Advertisement
E-Paper

ধসে সমতল থেকে বিচ্ছিন্ন সিকিম

যত দূর চোখ যায় শুধু সারি সারি পণ্যবাহী ট্রাক, ট্যাঙ্কার। কোনও ট্রাকে গ্যাস সিলিন্ডার, কোনটায় চাল, ডাল, তেল, মশলা। আবার কোনওটায় রোজকার সংসারের নানা সামগ্রী। ট্যাঙ্কারগুলি বোঝাই পেট্রোল, ডিজেলে। চালক আর খালাসি গাড়ির পাশেই বসে থাকছেন।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৭
তিনধারিয়ার কাছে ধসে ভেঙে গিয়েছে হিলকার্ট রোডের একাংশ। শুক্রবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

তিনধারিয়ার কাছে ধসে ভেঙে গিয়েছে হিলকার্ট রোডের একাংশ। শুক্রবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

যত দূর চোখ যায় শুধু সারি সারি পণ্যবাহী ট্রাক, ট্যাঙ্কার। কোনও ট্রাকে গ্যাস সিলিন্ডার, কোনটায় চাল, ডাল, তেল, মশলা। আবার কোনওটায় রোজকার সংসারের নানা সামগ্রী। ট্যাঙ্কারগুলি বোঝাই পেট্রোল, ডিজেলে। চালক আর খালাসি গাড়ির পাশেই বসে থাকছেন। গাড়ি নড়ছে না। ধসে বিধ্বস্ত সিকিম তিন দিন ধরে গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিছু ছোট গাড়ি ঘুরপথে সংকীর্ণ রাস্তা পেশক রোড হয়ে কার্শিয়াং হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছচ্ছে।

গত ২৪ জুন সমতল থেকে সিকিম যাওয়ার প্রধান রাস্তা ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটির শ্বেতীঝোরার কাছে ধস নামে। দু’বার ধস সরিয়ে রাস্তা খোলা হয়েছিল। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সেখানে ফের ধস নামার পরে বুধবার থেকে এই রাস্তা ধরে সিকিমে কোনও বড় গাড়িই যেতে পারছে না। শুক্রবার সিকিম ঢোকার মুখে রংপোতেও ধস নেমেছে। ধস নেমেছে ভোটেবিরেও। ওই রাস্তায় কালীঝোরা, বিরিকদারা, লিকুভির, ৯ মাইল এবং মাঝিটারেও রাস্তা অবস্থা খারাপ।

ধস সরিয়ে এক ফালি জায়গা বার করতে পারলে তা দিয়ে যেতে পারছে কেবল মোটরবাইক। আর তাতেও করেই কোনওক্রমে রসদ ওপারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পণ্যবাহী গাড়ি না যাওয়ায় সঙ্কটে সিকিমের বাসিন্দারা। সরকারি-বেসরকারি বাস চলাচলও বন্ধ। কিছু ছোট গাড়ি কেবল ঘুরপথে সংকীর্ণ রাস্তা পেশক রোড হয়ে কার্শিয়াং হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছচ্ছে।

সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিঙের পরামর্শদাতা (আইন) কে টি গ্যালসেন জানান, সিকিমকে দেশের সঙ্গে জোড়ার এই একটিই রাস্তা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ট্রেন, বিমান পরিষেবা নেই। প্রতি বছর বর্ষায় এই পরিস্থিতি হচ্ছে। রাজ্যের অর্থনীতি, পর্যটন থমকে যাচ্ছে। আমাদের দ্রুত বিকল্প রাস্তার প্রয়োজন।’’ তিনি জানান, গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিষয়টি একাধিকবার চামলিং জানিয়েছেন। আবার জানানো হবে। সিকিম বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার কে টি গ্যালসেন সিকিমের ক্ষমতাসীন দল সিকিম ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিএফ) মুখপাত্রও। তিনি জানান, গত মাসেই নাথুলা হয়ে প্রথম বার কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা শুরু হয়েছে। সেখানে রাস্তার এমন হাল হলে খারাপ বার্তা যাবে।

ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই সকালে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে দেখা করেছেন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সাংসদ বলেন, ‘‘ওই জাতীয় সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’’

সেবক থেকে গ্যাংটক অবধি ওই জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য ৯২ কিলোমিটার। গোটা রাস্তাটিই ধসপ্রবণ। গত ৩৫ বছরে সিকিমে ১৮ বার ভূমিকম্প বড় মাপের ভূমিকম্পও হয়েছে। পাকিয়ং গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর তৈরির কাজ ২০০৯ সালে শুরু হলেও শেষ হয়নি। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উল্টো দিকের পাহাড় ধরে বিকল্প জাতীয় সড়ক তৈরির প্রক্রিয়াও আটকে। বর্তমান জাতীয় সড়কটি কেটে আরও চওড়া করার কাজ অবশ্য চলছিল। সিকিমের দাবি, ডুয়ার্সের বাগরাকোট, লাভা, আলগাড়া, রেণক, মেনলা হয়ে নাথুলা অবধি ১৫০ কিলোমিটার আরও একটি রাস্তা করতে হবে।

সিকিমের পর্যটন উন্নয়ন কমিটি’র (পশ্চিম) সম্পাদক সুশীল তামাঙ্গ এবং ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল জানান, বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন। ফলে দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে।

Sikkim Landslide Darjeeling hill
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy