Advertisement
E-Paper

মমতার বাড়ি তাক করে কুণালের ‘বোমা’

বোমা তিনি আগেও ফাটিয়েছেন একাধিক। এ বার তিনি বোমা ছুড়লেন সরাসরি ঠিকানা তাক করে। ৩০-বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। সকলেই জানেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাড়ির ঠিকানা এটা। সুদীপ্ত সেন কলকাতা ছেড়ে পালানোর পরে ওই ঠিকানা থেকেই সারদার সংবাদমাধ্যম চালানোর জন্য টাকা গিয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৫
সোমবার বিচার ভবনে দেবযানী মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

সোমবার বিচার ভবনে দেবযানী মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

বোমা তিনি আগেও ফাটিয়েছেন একাধিক। এ বার তিনি বোমা ছুড়লেন সরাসরি ঠিকানা তাক করে। ৩০-বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। সকলেই জানেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাড়ির ঠিকানা এটা। সুদীপ্ত সেন কলকাতা ছেড়ে পালানোর পরে ওই ঠিকানা থেকেই সারদার সংবাদমাধ্যম চালানোর জন্য টাকা গিয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ। যে টাকা গিয়েছিল, সেটাও মুখ্যমন্ত্রীর নয়, কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগে সুদীপ্ত বিপুল টাকা সেখানে রেখে গিয়েছিলেন বলে আদালতে দাবি করেন কুণাল। কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে কার্যত তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বকলমে সারদার সংবাদমাধ্যম চালানোরই অভিযোগ এনেছেন এ দিন।

সারদা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন বন্দি রাজ্যসভার এই সাংসদই ছিলেন সারদার সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ পদাধিকারী। গ্রুপ মিডিয়া সিইও। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলেও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। পরে রাজ্যসভার সাংসদ হন তৃণমূলেরই টিকিটে। এ-হেন কুণাল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় মমতা ও তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। সুদীপ্ত সেন যে প্রতি বারই তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, এমনটা নয়। এ দিন কিন্তু সুদীপ্ত মুখ খুলেছেন।

রোজ আদালতে চুপ করে বসে থাকতেই দেখা যায় সুদীপ্তকে। এ দিন নগদ টাকা রেখে কলকাতা ছেড়ে পালানোর প্রসঙ্গ উঠতেই সুদীপ্ত বলেন, ‘‘আমার কাছে কোনও টাকা ছিল না। থাকলে সারদা বন্ধ হতো না।’’ নিজের বক্তব্য প্রমাণে সিবিআইয়ের হেফাজতে গিয়ে ব্রেন-ম্যাপিং ও পলিগ্রাফ পরীক্ষা করাতে, এমনকী, কুণালের সঙ্গে মুখোমুখি জেরায় বসতেও তিনি ইচ্ছুক বলে জানান। সিবিআই আইনজীবীদের একটি অংশ বলছেন, সুদীপ্ত যে টাকা রেখে যাননি, এমন কথাও কিন্তু বলেননি পরিষ্কার করে।

কী বলছে মমতা শিবির?

প্রত্যাশিত ও একেবারে চেনা ছকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘কুণাল ঘোষের মানসিক ভারসাম্য নেই। উনি আজ যা বলেন, কাল তার উল্টো করেন।’’ পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, জেলে থাকার ফলে কুণাল গভীর বিষণ্ণতায় ভুগছেন। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যাচার করছেন। ‘‘এ সব কথা ধোপে টিঁকবে না,’’ বলছেন পার্থবাবু।

সারদা কেলেঙ্কারিতে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কুণালের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। গত ২ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে বেরোনোর সময় সারদা কেলেঙ্কারিতে মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারের দাবিও তুলেছিলেন। আর এক বার নগর দায়রা আদালতের বাইরে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও চেয়েছিলেন কুণাল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ আনেননি তিনি। এ দিন নগর দায়রা আদালতে তিনি বলেন, ‘‘সুদীপ্ত কলকাতা ছেড়ে পালানোর সময় এক প্রভাবশালীর বাড়িতে বিপুল পরিমাণে নগদ টাকা রেখে গিয়েছিলেন। সেই টাকা থেকেই তাঁর মিডিয়া ব্যবসা চালানো হয়েছিল।’’

কে সেই প্রভাবশালী?

এজলাসেই কুণাল দাবি করেন, ‘‘সারদার ওই নগদ টাকা রাখা হয়েছিল ৩০-বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকেই সেই টাকা বিলি করা হয়েছিল।’’ এর প্রমাণ সিবিআইয়ের কাছে রয়েছে বলেও আদালতে দাবি করেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি অন্য প্রভাবশালীদেরও বিঁধেছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘আমি জেলে বসে থাকব আর বাকিরা সাধু সেজে ভোটের বাজারে ঘুরে বেড়াবেন। এটা মেনে নিতে পারছি না।’’ তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এই সাংসদ প্রশ্ন তুলেছেন সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও। তাঁর অভিযোগ, তিনি যা বলছেন, তা সিবিআই জানে। প্রমাণও তাদের হাতে আছে। কিন্তু তারা কিছুই করছে না। তার ফলে রোজই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হচ্ছে। কুণালের তাই দাবি, যাঁরা সারদার টাকা নয়ছয় করেছেন তাঁদেরও গ্রেফতার করতে হবে। এ দিন কুণাল বলেন, ‘‘আমি এই অসৎসঙ্গে পড়েছিলাম বলেই প্রায়শ্চিত্ত করছি। তবে বাকি অভিযুক্তদের ছেড়ে শুধু আমার বিচার হবে, তা হতে দেব না।’’ কুণালের এমন অভিযোগ তোলাটা নতুন নয়। তবে সুদীপ্ত এ দিন কেন হঠাৎ কুণালের বিরোধিতায় মুখ খুললেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। আইনজীবীদের একটি অংশ বলছেন, টাকা রেখে পালানোর সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী জড়িয়ে যাচ্ছেন দেখেই মুখ খুলেছেন সুদীপ্ত।

আদালতে এ দিন মূলত কথা বলেন কুণাল। এবং অল্প কিছুটা সুদীপ্ত। সারদা-কর্তা ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা তেমন কিছু বলেননি। এর আগের শুনানির দিন মনোজ নেগেলকে অকারণে হাজির করানো নিয়ে দমদম কেন্দ্রীয় জেলের কর্তৃপক্ষের জবাব তলব করেছিলেন বিচারক। এ দিন এক জেলকর্তা এসে সেই রিপোর্ট দাখিল করেন। বিচারক সুদীপ্ত, কুণাল, দেবযানীকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

কুণাল আদালতে মুখ্যমন্ত্রীর নামে বলছেন, এই কথা রটে যেতেই এজলাসের চারপাশে পুলিশের ভিড় জমে যায়। বিচারক এজলাস ছাড়তেই পুলিশকর্তারা কুণালদের কোর্ট লক-আপে নিয়ে যান। পুলিশ সূত্রের খবর, কোর্ট লক-আপে যেতে যেতে সুদীপ্তর দিকে কিছুটা রুষ্ট দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন কুণাল। আদালতে সুদীপ্ত তাঁর বিরোধিতা করার বিষয়টি তিনি যে ভাল ভাবে নেননি, তা-ও হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন কুণাল। জেলে ফেরার সময়েও পুলিশ তাঁকে ধাক্কা গিয়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করলে এক প্রস্ত কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন এই রাজ্যসভার সাংসদ।

এ দিন আলিপুর আদালতে জামিন খারিজ হয়েছে সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত শিবনারায়ণ দাসের। তিনি নিজে সিলিকন নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক। আগামী ৪ মে পর্যন্ত তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ দিন ইডি অফিসে হাজিরা দেন সারদা কেলেঙ্কারিতে জামিনে মুক্ত প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার।

Kunal Ghosh Saradha issue Sudipta Sen Chit Fund Money Trinamool harish chatterjee street
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy