Advertisement
২১ মে ২০২৪

হাহুতাশ যাচ্ছে না, আসলটাই ‘মিস’

মাঠ জুড়ে ইতস্তত ছড়িয়ে নানা ধরনের, নানা মাপের চপ্পল। কোথাও ফুচকার শালপাতা, আধখাওয়া আইসক্রিম, রঙিন রুমাল। কিন্তু ঠাকুর দেখতে আসা মানুষগুলো নেই। বোধনের আগেই বিসর্জনের স্তব্ধতা দেশপ্রিয় পার্কে!

বন্ধ প্রবেশ পথ। তবু কমতি নেই মানুষের। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

বন্ধ প্রবেশ পথ। তবু কমতি নেই মানুষের। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

সব শোরগোল যেন হঠাত্ থমকে গিয়েছে কোনও মন্ত্রবলে।

মাঠ জুড়ে ইতস্তত ছড়িয়ে নানা ধরনের, নানা মাপের চপ্পল। কোথাও ফুচকার শালপাতা, আধখাওয়া আইসক্রিম, রঙিন রুমাল। কিন্তু ঠাকুর দেখতে আসা মানুষগুলো নেই। বোধনের আগেই বিসর্জনের স্তব্ধতা দেশপ্রিয় পার্কে! পঞ্চমীর সন্ধ্যায় ফাঁকা মাঠে শুধু পুলিশের পায়চারি। এই শূন্যতার মাঝখানে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ‘বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গা’!

গত প্রায় তিন মাস ধরে কলকাতা ও কলকাতার বাইরে পেল্লায় হোর্ডিং দিয়ে ধাপে ধাপে সাসপেন্স চড়িয়ে শেষ পর্যন্ত এই ‘ক্যাচলাইন’ দিয়েই রহস্য ফাঁস করেছিলেন দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর উদ্যোক্তারা। বর্ধমান, আসানসোল, বালুরঘাট, শিলিগুড়ি এমনকী প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দাদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছিল ‘এত বড়! সত্যি?’ পুজোর খবর। পুজো জমে ওঠার আগে থেকেই ভিড় জমছিল মণ্ডপ ঘিরে। রবিবার যা বাঁধভাঙা হয়ে পুজোটাই আপাতত বন্ধ করে দিল!

যানজট আর ভিড়ের জোড়া চাপে পুজোর গেট বন্ধ করে দেওয়া হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। ঘণ্টাখানেক পরে দেশপ্রিয় পার্কে গিয়ে দেখা যায়, তখনও একে একে বের করে দেওয়া হচ্ছে দর্শনার্থীদের। তাতেও অবশ্য দমানো যাচ্ছে না অনেককে। বিপদের আশঙ্কা ভুলে অতি উত্সাহী কয়েক জন রেলিঙের উপরে চড়ে মোবাইলে মণ্ডপের (আদতে যেটিকে প্রতিমা বলে প্রচার করা হয়েছিল) ছবি তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মণ্ডপের পিছনে চলছে পুজোকর্তাদের উদ্বিগ্ন আলোচনা। পাশের বেঞ্চে বসে পুলিশকর্মীরা। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘কী যে হল! বিগ্রেড থেকে শুরু করে বড় বড় জমায়েত সামাল দিই। কিন্তু এটা যে সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবে বুঝিনি!’’

দর্শনার্থীদের অনেকেই তখন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। ‘এটা কোনও কথা হল?’, ‘এত দূর এসে কোনও মানে হয়?’ গোছের মন্তব্য উড়ে আসছিল ভিড়ের এ দিক-ও দিক থেকে। সুরুচি সঙ্ঘের ঠাকুর দেখা সেরে দেশপ্রিয় পার্কে যাওয়ার কথা ছিল হাতিবাগানের মৌমিতা রায়ের। বন্ধুর ফোনে খবরটা পেয়েই স্বগতোক্তি, ‘‘ইস! আসল ঠাকুরটাই মিস হয়ে গেল!’’ তত ক্ষণে শুধু খবর নয়, হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা গুজবও। যা শুনে আঁতকে উঠছিলেন অনেকেই।

দেবেশ মিদ্যা এসেছিলেন শক্তিগড় থেকে। তাঁর ছ’বছরের মেয়ে মুখ ভার করে বলল, ‘‘বন্ধুরা বলেছিল ছবি তুলে আনতে। ঠাকুরটা তো দেখতেই দিল না!’’ দুর্গাপুরের অমর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘‘ভেবেছিলাম পঞ্চমীতে অন্তত ফাঁকায় দেখতে পাব। এমন দুর্ভোগে পড়তে হবে আগে তো বুঝিনি।’’

রাসবিহারী অ্যাভিনিউ এবং রাসবিহারী কানেক্টর দিয়ে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিকেলের আগেই। তার জের গিয়ে পড়ে আশপাশের রাস্তাতেও। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, ভবানীপুরের বাসিন্দা অমিত দাসের নিজের গাড়িতে টালিগঞ্জ থেকে হাজরা পৌছতে সময় লেগে যায় প্রায় এক ঘণ্টা। এক ছাত্র জানালেন, রুবি মোড় থেকে রাসবিহারী আসতে তাঁর সময় লেগেছে পাক্কা আড়াই ঘণ্টা!

অনেকে বলছিলেন, পুলিশ ও পুজো-উদ্যোক্তাদের মধ্যে কার কতটা ব্যর্থতা, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকছে ঠিকই। কিন্তু এ দিনের বিশৃঙ্খলার পিছনে হুজুগও কি দায়ী নয়? বস্তুত, বহু দর্শনার্থী যে ভাবে অন্য সব পুজো ছেড়ে ভোগান্তি মাথায় করেও দেশপ্রিয় পার্কে ছুটেছেন, এত অব্যবস্থায় পদপিষ্ট হওয়ার দশা হলেও ‘আসল পুজোটাই দেখা হল না’ বলে আক্ষেপ করেছেন, তাতে কিন্তু প্রশ্নটা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। রাত আটটা নাগাদ বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনের মাইক্রোফোনে ঘোষণা হল— ‘দেশপ্রিয় পার্কের মণ্ডপটি আপাতত বন্ধ আছে। আপনারা কেউ ও দিকে যাবেন না।’’ শোনা মাত্র প্ল্যাটফর্মে হাহুতাশ!

ততক্ষণে দেশপ্রিয় পার্ক ফাঁকা। তবে রাত পর্যন্ত সংলগ্ন রাস্তায় সার দিয়ে গাড়ি এগোচ্ছিল ইঞ্চি ইঞ্চি করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শনিবার রাতেও একই হাল ছিল রাস্তার। ভোররাত পর্যন্ত গাড়ির সারি ছিল কসবা, গড়িয়াহাটে। কিন্তু পুলিশ কোনও শিক্ষাই নেয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abpnewsletters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE