Advertisement
E-Paper

কোর্টে মদনের নাম তুললেন কুণাল

আদালতে দাঁড়িয়ে আগে এক দিন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, সারদার মিডিয়া থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যদি কেউ সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দিন একটি পুজো কমিটির ‘পাস’ বিচারককে দেখিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এখানে চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে আগের শিল্পমন্ত্রীর। স্পনসর করেছে একাধিক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা।’ এ বার সারদার সঙ্গে যোগসূত্র হিসেবে টেনে আনলেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রর নাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৩৫
পুলিশি প্রহরায় কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

পুলিশি প্রহরায় কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

আদালতে দাঁড়িয়ে আগে এক দিন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, সারদার মিডিয়া থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যদি কেউ সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দিন একটি পুজো কমিটির ‘পাস’ বিচারককে দেখিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এখানে চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে আগের শিল্পমন্ত্রীর। স্পনসর করেছে একাধিক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা।’ এ বার সারদার সঙ্গে যোগসূত্র হিসেবে টেনে আনলেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রর নাম।

বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের এজলাসে হাজির হয়ে নিজেই সওয়াল করে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, “আমাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। অথচ সারদার কর্মী ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মদন মিত্র। তাঁকে তো জিজ্ঞাসাবাদই করা হচ্ছে না?” একটি সংবাদপত্র গোষ্ঠী ও তার দুই মালিকের নাম করে তিনি বলেন, “ভুয়ো বিল দেখিয়ে সারদার মিডিয়ার টাকা ওই সংস্থার কর্তারা হাতিয়ে নিয়েছেন। কই, তাঁদের তো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না?”

সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুণাল ছাড়াও এ দিন সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়। শুনানি চলাকালীন কুণালের মুখে সারদা নিয়ে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা শুনে ক্ষেপে ওঠেন তৃণমূল আইনজীবী সেলের সদস্যরা। যদিও কুণাল এ দিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেননি, তবু ওই আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র বলতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন কুণাল।

এই নিয়ে দু’পক্ষের বাদানুবাদ ও চিৎকার-চেঁচাচেমিতে সরগরম হয়ে ওঠে আদালত কক্ষ। আইনজীবীদের মধ্যে যে মহিলা সবচেয়ে বেশি চিৎকার করছিলেন, তৃণমূল আইনজীবী সেলের সেই সম্পাদক কেয়া চৌধুরীর উদ্দেশে ধমক দিয়ে বিচারক অরবিন্দ মিশ্র বলেন, “আপনি কার হয়ে সওয়াল করছেন?” কেয়াদেবীর জবাব, “আমি প্রতিবাদ করছি। আমাদের দলের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন কুণাল।”

বিচারকের প্রশ্ন, “আদালত কক্ষ কি প্রতিবাদ করার জায়গা? আমি স্পষ্টবাদী। এ ভাবে আপনারা আদালতের কাজে বাধা দিতে পারেন না।” তবু চলতে থাকে সমস্বরে প্রতিবাদ। কুণালও চিৎকার করতে থাকেন। বিচারক কুণালের উদ্দেশে বলেন, “আপনার বক্তব্য তো আমরা শুনছি। আপনি বলছেন, আপনার আইনজীবীও বলছেন। তা সত্ত্বেও আপনি চিৎকার করছেন কেন? চুপ করুন।”


সারদা কমিশন থেকে বেরিয়ে আসছেন মনোরঞ্জনা সিংহ। বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

কেয়াদেবী-সহ অন্যেরা তখনও প্রতিবাদ করে যাচ্ছিলেন। বিচারক ফের তাঁকে প্রশ্ন করেন, “আপনি কার হয়ে প্রতিবাদ করছেন? এখানে, এই মামলায় আপনার অবস্থান কী?” এ কথা শুনে চুপ করে যান তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। বিচারক আবার বলেন, “আদালত কক্ষে কিছু বলতে গেলে ওকালতনামা দিয়ে বলতে হয়। আপনাদের বক্তব্য আপনারা ওকালতনামা দিয়ে জানান।” এ দিন আদালতে কুণাল, সুদীপ্ত, দেবযানী এবং সিবিআইয়ের হয়ে যত আইনজীবী ছিলেন, তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের সংখ্যা ছিল তার চেয়ে বেশি। তাঁদের সঙ্গে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে এক সময় কুণালকে বলতে শোনা যায়, “আমি এখনও এমপি (সাংসদ)। আমাকে তৃণমূল দেখাচ্ছেন? আপনারা যে স্কুলে ক্লাস টু-এ পড়েন, আমি সেই স্কুলেরই প্রিন্সিপাল ছিলাম।”

পরে আদালত কক্ষের বাইরে কেয়াদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নামে বললে আমরা মেনে নেব না। তথ্য-প্রমাণ দিতে হবে। আমরা সরকারি দল করি। সরকারের বদনাম সহ্য করব না।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, “কুণাল তো বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। কোথাও তো মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেননি?” কেয়াদেবীর জবাব, “তাতে কী হল! শুনলেন না আমাদের নেতা মদন মিত্রের নামও করেছে।”

এ দিন কুণাল-সুদীপ্ত-দেবযানীর জামিনের আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রভাবশালী বলে তাঁদের মক্কেলদের জামিনের বিরোধিতা করছে সিবিআই। বলা হচ্ছে, ছাড়া পেলে নথি নষ্ট করে দেবেন তাঁরা। অথচ গত ৫০ দিন ধরে মক্কেলদের কাছ থেকে কোনও নথিই পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া প্রভাবশালী হলে তাঁরা কি জেলে বসে থাকতেন? ওঁদের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালীরা বাইরে রয়েছেন। তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেন সিবিআই। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানির শেষে বিচারক তিন

জনকেই জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর, পঞ্চমীর দিন আবার আদালতে তোলা হবে তিন জনকে।

এ দিন আদালত থেকে বেরিয়ে জেলে যাওয়ার পথে কুণাল যাতে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে না পারেন, তার জন্য কড়া পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কুণাল যাতে ভ্যানের ভিতরে ঢুকে চিৎকার করে কিছু না বলতে পারেন, তাঁর কণ্ঠস্বর যাতে চাপা পড়ে যায় তার জন্য লকআপ থেকে আদালত চত্বর পর্যন্ত কয়েক জন পুলিশকর্মী নাগাড়ে চিৎকার করতে থাকেন। পুলিশের ভ্যানের গায়ে নিজেরাই চাপড় মারতে থাকেন।

saradha scam kunal ghosh madan mitra CBI investigation state news online state news court kunal accused madan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy