Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
‘নেই’ তত্ত্বে মুখরক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা পুলিশের

‘পরিকাঠামো নেই’, অরক্ষিত বহু প্রবীণ

পরিকাঠামোর অভাবের পুরনো অজুহাত। পরিণতি, শহরে ফের আক্রান্ত এক বৃদ্ধা। শহরের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে বছর ছয়েক আগে লালবাজার চালু করেছিল ‘প্রণাম’ নামে একটি প্রকল্প। কিন্তু তা চালু থাকা সত্ত্বেও একের পর এক বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে ওই প্রকল্পের সার্থকতা নিয়ে। যার শেষতম সংযোজন হরিদেবপুরের দীপ্তি চক্রবর্তী (৭৫)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

পরিকাঠামোর অভাবের পুরনো অজুহাত। পরিণতি, শহরে ফের আক্রান্ত এক বৃদ্ধা।

শহরের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে বছর ছয়েক আগে লালবাজার চালু করেছিল ‘প্রণাম’ নামে একটি প্রকল্প। কিন্তু তা চালু থাকা সত্ত্বেও একের পর এক বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে ওই প্রকল্পের সার্থকতা নিয়ে। যার শেষতম সংযোজন হরিদেবপুরের দীপ্তি চক্রবর্তী (৭৫)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

লালবাজার সূত্রে খবর, একা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সহায়তায় ছ’বছরেরও বেশি সময় হল তৈরি হয়েছে ‘প্রণাম’ প্রকল্প। পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রকল্পের জন্য কলকাতা পুলিশের প্রতিটি থানাতেই এক জন অফিসারের নেতৃত্বে চার জন করে পুলিশকর্মীকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের ওই ৬৯টি থানা এলাকায় ‘প্রণাম’-এর সদস্য-সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কিছু বেশি। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, ছ’বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও এই সদস্য সংখ্যা এত কম কেন?

এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, “ঘটা করে চালু হয়েছিল ওই প্রকল্প। কিন্তু বর্তমানে তার সদস্য নিয়োগে বেশ খামতি থেকে গিয়েছে।” নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, প্রণামের প্রচার এখন আর করা হয় না। ফলে ওই প্রকল্প চালু থাকলেও তার সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যার শেষ উদাহরণ বৃহস্পতিবারের ঘটনা।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরের ঘটনাস্থল হরিদেবপুর থানার তারামণি ঘাট রোড। দুপুরে ডোরবেল বাজিয়েও দীপ্তিদেবীর সাড়া না পেয়ে তাঁর বৌমা বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখেন, সে দিকে দরজা খোলা। পিছনের দিকের একটি ঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন মেঝেয় পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধা শাশুড়ি। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর। এর পরেই খবর দেওয়া হয় পরিবারের অন্যদের এবং পুলিশকে। বৃদ্ধাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে।

গত বছরের শেষ সপ্তাহেই লেক এলাকায় বাড়ির প্রাক্তন পরিচারকের হাতে খুন হয়েছেন কমলাদেবী মিন্ত্রি নামে এক বৃদ্ধা। পরে পুলিশ জানতে পারে ওই বৃ্দ্ধার ঘর থাকা কয়েক লক্ষ টাকার গয়নার লোভেই খুন করা হয়েছিল তাঁকে। শুধু কমলাদেবী নয় টালিগঞ্জের রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়, পাটুলির শঙ্কর প্রসাদ রায়-সহ আরও অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই এর আগেও শহরের বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতীদের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েক বার। পুলিশ জানায়, কোথাও পরিচারক, কখনও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কখনও সাফাইকর্মী হিসেবে কাজে ঢুকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের একা থাকার সুযোগ নিয়ে লুঠপাট করে চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।

লালবাজারের এক কর্তার কথায়, “বর্তমানে বিভিন্ন থানার পরিকাঠামো এখনও পর্যাপ্ত নয়। তাই প্রত্যেক থানা এলাকায় সব নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে আলাদা করে নিরাপত্তা দেওয়া হয়তো সম্ভব হচ্ছে না।”

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, ওই পাড়ার কেব্ল টিভির সঙ্গে যুক্ত কোনও যুবক দীপ্তিদেবীর সোনার গয়না হাতানোর জন্যই এ দিন হামলা চালায়। কারণ, বৃদ্ধার বৌমা পুলিশকে জানান, তাঁর শাশুড়ির হাতে, গলায়, আঙুলে সোনার গয়না ছিল। ঘটনার পরে গয়নাগুলির হদিস মিলছে না।

দীপ্তিদেবীর প্রতিবেশীরা জানান, ওই বৃদ্ধা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর স্বামী রেলে কাজ করতেন। আট মাস আগে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃদ্ধার দুই ছেলে অমিত ও সুমিত থাকেন গড়িয়া ও বাঁশদ্রোণীতে। জানা যায়, দীপ্তিদেবীর বাড়িতে এক পরিচারিকা বিকেলে আসেন এবং রাতে থেকে পরের দিন ভোরে চলে যান। প্রতিবেশী অনুকূল সরকার ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী জানান, তাঁরা এ দিন দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ দেখেন, এক যুবক ওই বৃদ্ধার বাড়ির সামনের ল্যাম্পপোস্টে উঠে টেলিফোন ও কেব্ল লাইনের জট সারাচ্ছে। এ দিকে, বৃদ্ধার বড় ছেলের স্ত্রী মৌদেবী জানান, এ দিন শাশুড়ি তাঁকে ফোন করে জানান, কেব্ল সারাতে লোক এসেছে। মৌদেবী তাঁকে বলেন, দরজা খুলে দিয়ে তিনি যেন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন অথবা পাশের বাড়ির কাউকে যেন ডেকে নেন।

মৌদেবী জানান, এ দিন দুপুরে তাঁর দীপ্তিদেবীর কাছে আসার কথা ছিল। দুপুর একটা নাগাদ তিনি পৌঁছে ওই দৃশ্য দেখেন। তিনি জানান, পাড়ার লোকজনের সাহায্যে দীপ্তিদেবীকে প্রথমে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় একবালপুরের বেসরকারি হাসপাতালে। প্রতিবেশীদের বয়ান মতো ওই দুষ্কৃতীর স্কেচ আঁকানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police pranam security old people
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE