Advertisement
E-Paper

উনি পিজিতে, আমি জেলে কেন: কুণাল

বিধানসভায় বিরোধী শিবিরের সদস্যেরা প্রশ্নটা তুলেছিলেন বুধবার। রাজ্যসভার সদস্য কুণাল ঘোষ প্রায় একই সুরে বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তুললেন ব্যাঙ্কশাল আদালতে। প্রশ্নটা হল, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারির পর থেকে রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র বেশির ভাগ সময়টাই হাসপাতালে কাটাচ্ছেন কী ভাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৫৫
ব্যাঙ্কশাল আদালতে কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ব্যাঙ্কশাল আদালতে কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বিধানসভায় বিরোধী শিবিরের সদস্যেরা প্রশ্নটা তুলেছিলেন বুধবার। রাজ্যসভার সদস্য কুণাল ঘোষ প্রায় একই সুরে বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তুললেন ব্যাঙ্কশাল আদালতে। প্রশ্নটা হল, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারির পর থেকে রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র বেশির ভাগ সময়টাই হাসপাতালে কাটাচ্ছেন কী ভাবে?

কুণাল অবশ্য এ দিন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের নাম করেননি। ‘এক জন’ বলে উল্লেখ করেন মদনবাবুকে। সারদা মামলায় অভিযুক্ত, তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণালের বক্তব্য, ‘এক জন’ জেল হেফাজতে থেকেও জেলে নেই। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে থেকে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ পাচ্ছেন। সকলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। ‘‘আর আমি দিনের পর দিন জেলে আছি। এই পরিস্থিতিতে আদালতের উপরে ভরসা করা ছাড়া আমার আর কী-ই বা করার আছে,’’ বলেন কুণাল।

বিরোধী শিবিরের বিধায়কেরা বুধবার বিধানসভায় কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফিকে প্রশ্ন করেছিলেন, মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতা হওয়ার কারণেই কি দিনের পর দিন জেলে না-থেকে হাসপাতালে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন মদনবাবু? তার উত্তরে কারামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের কী করার আছে! হাসপাতাল ছাড়লেই আমরা মন্ত্রীকে জেলে রাখতে পারি।’’

প্রেসিডেন্সি জেলে থাকাকালীন কুণাল আত্মহত্যার যে-চেষ্টা করেছিলেন, সেটা ‘নাটক’ বলে ওই দিন বিধানসভায় মন্তব্য করেন কারামন্ত্রী। কুণাল এ দিন বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে জানান, তিনি মন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করছেন। কেননা সেটা পুরোপুরি অসত্য।

আইনজীবীরা এ দিন আলিপুর আদালতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন। কৌঁসুলিরা অনুপস্থিত থাকায় নিজের জামিনের আবেদনের পক্ষে তিনি নিজেই সওয়াল করতে চান বলে বিচারককে জানান কুণাল। বিচারকের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘মন্দির (আদালত) খোলা রয়েছে। পুরোহিত (আইনজীবী) গরহাজির। কিন্তু ঈশ্বর (বিচারক) কি ভক্তের প্রার্থনা শুনতে পারেন না?’’ এ কথা শুনে কুণালকে সওয়াল করার অনুমতি দেন বিচারক অরবিন্দ মিশ্র।

সওয়ালের সুযোগ পেয়ে মদন মিত্র থেকে শুরু করে কানিমোজি, জয়ললিতা পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রসঙ্গে চলে যান কুণাল। তিনি জানান, সারদা মামলায় অন্য তিন অভিযুক্ত আলিপুর জেলা আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। অথচ ৫৫০ দিন জেল-হাজতে থাকার পরে আদালত যদি তাঁকে জামিন না-দেয়, তা হলে তাঁর কিছু বলার নেই। সাংসদ হিসেবে কাজ করার জন্যও যে তাঁর জামিন পাওয়া দরকার, তা ব্যাখ্যা করেন কুণাল। তাঁর
বক্তব্য, তৃণমূল তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করলেও তিনি এক জন সাংসদ। বিচারকের উদ্দেশে কুণাল বলেন, ‘‘আমার সাংসদ কোটার আড়াই কোটি টাকা কলকাতা পুরসভার তহবিলে পড়ে আছে। স্কুলে কম্পিউটার, রাস্তার আলো ইত্যাদি খাতে সেই টাকা বরাদ্দ করব বলে পরিকল্পনা ছিল। জেলে থাকায় তা করতে পারছি না। দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিকে গত সপ্তাহে এ কথা জানিয়েছি।’’

এর পরেই নিজের জামিনের পক্ষে যুক্তি সাজাতে গিয়ে কুণাল চলে যান কানিমোজি আর জয়ললিতার প্রসঙ্গে। তাঁর প্রশ্ন, টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে কানিমোজি কিংবা আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ রোজগারে অভিযুক্ত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা যদি আদালত থেকে জামিন পেতে পারেন, তা হলে তিনি জামিন পাব না কেন? সারদা এবং টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির তুলনা টেনে কানিমোজি এবং নিজের অবস্থানগত পার্থক্যের কথাও তোলেন কুণাল। কুণাল বলেন, ‘‘টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি যদি সারদা কাণ্ডের চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি হয় এবং সেই মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্তকে আদালত যদি জামিন দেয়, তা হলে আমার ক্ষেত্রে একই দেশের আদালত অন্য আচরণ করবে কেন? আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত বলেই কি জামিন পাব না?’’

আদালত অবশ্য সারদা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কুণালের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেনি। সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলায় অভিযুক্ত কুণালকে ফের ১৪ দিনের জেল-হাজতে পাঠান বিচারক।

সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলায় অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনও এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন। দেবযানী বিচারককে জানান, তিনি নানা রোগে ভুগছেন। প্রতিদিন তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। কয়েক দিন আগে বসন্ত রোগ থেকে সেরে উঠে তিনি যারপরনাই ক্লান্ত। অথচ হয় কাঁথি, নয়তো সিউড়ি কিংবা রাজ্যের অন্য জেলার আদালতে তাঁকে প্রায়ই নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট সারদা কাণ্ডের সব মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে বলা সত্ত্বেও তাঁকে এখনও বিভিন্ন জেলা আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন দেবযানী।

বিচারক এ দিন রাজ্যের কারা দফতরের কর্তা ও দমদম জেলের সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ৩ জুনের মধ্যে দেবযানীর চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে। জানাতে হবে, দেবযানীর জন্য কোনও মেডিক্যাল বোর্ড গ়ড়ার প্রয়োজন আছে কি না।

Kunal Ghosh Madan Mitra hospital chit fund sudipta sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy