Advertisement
E-Paper

বিরল ক্রেতা, কার্ড-বাজার খাঁ খাঁ

দুই পৃথিবীর গল্প। এক পাশে যখন বোধনের বাদ্যি গমগমিয়ে, আর এক পাশে বিসর্জনের খাঁ-খাঁ শূন্যতা। বাড়িয়ে বলা নয়। বড়দিনের নিউ মার্কেটে ঢুকলে এটাই মালুম হবে। শতাব্দী-প্রাচীন নাহুমের কেকের টানে যখন নামী মণ্ডপে ঠাকুর দেখার মতো লম্বা লাইন, ফ্লাওয়ার রেঞ্জের পিছনে শুভেচ্ছা-কার্ডের সাবেক দোকানটায় ক্রেতার বিক্ষিপ্ত আনাগোনা।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১

দুই পৃথিবীর গল্প। এক পাশে যখন বোধনের বাদ্যি গমগমিয়ে, আর এক পাশে বিসর্জনের খাঁ-খাঁ শূন্যতা।

বাড়িয়ে বলা নয়। বড়দিনের নিউ মার্কেটে ঢুকলে এটাই মালুম হবে। শতাব্দী-প্রাচীন নাহুমের কেকের টানে যখন নামী মণ্ডপে ঠাকুর দেখার মতো লম্বা লাইন, ফ্লাওয়ার রেঞ্জের পিছনে শুভেচ্ছা-কার্ডের সাবেক দোকানটায় ক্রেতার বিক্ষিপ্ত আনাগোনা। সাত দশকের পুরনো ফ্রেন্ডস গ্যালারি-র কর্তা বরুণ ঘোষ হাসলেন, “আগে বড়দিনের সময়টায় এই ভরসন্ধেয় কি আপনার সঙ্গে কথা বলার ফুরসত পেতাম? তবেই বুঝুন কার্ডের পসার কোথায় গিয়ে ঠেকেছে!”

লিন্ডসে স্ট্রিটের নামজাদা ‘আর্চিজ গ্যালারি’-র ছবিটাও কম করুণ নয়। প্রাক্-বড়দিন সন্ধেয় সেখানে দেখা ব্রিটেনবাসী ডেলিস ডুপ্র্যাটের সঙ্গে। কলকাতায় জন্মানো মহিলা এ শহরে এসেছেন, অশীতিপর মায়ের সঙ্গে বড়দিন কাটাতে। প্রিয়জনেদের জন্য গুনে গুনে বিলেত থেকেই কার্ড এনেছিলেন। একটা কম পড়ায় হঠাত্‌ লিন্ডসে স্ট্রিটের দোকানের শরণ নিতে হল। ডেলিস স্পষ্ট জানালেন, “আমার মতো গ্রিটিংস কার্ডপ্রেমী এখন সত্যিই সংখ্যালঘু।”

মোবাইলে এসএমএসের রমরমা থেকে শুরু করে ফেসবুক-হোয়াট্স অ্যাপের বিস্তার, একে একে শুভেচ্ছা কার্ডের কফিনে পেরেক ঠুকেই চলেছে। রকমারি ই-কার্ডও তৈরি হচ্ছে। শহরের একটি নামী বিজ্ঞাপন সংস্থার পোড়খাওয়া পেশাদার জয় আইচভৌমিকই বলছিলেন, “কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কার্ডের বরাত শতকরা ৬০ ভাগ কমে গিয়েছে।” তবে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর উপরে কার্ড তৈরির চাপ আরও বেড়েছে। যেমন, আগে একসঙ্গে বড়দিন-নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা জানানোই দস্তুর ছিল। এখন বিভিন্ন উপলক্ষে আলাদা-আলাদা ই-কার্ডের চল। এমনকী, ধরা যাক একটি সংস্থা একসঙ্গে জুতো ও শাড়ি তৈরি করে। ‘প্রোডাক্ট’পিছু তারা এখন মানানসই ই-কার্ড তৈরি করাচ্ছে। ই-মেলে পাঠানোর সুবিধের দরুণ বিভিন্ন উপলক্ষের ছুতোয় বার বার শুভেচ্ছা পাঠিয়ে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা বহাল। কার্ড বিলির বদলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা এখন নিজেদের ফেসবুক পেজ তৈরিতেও যত্ন নিচ্ছে। সেটাও সামাজিকতার হাতিয়ার।

একদা শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রির মাধ্যমে সমাজসেবার কাজের টাকা জোগাড় করত কয়েকটি সংস্থা।

তারাও অন্য ভাবে ভাবছে। শিশুদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় ক্রাই সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র অভীক ভট্টাচার্য বললেন, “নির্দিষ্ট টিমের মাধ্যমে কার্ড তৈরি করে এখনও বিক্রি করা হয়, ঠিকই। তবে ব্যক্তিগত দান সংগ্রহে ইদানীং বেশি জোর দিচ্ছি।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনি-র এক কর্তা কাকলী দে বললেন, “কর্পোরেটদের মাধ্যমে কার্ড বিক্রি এখন বন্ধ। তা ছাড়া, গাছ ধ্বংস করে কাগজের এত ব্যবহারও তো ক্ষতির!”

তবে শুভেচ্ছা পাঠাতে নেটনির্ভর হলেই যে পরিবেশের ভাল হচ্ছে, তা-ও সবাই মানছেন না। পরিবেশকর্মী তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় যেমন বললেন, “বেশি-বেশি নেট ব্যবহার করলেও তো বিদ্যুতের বাড়তি খরচ হবে। তাতেও একই ক্ষতি!” কলকাতায় পরিবেশবন্ধু কাগজের সামগ্রী তৈরির সংস্থা অরণ্য-ও কিন্তু কার্ড বিক্রি একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। তাদের কর্ণধার চন্দনী বসুর যুক্তি, “হাতে ধরার কার্ডের কদর আগের থেকে কম।”

কার্ড-কারবার ধাক্কা খাওয়ায় এ দেশে বেশ কয়েকটি সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়েছে। আর্চিজ অবশ্য কয়েকটি সংস্থা কিনে নিয়ে লড়ে যাচ্ছে। এখানে তাদের ডিস্ট্রিবিউটর পিকু সাহা বললেন, “সংখ্যা নয়, গুণমানটাই এখন মাথাব্যথা।” আগে ১০০ টাকার কার্ড ২৫টা তৈরি হতো। এখন তার চার গুণ হচ্ছে। কিন্তু সস্তার কার্ডটার্ড সব বাতিল। কার্ডের নকশা, লেখালেখি নিয়েও ঢের বেশি মাথা ঘামানো হচ্ছে। কারবারিদের অভিজ্ঞতা, ইদানীং কলেজপড়ুয়াদের তুলনায় মাঝবয়সীরাই কার্ডের বেশি সমঝদার।

স্মার্টফোনে চটজলদি শুভেচ্ছার বদলে প্রিয়জনের জন্য অনেক খুঁজে ‘মনের কথা’টির সন্ধান এখন বিরল রোম্যান্টিকদের খেয়াল।

riju basu greetings card greetings card business
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy