Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মহাজাতি সদন সংস্কারে হাত ৭৫ বছর পরে

এই প্রথম ৭৫ বছরের মহাজাতি সদনে শুরু হল আধুনিকীকরণের কাজ। সংস্কারে খরচ হবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। দায়িত্ব নিয়েছে পূর্ত দফতর। অর্থ বরাদ্দ করছে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সংস্কারের পরে এটি শহরের একটি আকর্ষণীয় প্রেক্ষাগৃহ হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।

অশোক সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

এই প্রথম ৭৫ বছরের মহাজাতি সদনে শুরু হল আধুনিকীকরণের কাজ। সংস্কারে খরচ হবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। দায়িত্ব নিয়েছে পূর্ত দফতর। অর্থ বরাদ্দ করছে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সংস্কারের পরে এটি শহরের একটি আকর্ষণীয় প্রেক্ষাগৃহ হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।

এ দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে বক্তৃতা দেওয়ার উপযুক্ত কোনও প্রেক্ষাগৃহ ছিল না। ১৯৩৭ সালের মে মাসে সুভাষ চন্দ্র বসু এলগিন রোডের বাড়িতে সতীর্থদের বলেন নাগরিক সভা করার জন্য একটি হল তৈরি করা দরকার। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে কলকাতা পুরসভা তৎকালীন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ধারে ১৮ কাঠা জমি ১ টাকায় বরাদ্দ করে। প্রেক্ষাগৃহের নকশা তৈরি করেন শান্তিনিকেতনের বিশিষ্ট স্থপতি সুরেন্দ্রনাথ কর। ১৯৩৯ সালের ১৯ অগাস্ট ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাঝে বহু দিন কাজ থমকে থাকার পরে এই প্রেক্ষাগৃহের দ্বারোদ্ঘাটন হয় ১৯৫৮ সালের ১৯ অগস্ট।

ঐতিহাসিক সেই শিলান্যাসকে সূচক ধরে এ বছর ১৯ আগস্ট ৭৫ পূর্ণ করছে মহাজাতি সদন। তৈরির পর থেকে এক বারও বড় মাপের সংস্কার হয়নি ঐতিহ্যপূর্ণ এই প্রেক্ষাগৃহের। গত কয়েক দশকে শহরের বিভিন্ন স্থানে সময়োপযোগী প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হলেও মহাজাতি সদন পড়ে ছিল অনেকটা সেকেলে অবস্থায়। রাজ্যে পালাবদলের পরে মূলত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আগ্রহে এই ভোলবদলের সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে গত মার্চ মাস থেকে সেখানকার সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সচিব নুরুল হুদা বলেন, “চেষ্টা চলছে আগামী ডিসেম্বর মাসে সংস্কারের সব কাজ শেষ করার।”

কী কাজ হচ্ছে সেখানে? পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, তিনতলা ভবনটির ভিতরে ও বাইরে সংস্কার ও রং করা হবে। মূল প্রেক্ষাগৃহের উচ্চতা ও মঞ্চের আয়তন বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিকীকরণ হচ্ছে আলো ও ধ্বনি-ব্যবস্থারও। বসানো হবে আধুনিক ‘সাইক্লোরামা স্ক্রিন’। সাতটি বাথরুমের প্রতিটি ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন করে। বহু বছর বন্ধ থাকা তৃতীয় তলের ব্যালকনি ফের খোলার ব্যবস্থা হবে। পুরনো চেয়ার বাতিল করে বসানো হবে নতুন বসার জায়গা। এখন প্রেক্ষাগৃহের আসনসংখ্যা ১৩০৯। কর্তৃপক্ষ জানান, সংখ্যাটা কিছু বাড়বে। এর পাশাপাশি মানোন্নয়ন হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার।

বিশিষ্ট বেশ কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন ও কীর্তি নিয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিল মহাজাতি সদন। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, শীঘ্রই এটির তৃতীয় ও পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশের চেষ্টা হচ্ছে। চার শতাধিক সংগ্রামীর জীবনের উপরে আলোকপাত থাকবে এতে। প্রদর্শশালায় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ থেকে ১৯৩০ সালে গাঁধীজির লবণ আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের ২১টি অধ্যায় মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও আছে ৫১৭ জন সংগ্রামীর আড়াই ফুট বাই দু’ফুটের তৈলচিত্র। মানোন্নয়ন হবে সেগুলিরও।

ঐতিহ্যপূর্ণ এই প্রেক্ষাগৃহের ৭৫ বছর স্মরণে বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশের প্রস্তাব এসেছে মহাজাতি সদন কর্তৃপক্ষের কাছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা যোগাযোগ করছেন ডাক-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ashok sengupta mahajati sadan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE