Advertisement
E-Paper

রাতের ট্যাক্সিকে যাত্রী ফেরাতে পথ তৈরি করে দিলেন মমতা

রাতের কলকাতায় ট্যাক্সির যাত্রী প্রত্যাখ্যানকে কার্যত শিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, যাত্রী প্রত্যাখ্যানে ট্যাক্সির জরিমানা তিন হাজার থেকে কমিয়ে বেঁধে দিলেন একশো থেকে হাজার টাকায়। প্রথম থেকে তৃতীয় বার পর্যন্ত ১০০-২০০-৩০০ টাকা, চতুর্থ বার ৫০০, তার পরে ১০০০। ট্যাক্সিকে অধিকার দিলেন রাস্তায় পার্কিংয়েরও। ট্যাক্সির দৌরাত্ম্য নিয়ে শহরের মানুষের ক্ষোভ, অভিযোগ সীমাহীন। ট্রাফিক পুলিশও ট্যাক্সি নিয়ে নানা সমস্যায় জেরবার। এই অবস্থায় ট্যাক্সিচালকদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ‘নরম’ মনোভাব স্বভাবতই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তুলেছে, এতে যাত্রী দুর্ভোগ আরও বেশি বাড়বে না তো?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩২
নজরুল মঞ্চে পরিবহণকর্মীদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নজরুল মঞ্চে পরিবহণকর্মীদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

রাতের কলকাতায় ট্যাক্সির যাত্রী প্রত্যাখ্যানকে কার্যত শিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, যাত্রী প্রত্যাখ্যানে ট্যাক্সির জরিমানা তিন হাজার থেকে কমিয়ে বেঁধে দিলেন একশো থেকে হাজার টাকায়। প্রথম থেকে তৃতীয় বার পর্যন্ত ১০০-২০০-৩০০ টাকা, চতুর্থ বার ৫০০, তার পরে ১০০০। ট্যাক্সিকে অধিকার দিলেন রাস্তায় পার্কিংয়েরও।

ট্যাক্সির দৌরাত্ম্য নিয়ে শহরের মানুষের ক্ষোভ, অভিযোগ সীমাহীন। ট্রাফিক পুলিশও ট্যাক্সি নিয়ে নানা সমস্যায় জেরবার। এই অবস্থায় ট্যাক্সিচালকদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ‘নরম’ মনোভাব স্বভাবতই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তুলেছে, এতে যাত্রী দুর্ভোগ আরও বেশি বাড়বে না তো?

অনেকেরই জিজ্ঞাসা, ট্যাক্সি সংগঠনে তৃণমূলের জমি আলগা হওয়ার আঁচ পেয়েই কি মুখ্যমন্ত্রী ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে চাইছেন? এর পিছনে ভোট রাজনীতি কাজ করছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। পুর-নির্বাচন আসন্ন। তার পরে ধাপে ধাপে সাধারণ নির্বাচনের পালা। দলের ভিত মজবুত করার ক্ষেত্রে ট্যাক্সি সংগঠনকে সঙ্গে পাওয়ার তাগিদ তাই মমতার আছে বলেই মত অনেকের।

কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তুষার তালুকদারের মতে, “কিছু দিন ধরে ট্যাক্সিচালকেরা ঘন ঘন ধর্মঘট ডাকছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাই তাঁদের একটু খুশি করতে চেয়েছেন। বাস্তবে ট্যাক্সিচালকদের কাছে সরকার আত্মসমর্পণ করল। এতে তারা আরও বেপরোয়া হবে। যাত্রী প্রত্যাখ্যানও আরও বাড়বে।”

বৃহস্পতিবার নজরুল মঞ্চে পরিবহণ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ঘোষণার এক অনুষ্ঠানে কার্যত ট্যাক্সিচালকদের যাত্রী প্রত্যাখ্যানের পক্ষেই দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী। রাতের যাত্রী প্রত্যাখ্যানের সমস্যা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, “ছোটবেলা থেকে আমি ট্যাক্সি চড়ছি। এটা নতুন ব্যাপার নয়। এগুলোকে আমি খুব বড় ভাবে দেখি না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “ভালবেসে কাজ করার দিকে আমার নজর বেশি। অনেক সমস্যা থাকতে পারে। কতগুলি মানবিক সমস্যাও রয়েছে। সেগুলোতে আমরা যেন কোনও কড়া ব্যবস্থা না নিই।”

ট্যাক্সিচালকদের যাত্রী প্রত্যাখ্যানকে বাগে আনতে তিন হাজার টাকা জরিমানা চালু করেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। নিজের দলের মন্ত্রীর তৈরি ওই আইনই এ দিন খারিজ করে দিয়ে চালকদের অভিযোগ শোনার জন্যএকটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার নেতৃত্বে থাকছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রত ছাড়াও ওই কমিটিতে রয়েছেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

এ দিন জরিমানা পুনর্বিন্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কি, ঠিক আছে তো? তিন হাজার টাকা জরিমানা বেশি। আমাকে কেউ বলেননি। নিজেই বিচার করেছি।” তিন হাজার টাকা জরিমানা এবং পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে সিটু, আইএনটিইউসি, বিএমএস, এআইটিইউসি কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন করে আসছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা ওই আন্দোলনেরই ফসল বলে দাবি করেছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। সিটু নেতা অনাদি সাহুর বক্তব্য, “ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলনের চাপেই মুখ্যমন্ত্রী এ সব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। এটা আমাদের আংশিক সাফল্য। আমাদের আরও কিছু দাবি ছিল, সেগুলির দাবিতে কী পদক্ষেপ করব, তা আমরা একসঙ্গে বসেই সিদ্ধান্ত নেব।” বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, “এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ট্যাক্সিচালকদের যাত্রী প্রত্যাখ্যানের প্রবণতাকেই আইনি স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছেন।”

ট্যাক্সি-অটোর রাস্তার ধারে পার্কিং করা নিয়েও এ দিন দরাজ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষের কিছুক্ষণ আগে তিনি ঘোষণা করেন, “শহরে এখনও স্ট্যান্ড তৈরি হয়নি। তা না-হওয়া পর্যন্ত ফর নাথিং যেন ওদের কেস খেতে না-হয়।” এতে শহরের ট্রাফিক সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। এক পুলিশকর্তার কথায়, “অফিসটাইমে ট্যাক্সি-অটোকে শাসন না করলে যাত্রীদের হয়রানির মুখে পড়তে হয়। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে তাদের কেস না-দিতে বলেছেন, তাতে ট্রাফিক জট আরও বাড়বে। একই বক্তব্য পরিবহণ বিশেষজ্ঞ থেকে নগর পরিকল্পক, সকলেরই। পরিবহণ বিশেষজ্ঞ সোমেন্দ্রনারায়ণ ঘোষের কথায়, “জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে দিলে যাত্রী প্রত্যাখ্যান বেড়ে যাবে, কমবে না। যথেচ্ছ পার্কিংয়েও শহরে ট্রাফিক জট বাড়বে।”

অন্য দিকে, নগর পরিকল্পক দীপঙ্কর সিংহ বলেন, “এমনিতেই এ শহরে পরিকল্পিত পার্কিংয়ের জায়গা যথেষ্ট কম। তার উপরে ট্যাক্সির এই দৌরাত্ম্য শুরু হলে পুরো ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে। হয়রানি বাড়বে সাধারণ মানুষের। পুলিশেরও।”

এ দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পরিবহণ শ্রমিকদের জন্য নয়া সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ঘোষণা করেন। সেখানে এক বার তিরিশ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পরে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা ৬০ বছর বয়সের পরে মাসিক দেড় হাজার টাকা করে পেনশন, ছেলেমেয়ের বিয়ের সময়ে ২০ হাজার টাকা অনুদান, দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত পরিবারের স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্পকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদিবাবু। তিনি বলেন, “এটা তো অর্থ দফতরের টাকা নয়। গাড়ির মালিকদের দেওয়া সেস থেকে পরিবহণ শ্রমিকদের জন্য গড়া তহবিল থেকে এই অর্থ দেওয়া হবে। কিন্তু ওই তহবিলের টাকা কী ভাবে খরচ হবে, তা ওখানকার কমিটিতে থাকা শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করার কথা। কিন্তু সে সব না করে একতরফা ভাবে মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা অসাংবিধানিক।”

যদিও তৃণমূলপন্থী ট্যাক্সিমালিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শম্ভুনাথ দে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ট্যাক্সিচালকদের কথা ভেবেছেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।”

mamata taxi refusal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy