেরাও। তার উপরে আজই ছিল মন্ত্রী মদন মিত্রের আদালতে হাজিরা। সেখানেও অনুগামীদের ভিড় বাড়াতে যেতে হয়েছে। তাই ধর্মঘট ব্যর্থ করতে রাস্তায় কার্যত ইউনিয়নের কাউকেই দেখা যায়নি। তাঁরা এখন বেশি চিন্তিত সারদা কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রীর জেলে যাওয়া নিয়ে।”

এ দিন নবান্ন অভিযানেরও ডাক দিয়েছিল সিটু। তবে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কম থাকায় ১টার বদলে হাওড়া স্টেশন থেকে অভিযান শুরু হয় দুপুর ২টোয়। সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী, অনাদি সাহু-সহ বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের অন্য নেতারা অংশ নেন। আগে থেকেই উর্দি ও সাদা পোশাকে বিশাল পুলিশ বাহিনী, জল কামান, কাঁদানে গ্যাস ও র্যাফ রাখা হয়েছিল নবান্ন ঘিরে। ফোরশোর রোডেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে সিটু নেতা অনাদি সাহুর নেতৃত্বে চার জনের প্রতিনিধি দলকে পুলিশের গাড়িতে নবান্নে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে অনাদিবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের ওএসডি বিনায়ক ঘোষের কাছে পুলিশি জুলুম কমানো, জরিমানার পরিমাণ কমানো, ওয়েটিং চার্জ বাড়ানো-সহ বিভিন্ন দাবি সংবলিত স্মারকলিপি জমা দেন। তিনি বলেন, “আর দিন দশেক দেখব। সরকার পুলিশি জুলুম ও ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে সদর্থক সিদ্ধান্ত না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। কারণ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায় করতে আন্দোলন বা ধর্মঘট ছাড়া পথ নেই। আগামী ২৩ তারিখ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”

এ সবের মধ্যেই দিনভর ট্যাক্সির খোঁজে হন্যে হয়েছেন সাধারণ মানুষ। শিয়ালদহে ট্রেন থেকে নেমে ট্যাক্সির অপেক্ষায় ছিলেন কসবার বাসিন্দা সুমিতা রায়। আর্থারাইটিজে পঙ্গু। শেষমেশ বাসে উঠেছেন। হাবরা থেকে বিপ্লব সরকার যাচ্ছিলেন হাওড়ায়। ছ’বছরের শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে বাসে ওঠেন তিনিও। স্টেশনের কাছের ট্যাক্সি বুথটি কার্যত চলে গিয়েছিল অটোর দখলে।

পিছিয়ে ছিল না হাওড়াও। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে বাস চালানোর কথা থাকলেও অফিসের ব্যস্ত সময়ে কয়েকটি বাস ছাড়া দিনভর আর সরকারি বাসের দেখা মেলেনি। আর সেই সুযোগেই এক শ্রেণির ট্যাক্সি দালাল দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বলে অভিযোগ।

দিল্লি থেকে আসা সোমক জৈন ও শ্বেতা জৈন ট্যাক্সির খোঁজ করতে এক দালাল এসে দু’কিলোমিটার দূরের মহাত্মা গাঁধী রোডে যেতে ৫০০ টাকা হাঁকেন। আপত্তি করলেও শেষে ওই টাকাতেই ব্যাগপত্র তুলে রওনা দেন ভাইবোন।

চিকিৎসার জন্য ধানবাদ থেকে হাওড়ায় নেমে হুইল চেয়ারে বসে ট্যাক্সির অপেক্ষায় ছিলেন অখিলেশ সিংহ। সঙ্গী দুই আত্মীয় প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ট্যাক্সি খুঁজে হতোদ্যম। শেষে এক ট্রাফিক পুলিশকে অনুরোধ করায় তিনি ট্যাক্সির ব্যবস্থা করে দেন। তাতে তুলে দেওয়া হয় কানপুর থেকে আসা দুই রোগিণীকেও।

ব্যতিক্রমী ছবিও ছিল অবশ্য। যোগমায়া দেবী কলেজে পৌঁছতে পার্ক সার্কাস থেকে সকাল সাতটায় বেরিয়েছিলেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী অশ্বিনী রাই। আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ট্যাক্সি নেই। বাড়ি ফিরে যাবেন ভাবছেন, এমন সময়েই এগিয়ে আসেন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের এক ট্যাক্সিচালক। বাড়তি ভাড়া দাবি না করেই অশ্বিনীকে পৌঁছে দেন তিনি।

পরিবহণ দফতরের অবশ্য দাবি, কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় বেশ কিছু অতিরিক্ত বাস এ দিন নামানো হয়েছে। সিএসটিসি অতিরিক্ত ৩৫০টি এবং সিটিসি ৫০টি বাস চালিয়েছে।

ট্যাক্সি না পেয়ে ভোগান্তির পাশাপাশিই গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ায় ধর্মতলায় এআইটিইউসির মিছিল। যার জেরে দুপুরে এস এন ব্যনার্জি রোডে কিছুটা যানজট হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। মিছিল চলাকালীন ধর্মঘটীরা একটি নীল-সাদা ট্যাক্সিকে আসতে দেখে পথ আটকান। এবং চালকের উপরে চড়াও হন বলেও অভিযোগ। তবে গোলমাল বড় আকার নেয়নি বলে জানায় পুলিশ।

taxi strike trade union
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy