অত্যাচারের চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক ছাত্র। —নিজস্ব চিত্র
রবীন্দ্রভারতীর পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজরা আইন কলেজ। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মারধর, অশান্তি। এবং আবার অভিযুক্ত সেই শাসক দল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-ই।
আগেও ধমক-চমক, নিষেধ-নির্দেশিকা হয়েছে। এমনকী বুধবারেও নিজের দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কিছুই যে তাদের কানে ঢোকেনি, এ দিন টিএমসিপি তা প্রমাণ করে দিল। হাজরা আইন কলেজে তারাই গোলমাল পাকিয়েছে বলে অভিযোগ।
অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিএমসিপি। যদিও এ দিন বালিগঞ্জ থানায় ওই ক্যাম্পাসের এক দল ছাত্রের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া শৌর্যদীপ সাহা। অভিযুক্তদের সকলেই টিএমসিপি-সমর্থক বলে ওই ছাত্রের অভিযোগ। মৌখিক ভাবে একই কথা জানালেও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি অন্য এক ছাত্র।
আইন বিভাগে পরীক্ষা ছিল। বেলা ২টো নাগাদ পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর সময় টিএমসিপি-সমর্থক জনা ছয়েক ছাত্র তাঁদের ডেকে ছাত্র সংসদের ঘরে নিয়ে যান বলে শৌর্যদীপ এবং অন্য পড়ুয়াটির অভিযোগ। শৌর্যদীপের কথায়, “আমরা ছাত্র সংগঠন এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ)-তে যোগ দিয়েছি কি না, তা জানতে চায় ওরা। আমরা কোনও উত্তর দিইনি।” তার পরেই টিএমসিপি-সমর্থকেরা তাঁদের মারধর করে, কান ধরে বসিয়ে রাখে বলে অভিযোগ। চেঁচামেচি করলে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না বলে শাসানোও হয় তাঁদের।
প্রতিবাদ করায় দুই পড়ুয়াকে ছাত্র সংসদের ঘরের মেঝেতে ফেলে এক জনের ডান হাতে সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হয় এবং বাঁ হাতে ব্লেড চালানো হয় বলে অভিযোগ। ঘরে হাজির অন্য পড়ুয়ারা প্রতিবাদের সাহস পাননি। আক্রান্তদের অভিযোগ, তাঁরা বিভাগীয় প্রধানকে সব জানাতে চাইলেও সেই সুযোগ দেয়নি টিএমসিপি-সমর্থকেরা। মারধর করে তাঁদের ক্যাম্পাসের বাইরে বার করে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ সূত্রের খবর, অভিযোগকারীরা আগে টিএমসিপি-র সমর্থক ছিলেন। ইদানীং টিএমসিপি-র সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাঁদের। তার জেরেই এই অত্যাচার।
এ দিনই তৃণমূল ভবনে টিএমসিপি-র সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি রক্ষার কড়া বার্তা দিয়েছেন। ছাত্র ভর্তির সময় হেল্প ডেস্ক করা যাবে না, নির্বাচনে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এর আগেও ছাত্র সংগঠনকে সংযমী হওয়ার কড়া বার্তা দিয়েছেন মন্ত্রী। কিন্তু কিছুতেই যে কিছু হওয়ার নয়, টিএমসিপি-র আচরণে বারবার তা প্রমাণিত হচ্ছে।
ইংরেজির বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে দু’দিন আগেই রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যকে ঘেরাও করে শিরোনামে এসেছে টিএমসিপি। শিক্ষামন্ত্রীর কড়া বার্তা, উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর হস্তক্ষেপের ফলে আপাতত তারা কিছুটা ব্যাকফুটে। যদিও ঘেরাওয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দেন টিএমসিপি-র নেতারা। হাজরা আইন কলেজের ক্ষেত্রেও দায় এড়িয়েছেন টিএমসিপি-র সভাপতি অশোক রুদ্র। তিনি বলেন, “অভিযোগকারীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে গোলমাল করছে। আর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের উপরে দোষ চাপাচ্ছে।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, গোলমালের ঘটনার কথা তাঁরা কানাঘুষোয় শুনেছেন। তবে এই নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ পাননি। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “অভিযোগকারীরা লিখিত ভাবে বিষয়টি জানালে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy