প্ল্যাটফর্মে গিজগিজ করছে ভিড়। হঠাৎ ‘দুম-দুম’ শব্দ। বোমা ফাটল কি না বোঝার জন্য ঘাড় ঘোরাতেই নজরে এল নির্মীয়মাণ ওভারব্রিজের তলার ওভারহেড তারটি থেকে দাউ দাউ করে আগুন বেরোচ্ছে।
সেই জ্বলন্ত ওভারহেড তার ছিঁড়ে রেললাইনের উপরে পড়লেন এক ব্যক্তি!
নৈহাটি স্টেশন, শনিবার বেলা ১১টা ১৮। খবর পেয়ে চলে আসেন রেল আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীরা। রেল সূত্রের খবর, পরশনাথ রায় নামের ওই ব্যক্তির বাড়ি কাঁচরাপাড়ায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শিয়ালদহ বি আর সিংহ রেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এই ঘটনায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। প্রায় আধ ঘণ্টা ট্রেন চলাচলও বিঘ্নিত হয়।
নির্মীয়মাণ ওভারহেড ব্রিজের নীচে পরশবাবু কী করছিলেন?
রেল সূত্রের খবর, নির্মীয়মাণ ওভারব্রিজটিতে এখন রঙের কাজ চলছে। সেই ব্রিজের নীচ দিয়ে গিয়েছে রেলের ওভারহেড তার, যার মধ্য দিয়ে ২৫ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়। পেশায় ঠিকাশ্রমিক পরশবাবু ওভারহেড তারের কাছেই একটি বাঁশের ভারায় উঠে রঙের কাজ করছিলেন। রেল কর্তাদের ব্যাখ্যা, হাই-ভোল্টেজ ওভারহেড তারের চার পাশে তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি হয়। রং করার সময় পরশবাবু তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। বাঁশের উপর থেকে পড়ার সময় ফের ওভারহেড তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন এবং তাঁর গায়ে আগুন ধরে যায়। ছিঁড়ে যায় তারটিও।
হাসপাতালে আহত পরশনাথ রায়।—নিজস্ব চিত্র।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া বাঁশের ভারা ভেঙে নীচে পড়ে রয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘ওই ঠিকাদার কর্মী রং করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। রেলেরই একাংশ বলছেন, এ ধরনের কাজের সময়ে ওভারহেড তারের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হয়। না হলে যে কোনও সময়ে বিপদ ঘটতে পারে। যেমন এ দিন ঘটেছে। ছিঁড়ে যাওয়া ওভারহেড তারটি মেরামত করতে আসা রেল কর্মীরাও স্বীকার করেছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করেই রঙের কাজ করা উচিত ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এটা জানা সত্ত্বেও কেন বিদ্যুৎ সংযোগ রেখে ওই কাজ করা হচ্ছিল? পূর্ব রেলের মুখপাত্র এর সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে রেলের অনেক কর্তাই জানান, রেলের বিদ্যুৎ মেরামতি বিভাগ থেকে এই নির্দেশ পাঠানো উচিত ছিল।
রেলের একাংশ বলছেন, কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রী ও রেল বোর্ডের শীর্ষকর্তারা বহু বৈঠক করছেন। কিন্তু রেলের নিচু তলার কর্মীদের অভিযোগ, তার পরেও রেলকর্তাদের টনক নড়েনি। পূর্ব রেলওয়ে মেন্স কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পরেশ সরকার বলেন, ‘‘রেলের গাফিলতিতেই এই দুর্ঘটনা। ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’